রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছে বিএনপি। একইসঙ্গে ভোট জালিয়াতি ঠেকাতে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতেও নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছে দলটি। তবে দলটির দাবি নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
সোমবার (২৩ জুলাই) নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিএনপি‘র চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করেন। পরে বৈঠক নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে পৃথকভাবে কথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান ও নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। তাদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে।
তিনি বলেন, আমরা খুলনা ও গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে দেখতে চাই না। তিন সিটি নির্বাচনের বিষয়ে ছয়টি সুনির্দিষ্ট লিখিত দাবি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে দিয়েছি। খুলনা ও গাজীপুরের মতো অনিয়মের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে বিষয়ে ইসির সঙ্গে আলোচনা করেছি।
মঈন খান বলেন, বিভিন্ন কারণে নির্বাচন কমিশনের প্রতি মানুষের অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এখন আশা, তারা ভালো নির্বাচন দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জনের চেষ্টা করবেন।
সরকার নতুন নতুন পদ্ধতিতে নির্বাচনে কারচুপি করছে- এমন অভিযোগ এনে বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, আগামী ৩০ জুলাই তিন সিটি নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের বেছে বেছে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে পারিবারিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনাসহ আওয়ামী ঘরানার লোক দেখে দেখে দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমরা এগুলো বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।
মঈন খান বলেন, তিন সিটিতে গণহারে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে পুলিশ। যাদের বিরুদ্ধে মামলা ও কোনো ধরনের অভিযোগ নেই, তাদেরও খুঁজে বের করে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এ ধরনের একটি তালিকা ইসির কাছে দিয়েছি আমরা।
দেশে গণতন্ত্রের কোনো নমুনাও তিন সিটি নির্বাচনে প্রতিফলিত হচ্ছে না বলে উল্লেখ করেছেন মঈন খান। তিনি বলেন, আমরা এখনও নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা হারাইনি। তারা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বটুকু সঠিকভাবে পালন করবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।
এদিকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহাদাত হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট এই তিন সিটি নির্বাচনে যে কোন অনিয়ম ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে যাবে নির্বাচন কমিশন।
তিনি বলেন, কোন দল জালিয়াতির চেষ্টা করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না,সুষ্ঠ নির্বাচনের জন্য ইসি প্রস্তুত।
শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ এখন পর্যন্ত ভালো আছে। পরিবেশ ভালো রাখার জন্য কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে প্রশাসনকে। আমরা সিটি গুলোর পুলিশ কমিশনার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রাখছি। আইন -শৃঙ্খলা কোন ক্রটি হতে দেওয়া যাবে না। আপনারা জানেন রাজশাহীর একটি ঘটনা ছাড়া এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি।
বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারের বিষয়ে শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, বিএনপি তাদের নেতা কমীদের একটি তালিকা দিয়েছে। সেটা খতিয়ে দেখা হবে, যে কাউকে বিনা কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে কিনা। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেফতার না করার নির্দেশনা দিয়েছি।
সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে কিনা প্রমন প্রশ্নে- শাহাদাত হোসেন বলেন, সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। তবে তিন সিটিতে কিছু কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করা হবে। এর অগে সিসি ক্যামেরা গাজীপুরেও ব্যবহার করা হয়েছিল।
বৈঠকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, কমিশনার কবিতা খানম ও কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। অন্যদিকে বিএনপির পক্ষে প্রতিনিধি দলে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান কামাল ইবনে ইউসুফ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান খালেদ প্রিন্স ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান।