বিশ্বকাপ মিশনের শেষটা জয়ে রাঙাতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। লক্ষ্যটা ভালো হলেও দলের পারফরম্যান্সটা ভালো হলো না। ভরাডুবির বিশ্বকাপটা শেষ হলো লজ্জাজনক পারফরম্যান্সে। বিশ্বকাপের আগে টানা তিন টি-টোয়েন্টি সিরিজ জেতা বাংলাদেশ কিনা ৮ উইকেটে উড়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে কোনোমতে ৮৪ রান তুলেছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। জঘন্য বাজে ব্যাটিংয়ে এ ম্যাচে সেই স্কোরটাও স্পর্শ করতে পারল না দেশের ক্রিকেটাররা।
ম্যাচসেরা অ্যাডাম জাম্পার স্পিন জাদুতে শুরুতে টাইগারদের ৭৩ রানে আটকে দেয় অস্ট্রেলিয়া। পরে দাপুটে ব্যাটিংয়ে বাকি কাজটা সারেন ব্যাটসম্যানরা। মাত্র ৬.২ ওভারেই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্য টপকে ৭৮ রান তুলে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় অস্ট্রেলিয়া। দুরন্ত এ জয়ে সেমি-ফাইনালের স্বপ্ন জিইয়ে রাখল অস্ট্রেলিয়া। আর বাংলাদেশ হারল সুপার টুয়েলভের পাঁচ সবগুলোই। ফলে খালি হাতেই দেশে ফিরতে হচ্ছে টাইগারদের।
অজিদের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ৪০ রানের ইনিংস খেলেন অ্যারোন ফিঞ্চ। ২০ বলের মারকুটে ইনিংস সাজান তিনি ২ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায়। ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ফেরেন ১৮ রান। ১৬ রানে অপরাজিত থেকে যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
বাংলাদেশ উইকেট ফেলতে পেরেছিল মাত্র দুটি। তাসকিন আহমেদ ৩৬ রান খরচ করে শিকার করেন এক উইকেট। ৯ রান দিয়ে বাকি উইকেট নেন শরিফুল।
লক্ষ্যটা ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানোর। রানের চাকা সচল করা। কিন্তু হলো ঠিক তার উল্টো। ব্যাট হাতে আরও বেশি ছন্নছাড়া বাংলাদেশ। এলোমেলো ব্যাটিংয়ে অল্পতেই ইনিংসের অভিযানের শেষ হয়ে যায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। অস্ট্রেলিয়ার আগুনে বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পা একাই শিকার করেন ৫ উইকেট। তার স্পিন বিষে নীল হয়ে মাত্র ৭৩ রানেই গুটিয়ে যায় টাইগাররা।
দলের বিপদ কাটিয়ে উঠার স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন শামীম হোসেন। কিন্তু আশা দেখিয়ে তিনিও পারেননি বড় ইনিংস গড়তে। ১৯ রান করে অ্যাডাম জাম্পার বলে ক্যাচ তুলে দেন তরুণ এ মারকুটে ব্যাটসম্যান। তার সঙ্গে শূন্য রানে ফিরলেন মেহেদী হাসান। ব্যাট হাতে লড়াই করে ড্রেসিং রুমে ফিরে যান ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহ (১৬)।
ব্যাটিং ধসটা সামাল দেওয়ার আভাস দিয়েছিলেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখও। দেখিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যাটিং দৃঢ়তা। কিন্তু তিনিও বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি। ১৭ রান করে জশ হ্যাজলউডের শিকার হন নাঈম। তার সঙ্গে সাজঘরের পথ ধরেন আফিফ হোসেনও।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটা হয়েছে যাচ্ছে তাই বাজে। ব্যাটিং বিপর্যয় সামাল দিতে না পেরে বিপদে পড়ে যায় টাইগাররা। প্রথম ওভারের তৃতীয় বলেই টাইগারদের ব্যাটিং লাইন-আপে আঘাত হানেন মিচেল স্টার্ক। এ অজি পেসার শূন্য রানে ফিরিয়ে দিয়েছেন লিটন দাসকে। তারপর সৌম্য সরকারকে (৫) আউট করেন জশ হ্যাজলউড। মুশফিকুর রহিমকে (১) সাজঘরের পথ দেখিয়ে দেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল।
চার ওভারে ১৯ রান খরচায় ৫ উইকেট শিকার করেন অ্যাডাম জাম্পা। দুটি করে উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক ও জশ হ্যাজলউড।
তার আগে টস ভাগ্যটা সহায় হয়নি বাংলাদেশের। টস জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। ক্যাপ্টেন অ্যারোন ফিঞ্চ টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেন। যে কারণে শুরুতে ব্যাট হাতে মাঠে নামে বাংলাদেশ।
একাদশে একটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে টাইগাররা। বাংলাদেশের একাদশ থেকে ছিটকে যান স্পিনার নাসুম আহমেদ। তার বদলে দলে জায়গা করে নেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। কিন্তু দেশের ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সে কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফুটে উঠে কোচ রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যদের ব্যাটিং দৈন্য।
বাংলাদেশ একাদশ: মোহাম্মদ নাঈম শেখ, লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ (অধিনায়ক), আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন, শেখ মেহেদি হাসান, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান।
অস্ট্রেলিয়া একাদশ: ডেভিড ওয়ার্নার, অ্যারন ফিঞ্চ (অধিনায়ক), মিচেল মার্শ, স্টিভেন স্মিথ, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিস, ম্যাথু ওয়েড (উইকেটরক্ষক), প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক ও অ্যাডাম জাম্পা।