শেষ ওভারে অবিশ্বাস্য কিছু করতে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বল হাতে অধিনায়কোচিত বোলিং পারফরম্যান্সই উপহার দিয়েছিলেন। শিকার করলেন তিন উইকেট। জয়টা ছিল টাইগারদের হাতের মুঠোয়। শেষ বলে পাকিস্তানের দরকার ছিল এক বলে দুই রান। এক রান নিলে ম্যাচ গড়াতো সুপার ওভারে। ডট বল পেলে জয়ে ভাসতো বাংলাদেশ। কিন্তু তখনো নাটকীয়তা বাকি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শেষ বল ছুড়লেও মোহাম্মদ নওয়াজ মোকাবেলা না করে সরে দাঁড়ালেন। বলটা স্টাম্প ভাঙল। কিন্তু আম্পায়াররা আউট দিলেন না। আসলে তখনই জয়টা টাইগারদের হাতছাড়া হয়ে যায়। শেষ বলে চার মেরে জয় ছিনিয়ে নেন নওয়াজ। শেষ বলে রোমাঞ্চ ছড়িয়ে হোয়াইটওয়াশ এড়াতে পারল না টাইগাররা। পাকিস্তানের কাছে হার মানল ৫ উইকেটে।
মাহমুদউল্লাহ বলটা করলেন আম্পায়ারের পিছন থেকে। সেটা দেখেই বল ছোঁড়ার পর নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ক্রিজ থেকে খানিকটা সরে যান মোহাম্মদ নওয়াজ। টাইগার ক্যাপ্টেন এ নিয়ে নওয়াজের কাছে কিছু জিজ্ঞাসাও করেন। উত্তরে মাহমুদউল্লাহকে সন্তুষ্টই মনে হলো। ফলে বলটি হয়ে ডেড। পরে শেষ বলে বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ জিতিয়ে দেন নওয়াজ। অথচ শেষ ওভারে দরকার ছিল ৬ বলে ৮ রান। সরফরাজ আহমেদ, হায়দার আলী ও ইফতিখার আহমেদকে মাহমুদউল্লাহ ফিরিয়ে দিলে জয় থেকে হাত ছোঁয়া দূরেই ছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্য টপকে ১২৭ রান তুলে ফেলে পাকিস্তান। রোমাঞ্চমাখা এ জয়ে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে টাইগারদের হোয়াইটওয়াশ করল বাবর আজমের দল। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ আগেই নিশ্চিত করে রেখেছিল সফরকারীরা।
ম্যাচসেরা হায়দার আলী মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সরফরাজ আহমেদের সঙ্গে দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫১ ও ৩৪ রানের পার্টনারশিপ গড়লে পাকিস্তান জয়ের ভিত পেয়ে যায়। ৩৮ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৪৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ফেরেন হায়দার।
ম্যাচসেরা হায়দার আলী সিরিজ সেরা মোহাম্মদ রিজওয়ান ও সরফরাজ আহমেদের সঙ্গে দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫১ ও ৩৪ রানের পার্টনারশিপ গড়লে পাকিস্তান জয়ের ভিত পেয়ে যায়। ৩৮ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৪৫ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ফেরেন হায়দার। বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে শেষ দিকের স্নায়ুচাপ সামলে বাকি কাজটা সারেন মোহাম্মদ নওয়াজ। তাকে কেবল সঙ্গ দিয়ে যান কুশদিল শাহ।
পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইন-আপে প্রথম আঘাত হানেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। বিদায় করে দেন বাবর আজমকে। পাকিস্তান ক্যাপ্টেন সাজঘরে ফেরার আগে ১৯ রান যোগ করেন দলীয় স্কোরে। ব্যাট হাতে লড়াইটা বেশ ভালোই জমিয়ে তুলেছিলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান। তবে অর্ধ-শতক পূরণ করতে পারেননি। ৪০ রান করে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেছেন পাকিস্তানের এ ওপেনার। ৪৩ বলে ২ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় দারুণ এই ইনিংস খেলেই অভিষিক্ত শহীদুল ইসলামের বলে বোল্ড হন রিজওয়ান।
এক ওভার বল করে মাত্র ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তার সঙ্গে একটি করে উইকেট নেন শহীদুল ইসলাম ও আমিনুল ইসলাম বিপ্লব।
তার আগে ভালো ব্যাটিংয়ের মহড়া দিয়েছে বাংলাদেশ। তবে সংগ্রহ বড় করতে পারেনি। প্রথম টি-টোয়েন্টির স্কোরও স্পর্শ করতে পারেনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১২৪ রান।
