২৯১ করেও কেন এভাবে হারল বাংলাদেশ?

ক্রিকেট, খেলা

এম. এম. কায়সার | 2023-12-20 19:28:57

শিরোনামের এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর কি?

উত্তর: এই উইকেটে ২৯১ রান হলো মাঝারি স্কোর। তেমন বড় কিছু নয়। সেই রান রক্ষায় যে বোলিং হলো সেটা আরও বড় ভুলে ভরা।

এবার বিস্তারিত ব্যাখ্যায় যাই।

নেলসনের স্যাক্সটন ওভালের উইকেট সবসময় ব্যাটিংবান্ধব। এখানে ম্যাচপ্রতি গড় রানই হলো ২৭৪। সেই হিসেবে বাংলাদেশ এমন পিউর ব্যাটিং উইকেটে যে ২৯১ রান করলো সেটাকে খুব বেশি বলার কোনো উপায় নেই। সুযোগ ছিল এই স্কোরকে ৩৪০ রানে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু সৌম্য সরকারের ১৬৯ ও মুশফিকের ৪৫ রান ছাড়া বাকিদের সঞ্চয় যে দারিদ্র্যসীমারও নিচে! সবচেয়ে বড় ভুল করে এলো বাংলাদেশ ইনিংসের শুরুতেই। ওপেনার এনামুল হক বিজয়, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও লিটন দাস, ম্যাচে এই ত্রয়ীর সম্মিলিত সংগ্রহ ১৪ রান! এমন তক্তা ব্যাটিং উইকেটে তারা তিনজনেই যে শটস খেলে আউট হলেন তার রিপ্লে দেখার পর নিশ্চয়ই আফসোসে কলজে পুড়বে তাদের; আহা কি সুযোগই না হারালাম!

আর সৌম্য সরকার তার রেকর্ডময় সেঞ্চুরির ইনিংসের জন্য নিশ্চয়ই ভাগ্যদেবতাকেও কিছুটা কৃতিত্ব দেবেন। সবমিলিয়ে চারটি ক্যাচ উঠেছিল তার। নিউজিল্যান্ড ফিল্ডাররা সেটা হাতে রাখতে পারেনি। সৌভাগ্যবান সৌম্য। তবে সেই সৌভাগ্যকে কিভাবে সৌন্দর্যময় করতে হয় সেটাই এই ইনিংসে করে দেখিয়েছেন সৌম্য সরকার। ভীষণ একটা চাপ নিয়ে এই ম্যাচে খেলতে নেমেছিলেন। নিজের খেলা সর্বশেষ দুই ম্যাচে দুটো শূন্য তার। ভালোই জানতেন ব্যাট হাতে কিছু একটা করতে না পারলে ক্রমশ ‘ক্রিকেট দুনিয়া’ ছোট হয়ে আসবে তার। নেলসনের সেঞ্চুরির পর সৌম্য অন্তত সেই শঙ্কা দূর করলেন অনেকদিনের জন্য। 

 সৌম্যর সুন্দর সেঞ্চুরির ম্যাচে ব্যাট হাতে যে আর কেউ আলো ছড়াতে পারলেন না! দলের ২৯ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কার মধ্যে সৌম্যর একারই অর্জন ২২ বাউন্ডারি ও দুই ছক্কা। বাংলাদেশের শুরুর পাঁচ ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত সংগ্রহ ১৯৫ রান। যেখানে সৌম্যর একাই রান ১৬৯! আর নিউজিল্যান্ডের শুরুর পাঁচ ব্যাটসম্যানের রানের যোগফল ২৮৪। এই ম্যাচে হার-জিতের সবচেয়ে বড় কারণ ওখানেই। এমন পাটা উইকেটে দলের ‘প্রকৃত’ ব্যাটসম্যানরা যদি রান করতে না পারেন তাহলে সেটাই তো বড় ব্যর্থতা। 

১১, ২৫, ৮ ও ৩৬। সংখ্যাগুলো মনে রাখুন। বাংলাদেশের শুরুর চার ব্যাটিং জুটির সংগ্রহ এটি। এর জবাবে নিউজিল্যান্ড ছিল ৭৬, ১২৮, ৫৬ ও অপরাজিত ৩৬। এই হিসেবেই জানান দিচ্ছে বাংলাদেশের শুরুর ব্যাটিং ছিল একেবারে ভাঙ্গাচোরা। আর নিউজিল্যান্ডের শুরু থেকে শেষ অব্দি ব্যাটিং পুরোদস্তুর শক্তিমান, হী-ম্যান। ৪৯.৫ ওভারের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ২৪. ৫ ওভার থেকে কোনো রানই নিতে পারেননি। ১৪৭টি ডটবল খেলে বাংলাদেশ। অথচ ১৫ ওভার খেলার পরই জানা হয়ে যায় এটি পুরোদস্তুর ব্যাটিং পাটাতন।

২৯১ রান তাড়ায় নামা নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের কোনো সময় মনেই হয়নি এই ম্যাচ আর কেউ জিতবে। ব্যাটিংয়ের পুরোটা সময় জুড়ে একচ্ছত্র আধিপত্য দেখায় তারা। এমন উইকেটের সুবিধা তো এভাবেই আদায় করতে হয়। 

পাঁচ জেনুইন বোলার নিয়ে এই ম্যাচের একাদশ গড়ে বাংলাদেশ। ষষ্ঠ বোলার হিসেবে ৫ ওভার বোলিং করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু নেলসনের এই উইকেটে স্পিনের প্রেসক্রিপশান মোটেও কার্যকর কিছু ছিল না। নিউজিল্যান্ড ৫০ ওভারের মধ্যে স্পিনারদের ব্যবহার করেছে ১৪ ওভার। আদিত্য অশোক ও রাচিন রবীন্দ্রের এই ১৪ ওভারে ১ উইকেট শিকারে রান উঠেছে ৮২। অন্যদিকে বাংলাদেশ এই ম্যাচে তিন স্পিনার ব্যবহার করেছে। মেহেদী হাসান মিরাজ, রিশাদ হোসেন ও নাজমুল হোসেন শান্ত-এই তিনের স্পিনে ২৪. ২ ওভারের স্পিনে খরচ হয়েছে ১৩৭ রান। কোনো উইকেট নেই। আগের ম্যাচে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত পঞ্চম বোলার হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন সৌম্য সরকারকে। আর এই ম্যাচে তাকে এক ওভারের জন্যও ডাকলেন না!

- কেন?

১৬৯ রান করে কি ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন সৌম্য? যে তাকে বোলিংয়ে এবার কোনো সুযোগই দিলেন না অধিনায়ক। অথচ এত দুর্দান্ত সেঞ্চুরির পর এই ম্যাচে ফিল্ডিংয়ে সৌম্যর আত্মবিশ্বাস নিশ্চয়ই তুঙ্গে ছিল। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংকে যখন নড়ানোই যাচ্ছিল না তখন অন্তত একবার তো সৌম্যকে ব্যবহার করতেই পারতেন অধিনায়ক?

এই ম্যাচের উইকেট থেকে কোনো দলের বোলাররাই বাড়তি কোনো সহায়তা পায়নি। উইকেটে কোনো মুভমেন্ট ছিল না। বল পড়ে সহজেই ব্যাটে আসছিল। স্ট্রোক খেলার জন্য আদর্শতম উইকেট ছিল এটি। বোলারদের এখানে কিছু করে দেখাতে হলে উইকেট টু উইকেট বল করা ছাড়া দ্বিতীয় তেমন কোনো চয়েজ নেই। নিউজিল্যান্ড সেটা করতে পারলেও বাংলাদেশের বোলাররা এক্ষেত্রে পুরোদুস্তর ব্যর্থ। বেশিরভাগ সময় পেসাররা ভুল লাইনে বল করে গেলেন। নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের রান তোলাটা আরো সহজ হয়ে গেল।

জয়টাও!

২২ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের বড় জয়ের স্কোরকার্ড সেই প্রমাণই দিচ্ছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর