অনলাইন ফুডশপ থেকে রেস্টুরেন্টের উদ্যোক্তা ফ্লোরা

  • ঊর্মি মাহবুব, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জারা’স কিচেনের কর্ণধর ফ্লোরা নাহিদ

জারা’স কিচেনের কর্ণধর ফ্লোরা নাহিদ

ফ্লোরা নাহিদ। একজন মা। একজন গৃহিণী। একজন রেস্টুরেন্ট উদ্যোক্তা। ফেসবুকের জারা ফুড’স  থেকে একটু একটু করে অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন আজকের জারা’স কিচেন।

জারা’স কিচেনে প্রবেশের মুখে সিঁড়িতেই নজরে পড়বে মনোরম আলোকসজ্জা। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে দেওয়ালের বাহারী নকশা ও ঝাড়বাতির। রয়েছে লাইভ মিউজিক এর ব্যবস্থা।

বিজ্ঞাপন

জারা ফুড থেকে জারা কিচেন গড়ে তোলার রাস্তাটা খুব একটা মসৃণ ছিলো না ফ্লোরা নাহিদের। কিন্তু স্বামীর অনুপ্রেরণায় সব বাধা পেরিয়েই নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের হাল ছাড়েননি তিনি। কিভাবে অনলাইন ফুডশপ থেকে রেস্টুরেন্ট তৈরি হলো সেই গল্প বার্তা২৪.কম এর পাঠক ও দর্শকদের সাথে শেয়ার করেন ফ্লোরা নাহিদ।

২০০৩ সালে বিয়ের পর সংসার জীবনে প্রবেশ ফ্লোরার। শিক্ষকতা পেশা বেছে নেওয়ার স্বপ্ন ছিলো ফ্লোরা নাহিদের। নিবন্ধন পরীক্ষায় পাসও করেছিলেন। কিন্তু সন্তান সংসার নিয়ে তা আর হয়ে উঠেনি। বলেন, এক সময় ইচ্ছা ছিলো শিক্ষক হবো। ব্যবসা করবো এমন কোনো চিন্তাই ছিলো না। কিন্তু আমার স্বামী ও শাশুড়ির সহায়তায় ব্যবসাটা দাঁড় করাতে পেরেছি এটাই অনেক বড় পাওয়া।

কেক, পিজা, পেস্ট্রি, বিরিয়ানীসহ খাবারের অর্ডার নেওয়া শুরু করেন তিনি। বাহারী ডিজাইনের কেকগুলো নজরকারে ক্রেতাদের। বাড়তে থাকে ফ্লোরা নাহিদের ক্রেতাদের সংখ্যা। পাশাপাশি বাসায়ই রান্নার প্রশিক্ষনও দিতে থাকেন আগ্রহীদের। ধীরে ধীরে রান্নার প্রশিক্ষন দিয়ে ও অনলাইন ফুড ব্যবসায়ের মাধ্যমে মূলধন সংগ্রহ করেন ফ্লোরা নাহিদ। মিরপুরের সাড়ে এগারতে মনোরম পরিবেশে যাত্রা শুরু হয় জারা’স কিচেনের।

মৃদু লাইটিং, দেওয়ালে বাহারী নকশা সাথে সুস্বাদু খাবারের পাশাপাশি বাড়তি আকর্ষন হিসেবে প্রতি সপ্তাহের বৃহষ্পতিবার ও শুক্রবার লাইভ মিউজিক এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে জারা’র কিচেনে। পাশাপাশি বাচ্চাদের জন্য রাখা হয়েছে কিডস জোন। ফ্লোরা বলেন, আমাদের নগরীতেতো এখন বাচ্চাদের খেলার জায়গা নেই বললেই চলে। আমিও মা হিসেবে এই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। তাই এমন কিছু করার চেষ্টা করেছি যাতে মা-বাবাদের পাশাপাশি বাচ্চারাও জারা’স কিচেনে এসে একটু ভালো সময় কাটাতে পারে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Nov/04/1541326962734.jpg

থাই, চাইনিজ ও ইন্ডিয়ানসহ প্রায় ৬৪ রকমের খাবারের স্বাদ নেওয়া যাবে জারা’স কিচেনে বলে জানান ফ্লোরা নাহিদ। বলেন, জারা’স কিচেনে আমরা কখনোই খাবারের মানের সাথে কোনো ধরনের কম্প্রমাইজ করি না। শেফ নির্বাচন করেছি আমি নিজে। নিজে তাদের রান্নার পরীক্ষা নিয়েছি।

অন্যদিকে শতভাগ হালাল খাবারের নিশ্চয়তা দিচ্ছে জারা’স কিচেন। ফ্লোরা নাহিদ বলেন, আমার রেস্টুরেন্টে হালাল খাবার আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে নিশ্চিত করি। নিজে বাজার করি। মুরগি জবাই করার সময় যাতে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করা হয় তা আমি নিশ্চিত করি।

অন্যদিকে অনলাইন দিয়েই যেহেতু শুরু তাই জারা’স কিচেনেও এই সুবিধা বলবৎ রেখেছেন ফ্লোরা নাহিদ। ছোট ও মাঝারী ধরনের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে কেটারিং সার্ভিস দিয়ে থাকে জারা’স কিচেনে। এ বিষয়ে বলেন, যে কোনো ঘরোয়া অনুষ্ঠানে আমরা ক্যাটারিং সার্ভিস দিয়ে থাকি। এক্ষেত্রে আমাদের অনলাইনে বা ফোন করে একদিন আগে অর্ডার দিলেই হয়। সব ধরনের খাবারের অর্ডার আমরা নিয়ে থাকি। অন্তত ২০জন থেকে ১০০ জনের খাবারের অর্ডার এর কাজ করে থাকি আমরা।

শুধু তাই নয় জন্মদিন, বিয়ে বা কণে দেখার মতো অনুষ্ঠানও করা সম্ভব জারা’স কিচেনে বলে জানিয়েছেন এই নারী উদ্যোক্তা। বলেন, এখন আমাদের রেস্টুরেন্টে ৫০ জন অতিথির অনুষ্ঠানের আয়োজন করা সম্ভব। এ ধরনের অনুষ্ঠানে আমরা গানের আয়োজনও করে থাকি।

তবে জারা’স কিচেন নিয়ে ফ্লোরা’র রয়েছে সুদূর প্রসারী স্বপ্ন। তবে এই ক্ষেত্রে দরকার ঋণ সুবিধা। তিনি বলেন, জারা’স কিচেনকে আমি একটি ব্র্যান্ড এ রূপাান্তরিত করতে চাই। নগরীর সব জায়গায়ই থাকবে জারা’স কিচেনের শাখা এমনটাই আমার স্বপ্ন। এখন যেমন আমার ৫০ জন্য অতিথির পার্টি অর্ডার নিতে পারি তা আমরা দুইশ করতে চাই। কিন্তু এক্ষেত্রে আমার দরকার মূলধন। সরকার নারী উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক কাজ করছেন। নারী উদ্যোক্তাদের যে ব্যাংক ঋণ সুবিধা দিতে বলা হয়েছে তা পেলে একদিন এই জারা’স কিচেন নামের একটি ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারবো।

সব নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া উচিত বলে মনে করেন ফ্লোরা নাহিদ। বলেন, সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে বাধাতো আসবেই। কিন্তু নারীদের উচিত মনোবল শক্ত করে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা।