রুপির দাম কমায় দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব

  • আসিফ শওকত কল্লোল, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতের মুদ্রা-রুপি

ভারতের মুদ্রা-রুপি

ভারতীয় মুদ্রা রুপির মান কমায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন দিল্লীতে নিযুক্ত বাংলাদেশী হাইকমিশনার সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। তার দাবি, রুপির মান কমায় ভারত থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম কমেছে। এছাড়া ভারতে বাংলাদেশ থেকে যে ১০ লাখ পর্যটক বেড়াতে যান তাদের খরচও কমেছে। গত সপ্তাহে এক চিঠিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এবং অর্থ সচিব আব্দুল রউফ তালুকদারকে নিজের এ পর্যবেক্ষণ জানান হাইকমিশনার।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ভারতীয় রুপির দাম কমে যাওয়ায় বাংলাদেশের স্থানীয় শিল্প মালিকরা কম দামে সেখান থেকে কাঁচামাল আমদানি করতে পারছেন। ফলে দেশীয় শিল্পের ওপর বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, ট্রাম্প প্রশাসন চীনের রপ্তানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে। ফলে চীন তার মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে। ফলে জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোও যদি তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন শুরু করে তাহলে তা বাংলাদেশী টাকার ওপর চাপ সৃষ্টি করবে। তবে কোনো দেশের মুদ্রার অবমূল্যায়ন স্থায়ী হয় না। ফলে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানী করে যে মূল্য সুবিধা পায় সেটাও বেশিদিন উপভোগ করতে পারবে না।

প্রসঙ্গত, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে প্রতি বছরই ভারতীয় রুপির মান কমেছে। ১৯৪৭ সালে এক ডলারের মান ছিল ১.৩০ রুপি। কিন্তু অবমূল্যায়ন হতে হতে সেটা এখন দাঁড়িয়েছে ৭৩ রুপিতে।

চিঠিতে হাইকমিশন আরো উল্লেখ করেন, অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা  মুদ্রার অবমূল্যায়ন সমর্থন করেন না। তবে এ অবমূল্যায়ন দেশের বাণিজ্য ঘাটতি যেমন কমাতে পারে তেমনি দেশের অর্থনীতিকে এক অনিশ্চিতার মধ্যে ফেলতে পারে। তবে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দেশে পণ্য উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা বাড়াতে হবে। রুপির অবমূল্যায়নে ভারতের অর্থনীতিতে যেমন বিরুপ প্রভাব পড়েছে, তেমনি টাকার অবমূল্যায়ন আমাদের অর্থনীতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এজন্য ভারতীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন বাংলাদেশ সরকারের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়।

উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশী টাকা ভারতের রুপির চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে। ডলারের বিপরীতে অব্যাহতভাবে পড়ছে রুপির দাম। গত অক্টোবরে রুপির বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ২০ পয়সা। এখন এক ডলার কিনতে ভারতীয়দের খরচ করতে হচ্ছে ৭৩ দশমিক ৪৭ রুপি। শুধু তাই না, ডলারের পাশাপাশি বাংলাদেশি টাকার বিপরীতেও রুপির দাম কমেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ডলারে হয়। এ কারণে রুপির দরপতনে বাংলাদেশের আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এখন এক টাকা ১০ পয়সায় মিলছে এক রুপি। ফলে বাংলাদেশি ১০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে ভারতের ৯০ রুপি।

গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারতে ৬৭ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করে। পক্ষান্তরে ভারত থেকে ৬১৬ কোটি ২২ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ৯০ দশমিক ১৬ শতাংশ ভারত এবং ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ বাংলাদেশ রফতানি করে।