প্রশ্নের মুখে জাপার চেইন অব কমান্ড

জাতীয় পার্টি, রাজনীতি

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-23 03:35:02

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেওয়ায় ফেঁসে যেতে পারেন ফিরোজ রশীদ ও হাসিবুল ইসলাম জয়। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি পার্টির চেয়ারম্যানের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেছেন, সম্প্রতি মহাসচিব যে বক্তব্য দিয়েছেন শুধু নুর হোসেন ইস্যুতে আংশিক বাদ দিলে সবটাই পার্টির নেতাকর্মীদের মনে কথা। এমনকি আপামর জনগণের মনের কথাও। সেদিনের সেই বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রাঙ্গা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার একাধিক সিনিয়র নেতা মন্তব্য করেছেন, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও যুগ্ম মহাসচিব হাসিবুল ইসলাম জয়। কাজী ফিরোজ রশীদ সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে নুর হোসেনের খুনের দায় পুরো চাপিয়ে দিয়েছেন প্রয়াত এরশাদের উপর। এতে নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফুঁসছেন। তারা কাজী ফিরোজ রশীদকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন। রংপুরসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় বিক্ষোভ হয়েছে।

তারা দাবি করেছেন, কাজী ফিরোজ রশীদ সব সময় ছিলেন সুযোগ সন্ধানী। তার অতীত রেকর্ড এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের পূর্বে বিভিন্ন টিভি টকশো দেখলেই আন্দাজ করা যাবে। তখন তার অবস্থান ছিলো পুরোপুরি বিএনপি মুখী। আরও কিছুটা যদি পেছনে ফেরা যায় সেখানে কিন্তু তার অবস্থান ছিলো বিএনপি-জামাত মুখী। নিজেকে সাবেক ছাত্রলীগার দাবি করলেও এরশাদ যখন চারদলীয় জোট ত্যাগ করেন তখন নাজিউর রহমান মঞ্জুর সঙ্গে জাতীয় পার্টি ভেঙে সেখানেই থেকে যান।

নেতাকর্মীরা বলেছেন, ফিরোজ রশীদ এখন বড় আওয়ামী লীগার সাজার চেষ্টা করছেন নিজের আখেরের ধান্দায়। এ জন্য মহাসচিবের বিরুদ্ধে উল্টা-পাল্টা বক্তব্য দিয়েছেন। অন্যদিকে যুগ্ম মহাসচিব জয়ও একই কায়দায় বিভিন্ন মিডিয়ায় মসিউর রহমান রাঙ্গাকে নিয়ে নানা রকম বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এতে পার্টির মধ্যে তিক্ততা বাড়ছে। এই তিক্ততা এখনই থামানো না গেলে সংঘর্ষে রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

এ ঘটনায় পার্টির চেয়ারম্যানের নীরবতার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, মহাসচিবের বিরুদ্ধে এভাবে বক্তব্য দেওয়ায় চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ছে। চেয়ারম্যানের নীরবতা অনেকে সন্দেহের চোখে দেখছে। কেউ কেউ বলাবলি করছেন চেয়ারম্যানেরও ইন্ধন থাকতে পারে। এমন আলোচনা চেয়ারম্যান মহাসচিবের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করতে পারে। চেইন অব কমান্ড রক্ষার জন্য এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

মহাসচিবের বক্তব্যের বিষয়ে আপত্তি থাকলে দল তার বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। কোনো নেতা এভাবে মহাসচিবের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বক্তব্য রাখতে পারে না। এতে দলই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতের জন্য বিষয়টি নেতিবাচক উদাহরণ হয়ে থাকতে পারে। অন্যরাও এই পথে পা বাড়াতে পারেন।

এই ঘটনার পূর্বে রংপুর-৩ আসনে উপ-নির্বাচন নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়েছে জাপার চেইন অব কমান্ড। সেখানে বেশকিছু সিনিয়র নেতা প্রকাশ্য বিদ্রোহ ঘোষণা করে। মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা থেকে বিরত থাকে। সেখানে কারোরই বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য হাসিবুল ইসলাম জয়কে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কাজী ফিরোজ রশীদ ও জয়ের বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মসিউর রহমান রাঙ্গা বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম বলেন, আমি পার্টির চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি, তিনি ব্যবস্থা নেবেন। এরপরও যদি তারা আচরণ পরিবর্তন না করেন তাহলে সৃষ্ট পরিস্থিতির জন্য তারাই দায়ী থাকবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর