রিজার্ভ চুরি: নথি ও মতামতের ভিত্তিতে শুনানির দিন ধার্য

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চুরির মামলার নথিপত্র ও বিভিন্ন পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে শুনানির দিনক্ষণ নির্ধারণ করবে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত। এই প্রক্রিয়ায় আদালত মামলার প্রধান আসামি ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) মতামত চাইতে পারে। আরসিবিসি’র মতামত পেলে সেই নথিও আদালত পর্যালোচনা করবে।

বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ৭টায়) নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে রিজার্ভ চুরির বিষয়ে মামলা দায়ের করে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা আইনি প্রতিষ্ঠান কোজেন ও’কোনর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে মামলাটি দায়ের করে।

বিজ্ঞাপন

‘বাংলাদেশ ব্যাংক বনাম রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশন’ শিরোনামে দায়ের করা এ মামলার নথিভুক্তির নাম্বার ১৯-০০৯৮৩। আরসিবিসি ব্যাংকসহ মোট ৬টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তির নাম আছে বলে জানা গেছে। এতে চুরি হওয়া অর্থসহ মামলা পরিচালনার সমুদয় ব্যয় এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করা হয়।

এদিকে নিউইয়র্কের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলা মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রে আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান (ল’ফার্ম) নিয়োগ দিয়েছে আরসিবিসি। যুক্তরাষ্ট্রের ল’ফার্মটির নাম হচ্ছে কুইন ইমানুয়েল। তারা ইতোমধ্যে মামলার নথি তোলার আবেদনও করেছে। নথি পেলেই তারা এর জবাব আদালতে উপস্থাপন করবে।

সূত্র জানায়, আদালতে মামলাটি নথিভুক্ত হাওয়ার পর স্বাভাবিক নিয়মেই কাজ শুরু হয়ে গেছে। আদালতের প্রশাসনিক বিভাগ মামলার একটি সংক্ষিপ্তসার তৈরি করে বিচারক প্যানেলে উপস্থাপন করবে। সেখান থেকে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম নির্ধারণ করা হবে।

রিজার্ভ চুরির অর্থ ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংক থেকে যেসব প্রক্রিয়ায় নগদায়ন করা হয়েছে তাতে যে মানি লন্ডারিং হয়েছে সেটি সে দেশের আদালতেই প্রমাণিত। ফলে আরসিবিসির বিরুদ্ধে এক কোটি ৯১ লাখ ডলার জরিমানা করেছে দেশটির মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সংস্থা এন্টি মানিলন্ডারিং কাউন্সিল।

অপর এক মামলায় গত ১০ জানুয়ারি সে দেশের আদালত আরসিবিসি’র জুপিটার স্ট্রিট শাখার ব্যবস্থাপক মায়া দেগুইতিকে ৩২-৫৬ বছরের জেল ও ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার জরিমানা করেছে। এসব তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়েছে। আদালতের চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ল’ফার্মকে সব ধরনের তথ্যের যোগান দেবে। পরে তারা সেগুলো আদালতে উপস্থাপন করবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান সাংবাদিকদের বলেন, ‘এতদিন আমরা দ্বিপক্ষীয় ও কূটনৈতিক যোগাযোগের মধ্যে রিজার্ভ চুরির অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। এর মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি ডলার ফেরতও এসেছে। আরো কিছু অর্থ আটক করা হয়েছে। এখন আমরা আইনি লড়াইয়ের জন্য মাঠে নামলাম।’

জানা গেছে, আরসিবিসি ফিলিপাইনের স্টক এক্সেচেঞ্জে তালিকাভুক্ত। ফলে এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা হওয়ায় নিয়ম অনুযায়ী সে তথ্য গত শুক্রবার ব্যাংক থেকে স্টক এক্সচেঞ্জকে জানানো হয়েছে। কেননা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বা পক্ষে কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য থাকলে সেগুলো বিনিয়োগকারীদের জানাতে হয়। একই সঙ্গে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ ওয়েবসাইটে বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, নিউইয়র্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি দল এখন ঢাকায় ফিরছেন। রোববার বিকাল ৫টায় তারা ঢাকায় পৌঁছাবে। এরপর তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।

নিউয়র্কের আদালতে মামলা করার বিষয়টি ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, অর্থমন্ত্রী ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে অবহিত করা হয়েছে। কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা এটাই প্রথম, পাশাপাশি মামলাও প্রথম।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) থাকা বাংলাদেশের রিজার্ভের ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেনের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সোসাইটি ফর ওয়ার্ল্ডওয়াইড ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশন (সুইফট) সিস্টেমে ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে এ অর্থ ফিলিপিন্স ও শ্রীলঙ্কার দুটি ব্যাংকে নেওয়া হয়।

পাঁচটি সুইফট বার্তার মাধ্যমে চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে একটি বার্তার ২ কোটি ডলার যায় শ্রীলঙ্কার একটি বাণিজ্যিক ব্যাংকে। ওই ব্যাংক অর্থ ছাড় না করায় ২ দিনের মধ্যে তা ফেরত পায় বাংলাদেশ।

তবে ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট হয়ে জুয়ার টেবিল ঘুরে হাতবদল হয়ে যায়। পরে ওই অর্থের মধ্যে দেড় কোটি ডলার জুয়ার আসর থেকে ফিলিপাইন সরকার জব্দ করে বাংলাদেশকে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু বাকি অর্থ পাওয়া যায়নি।