সপ্তাহ দুই বাদেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সামনে আরও একটি ঈদ। দুর্নীতির একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দী হন তিনি। পরপর দু’টি ঈদ তার কারাগারে কেটেছে। জিয়া অরফানেজ, চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতিসহ দু’টি মানহানি মামলায় জামিন না হওয়ায় ঈদের আগে মুক্তি মিলছে না খালেদা জিয়ার।
সামনে আরও একটি ঈদ। এই ঈদে হাসপাতাল না কারাগারে থাকবেন, তা নিয়ে দ্বিধায় দলীয় নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা বলছেন, আইনানুগভাবে ঈদের আগে জামিন পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
দলীয় সূত্র বলছে, চিকিৎসার জন্য বর্তমানে হাসপাতালে থাকলেও খালেদা জিয়ার এবারের ঈদ কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে হতে পারে। ইতোমধ্যে মামলায় কার্যক্রম কেরানীগঞ্জে অবস্থিত কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জের কারাগারে নেওয়া হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই বিএনপির নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি নেই। যদিও গুঞ্জন ছিল, দলের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলতে পারে। পর্দার আড়ালে সরকারের পদস্থদের সঙ্গে বৈঠকেরও কথা ভেসেছে বাতাসে। সেই আশা থেকে সংসদ সদস্যরা শপথ নিলেও সে প্রত্যাশা অনেকটা ফিকে হয়ে এসেছে। দলীয় প্রার্থীদের শপথ নেত্রীর মুক্তির ব্যাপারে কোনো ভূমিকা রাখেনি।
আইনজীবীরা বলছেন, কোর্টের কার্যক্রম আর মাত্র তিনদিন আছে। ঈদের আগে মুক্তির কোনো সম্ভাবনা নেই। তাছাড়া খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে আটক করে রাখা হয়েছে। সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া তিনি মুক্ত হতে পারবেন না।
গত ১ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি সেখানেই আছেন।
সম্প্রতি, নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে বিশেষ জজ আদালত ৯ এর বিচারাধীন মামলার কার্যক্রম নাজিমুদ্দিন রোড থেকে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করে প্রজ্ঞাপণ জারি করে আইন ও বিচার বিভাগ। খালেদা জিয়াকেও হাসপাতাল থেকে কেরানীগঞ্জের কারাগারে নেওয়ার বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বক্তব্য আসতে থাকে।
এতেই উদ্বিগ্ন বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সম্পন্ন হয়নি, তিনি এখনও বেশ অসুস্থ। অসুস্থ দেশনেত্রীকে হাসপাতাল থেকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেওয়ার চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে।’
গত শনিবার (১৮ মে) সংবাদ সম্মেলন করে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ার কোনো সাজাই চূড়ান্তভাবে নিস্পত্তি হয় নাই। এমতাবস্থায় জামিন না দিয়ে তাকে কারাগারে রাখা সম্পূর্ণরূপে সংবিধান ও মানবাধিকার পরিপন্থী।’
দলের প্রধান খালেদা জিয়া দীর্ঘ ১৬ মাস কারাবন্দী থাকলেও তাকে মুক্ত করতে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি বিএনপি। কূটনৈতিক, আইনি কিংবা রাজনৈতিক উভয় কৌশলেই দলটি ব্যর্থ হয়েছে, বিশ্লেষকরা এমনটাই মনে করেন। যার ফলে খালেদা জিয়াকে আরও একটি ঈদ কারাগারেই করতে হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সরকার ও বিএনপির মধ্যে কিছুটা দূরত্ব রয়েছে। বিএনপির অভিযোগ সরকার জামিনে বাধা দিচ্ছে। তাহলে যে জায়গায় গেলে সরকার জামিনে বাধা দেবে না সে জায়গায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে এখনও দূরত্ব রয়েছে। আমরা জানি না সে দূরত্বটা কী। সেটা হতে পারে বিএনপি বেশি চাইছে অথবা সরকার বেশি চাইছে। এটা ঠিক যে দুই পক্ষ এখনও সমতলে আসতে পারে নাই। আর বিএনপির সেই শক্তিও নাই যে সরকারকে বাধ্য করবে।’
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট্র দুর্নীতি মামলার সবশেষ অবস্থা নিয়ে খালেদা জিয়ার অন্যতম আইনজীবী ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ মোতাবেক বিচারিক আদালত থেকে এই মামলার মূল নথি এখন পর্যন্ত হাইকোর্ট ডিভিশনের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়নি। মূল নথি পৌঁছানোর পর আমরা জামিন আবেদন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করব।’
বিএনপি চেয়ারপারস খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য জাকির হোসেন ভূইয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘ঈদের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো সুযোগ নেই। মুক্তির সুযোগ নেই আইনানুগভাবে কোর্টের মাধ্যমেই।’