অসাধারণ ব্যাটিংয়ে ফিফটি ছোঁয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। লক্ষ্যে অটুট থেকে এগিয়েও যাচ্ছিলেন। কিন্তু অর্ধ-শতক স্পর্শ করতে পারেননি তারকা এ ওপেনার। তিন রানের আক্ষেপ নিয়ে ফিরেছেন নাঈম। ৫০ বলে ৪৭ রানের ইনিংসটি সাজান তিনি ২টি করে চার ও ছক্কায়। ১৩ রান আসে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ব্যাট থেকে।
ব্যাটিং দৃঢ়তা দেখিয়ে যাচ্ছিলেন আফিফ হোসেন। ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখের সঙ্গে ৪৩ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। তবে তিনিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ২০ রান নিয়ে ফিরেন তরুণ এ অলরাউন্ডার। উসমান কাদিরের বলে উইকেটের পিছনে মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ তুলে দেন আফিফ।
দুরন্ত ব্যাটিংয়ের আভাস দিয়ে যাচ্ছিলেন শামীম হোসেন। শুরুতে ব্যাটিং ঝলক দেখালেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেননি তরুণ এ ব্যাটার। খুব বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতেও পারেননি। নিজের ইনিংসটা বাড়িয়ে নিতে পারেননি। ব্যক্তিগত ২২ রানে উসমান কাদিরের বলে ইফতিখার আহমেদের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন শামীম।
তার আগে অভিষেকেই ক্রিকেট প্রেমীদের চমকে দেন শাহনওয়াজ দাহানি। অভিষেক ম্যাচে নিজের প্রথম ওভারেই পান উইকেটের দেখা। ওভারের তৃতীয় বলে পাকিস্তানের তরুণ এ পেসার ফিরিয়ে দেন টাইগার ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তকে। শাহনওয়াজের বলে বোল্ড হওয়ার আগে মাত্র ৫ রান সংগ্রহ করেন তিনি।
পাকিস্তানের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন মোহাম্মদ ওয়াসিম ও উসমান কাদির। একটি করে উইকেট পান শাহনওয়াজ দাহানি ও হারিস রউফ।
মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টিতে টস জিতে নেন ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এনিয়ে টানা তিন টি-টোয়েন্টিতেই টস ভাগ্য সহায় হলো বাংলাদেশের। টস জিতে বরাবরের মতো এ ম্যাচেও ব্যাটিং বেছে নেয় টাইগাররা।
বাংলাদেশের একাদশে তিনটি পরিবর্তন আসে। ওপেনার সাইফ হাসান, পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও শরীফুল ইসলাম এ ম্যাচে খেলেননি। তাদের বদলে দলে জায়গা করে নেন শামীম হোসেন, শহীদুল ইসলাম ও নাসুম আহমেদ। এই সুযোগে অভিষেক হয়েছে আজ শহীদুলের। মুস্তাফিজ খেলেননি পেশীতে টান লাগায়। আর শরীফুল দর্শক হয়েছিলেন কুঁচকির চোট নিয়ে। আর প্রথম টেস্টের প্রস্তুতির জন্য চট্টগ্রামে চলমান অনুশীলন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে সাইফকে।
সিরিজ আগেই নিশ্চিত হওয়ায় এ ম্যাচে পাকিস্তান একাদশে চারটি বদল আনে। দল থেকে ছিটকে যান ফখর জামান, শোয়েব মালিক, শাদাব খান ও শাহীন শাহ আফ্রিদি। তার বদলে দলে জায়গা করে নেন তরুণ পেসার শাহনওয়াজ দাহানি, সরফরাজ আহমেদ, ইফতিখার আহমেদ ও উসমান কাদির। আজ শাহনওয়াজের অভিষেক হয়েছে।
বাংলাদেশ একাদশ: মোহাম্মদ নাঈম, শামীম হোসেন, নাজমুল হোসেন শান্ত, আফিফ হোসেন, মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), নুরুল হাসান সোহান (উইকেটরক্ষক), মেহেদী হাসান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, শহীদুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও নাসুম আহমেদ।
পাকিস্তান একাদশ: বাবর আজম (অধিনায়ক), মোহাম্মদ রিজওয়ান (উইকেটরক্ষক), হায়দার আলী, সরফরাজ আহমেদ, খুশদিল শাহ, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ নওয়াজ, মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র, উসমান কাদির, হারিস রউফ ও শাহনওয়াজ দাহানি।