খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কারণেই দল আজ অন্য সময়ের তুলনায় বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী। তাকে বাইরে রেখে প্রহসনের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করে খালেদা জিয়ারর নেতৃত্ব আমরা কিভাবে নির্বাচনে যাবো তা বিএনপি ঠিক করবে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নয়।
‘আপনারা (বিএনপি) এতোই শক্তিশালী মনে করেন তাহলে এখন আর নির্বাচনে আসতে অসুবিধা কিসে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দেয়া বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কি বলছি, যে অসুবিধে। আমরা তো এখনো বলছি, খালেদা জিয়া অনেক বেশি শক্তিশালী, জনপ্রিয়। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের অপর নাম খালেদা জিয়া হয়ে গেছে।
খালেদা জিয়াকে দুর্নীতিবাজ প্রমাণ করতে চেয়েছিল কিন্তু তারা তাতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। খালেদা জিয়াকে আমরা যারা দেশনেত্রী বললাম এখন দেশবাসী তাকে ‘মা’ বলে ডাকে। দেশনেত্রী থেকে খালেদা জিয়া দেশমাতায় পরিণত হয়েছেন। জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আমরা কোনো ফাঁদে পা দেব না, কোনো উস্কানিতে পা দেবো না। আমরা শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায় করবো।
ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার কোনো কারণ নেই, কোনো যুক্তি নেই। একটি স্বৈরাচারি ফ্যাসিস্ট ভোটারবিহীন সরকার তাদের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রেখে একতরফা নির্বাচনের হীন উদ্দেশে মিথ্যা ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলায় রায় দেয়া হয়েছে।
মামলা একটি ওসিলা জানিয়ে তিনি বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ করেছে এ মর্মে একটি মিথ্যা মামলা হয়েছে। জাল জালিয়াতি করে কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। যেখানে কারো স্বাক্ষর নেই, ঘষামাজা করে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে। এবং সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই নথির মূল কপি প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে হারিয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে কোনো নথি হারায় নাই। তারা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা বলেছে, এই তহবিলের টাকা তসরুফ হয়েছে, আত্মসাৎ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বললেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন। অথচ আদালতেই প্রমাণ হয়েছে যে এই তহবিলের একটি টাকাও তোলা হয়নি, বরং তা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তা এই আদালতেই প্রমাণিত হয়েছে। তাহলে আমরা কি প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে পারিনা, যে আপনি কিভাবে এই বানোয়াট কথা বলেন। যেখানে একটি টাকাও তছরুফ হয় নাই। তাহলে কিভাবে এই মামলায় সাজা হয়।
ড. মোশাররফ বলেন, এই মামলায় রায় দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী ও তার মন্ত্রীরা বিচারকের হাত পা বেঁধে দিলেন। প্রধানমন্ত্রী বললেন, তিনি (খালেদা) এতিমের টাকা খেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলার পর আর কার কি বলার থাকে। মন্ত্রীরা বলছেন, খালেদা জিয়ার জেল হবে, শাস্তি হবেই। তারা কিভাবে এসব কথা বলেন। আর আদালত কি করলেন, যে মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়েছে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ৫, ২ এর অধীনে। আর বিচারক শর্ট রায়ে দন্ডবিধি ৪০৯ ধারায় ৫ বছরের সশ্রম সাজা দিলেন। এই মামলায় চার্জশিট হলো দুর্নীতি দমন আইন ৫, ২ ধারায়, আর সাজা হলো দণ্ডবিধি ৪০৯ ধারায়। কেন? শাস্তি তাকে দিতেই হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এতিমের টাকা মেরে খেয়েছেন, বিচারক প্রতিধ্বনি তুলে বলতে পারেন নাই যে এই ফান্ড থেকে খালেদা জিয়া টাকা তুলেন নাই। দেশের কোনো মানুষ বিশ্বাস করে নাই যে এই মামলায় খালেদা জিয়া কোনো সম্পৃক্তা ছিল। অতএব রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এই তথাকথিত মামলায় শাস্তি দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এরপর তাকে কোথায় রাখা হলো, একটা নির্জন কারাগারে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, মন্ত্রী হিসেবে, সংসদ সদস্য হিসেবে তিনি ডিভিশন পাবেন। অথচ কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, ডিভিশন পেতে হলে, আদালত কিংবা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এটা আগে ছিল, ২০০৫ সালে পরিবর্তন হয়েছে। জেলের সুপার সরাসরি ডিভিশন দিতে পারবেন। ২০০৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত তিনবার কারাগারে গেছি। আমাকে জেলগেট থেকে ডিভিশন দিয়েছে। তাহলে কেন খালেদা জিয়াকে দেয়া হবে না। খালেদা জিয়াকে অনৈতিকভাবে তিনদিন সাধারণ কয়েদি হিসেবে রাখার জন্য একদিন এই জেল কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে আবদ্ধ করার পর বিএনপি এই মুহূর্তে নতুন একটি পরিবর্তনের মধ্যে চলে এসেছে। বিএনপি এর আগে যে অবস্থায় ছিল তা থেকে এখন অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ, শক্তিশালী এবং সংঘবদ্ধ। তাকে কারাগারে রাখার পর তিনি আর খালেদা জিয়া নেই। তিনি এখন দেশ মাতায় উপনীত হয়েছেন।
ড. এমাজউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলবো, এই হিংসা প্রতিহিংসার প্রয়োজনীয়তা কি? আপনার পিতা অনেক কথা বলেছেন। অহিংস রাজনীতির কথা বলেছেন। যা তিনি তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখে গেছেন। আপনি অন্যকে পড়তে বলেন, আপনিও পড়ুন উপকৃত হবেন।
স্বাধীনতা ফোরামের সভাপতি আবু নাসের মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ'র সভাপতিত্বে নাগরিক সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, এলডিপি'র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রমুখ।