বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী এ পর্যন্ত সারা বিশ্বে ২০ হাজার ৬৩০ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত (গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ২৪১ জন আক্রান্ত) হয়েছেন। এই ভাইরাসে ষাটোর্ধ্বদের মৃত্যুহার বেশি বলে জানিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, শুধু চীনেই ২০ হাজার ৪৭২ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত (গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ২৩৫ জন আক্রান্ত) হয়েছেন। এদের মধ্যে মারাত্মক অবস্থায় রয়েছেন ২ হাজার ৭৮৮ জন (নতুন ৪৯২ জন), মৃত্যুবরণ করেছেন ৪২৫ জন (গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন)। চীনের বাইরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ২৩টি দেশের ১৫৯ জন (গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন), মৃত্যুবরণ করেছেন একজন।
রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানিয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মূল্যায়নে ঝুঁকির মাত্রা চীনে অতি উচ্চ, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উচ্চ এবং সারা বিশ্বে উচ্চ।
চীনের পরিস্থিতি
চীনের সব রোগীদের মধ্যে ৯৭ শতাংশ হুবেই প্রদেশের। চীনে মোট রোগীর সংখ্যা ৪২৫ জন। রোগীদের মাঝে মৃত্যুহার চীনে ২.১ শতাংশ, হুবেই প্রদেশে ৩.১ শতাংশ। রোগীদের মাঝে ৮০ শতাংশই ৬০ বছরের বেশি বয়সী, ৭৫ শতাংশ রোগী অন্যান্য রোগেও আক্রান্ত, মৃত্যুবরণকারীদের দুই-তৃতীয়াংশ পুরুষ।
আইইডিসিআর-এর পরিচালক প্রফেসর ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আশকোনা কোয়ারান্টাইন কেন্দ্র পরিস্থিতি সর্ম্পকে জানিয়েছেন:
আশকোনা কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রে সাতটি ডরমিটরিতে চীন ফেরত যাত্রীগণ অবস্থান করছেন। চিকিৎসা সেবা ও নার্সিং সেবা কার্যক্রমকে সেনা কর্তৃপক্ষের মেডিকেল সার্ভিস পুরোটাই সহায়তা দিচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সকল ঔষধ সরবরাহ করছে, জরুরি প্রয়োজনে তাৎক্ষণিকভাবে ঔষধ কেনা হচ্ছে। আইইডিসিআর যাত্রীদের স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াও যাত্রীদের রোগতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ করছেন।
সামরিক বাহিনীর মিলিটারি পুলিশ কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। এ উদ্দেশে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ৩০ শয্যার আইসোলেশন শাখা খোলা হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সবার খাবার, শিশু খাদ্য, শিশুদের ডায়াপার ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করছে। ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ্জ্ব অফিস কোয়ারান্টাইন ভবনের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মশক নিধনসহ ক্যাম্পের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা বাংলাদেশ পুলিশ কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রের চারপাশে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চীনে অবস্থিত বাংলাদেশের নাগরিকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।
আশকোনা কোয়ারান্টাইন কেন্দ্রে চীনের উহান থেকে আগত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে বলা হয় জ্বরে আক্রান্ত একজন শিশুকে বাবা-মাসহ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়, তাদের নমুনা সংগ্রহ করে আইইডিসিআর-এ প্রেরণ করা হয়েছে। নিয়মিতভাবে চার বেলা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। প্রতিদিন দু বেলা মাস্ক সরবরাহ করা হয়। সেনা কর্তৃপক্ষ কোয়ারান্টাইন কক্ষগুলো ও চারপাশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার দায়িত্ব পালন করছেন।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তুতি
জেলা পর্যায়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডও ব্যবস্থা প্রস্তুত করা হচ্ছে। সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসোলেশন কক্ষ প্রস্তুত করার কাজ চলছে। কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ২৫০ শয্যার আইসোলেশন কক্ষ স্থাপন করা হচ্ছে। সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রাথমিক পর্যায়ে রোগী গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সংক্রমণ প্রতিরোধে জোর দিচ্ছে। চীনের নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিয়মিতভাবে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করার বিষয়েও খেয়াল রাখা হচ্ছে।
অভিভাবকদের সাক্ষাৎ
চীনের উহান থেকে ফেরত বাংলাদেশি যাত্রীদের অভিভাবকদের যে কোনো জিজ্ঞাসা ও প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য আগামীকাল ৬ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) বিকেল ৩টায় আইইডিসিআর-এ আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এখন থেকে নিয়মিতভাবে এ কার্যক্রম চলবে।
প্রতিরোধে করণীয়
* ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে (অন্তত ২০ সেকেন্ড যাবৎ)।
* অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না।
* ইতিমধ্যে আক্রান্ত এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন।
* কাশি হলে শিষ্টাচার পদ্ধতি মেনে চলুন (হাঁচি/কাশির সময় বাহু/ টিস্যু/ কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখুন)।
* অসুস্থ পশু/পাখির সংস্পর্শ পরিহার করুন।
* মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খাবেন।
* অসুস্থ হলে ঘরে থাকুন, বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকার জন্য মাস্ক ব্যবহার করুন।
* জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত চীন ভ্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন এবং প্রয়োজন ব্যতীত এ সময়ে বাংলাদেশ ভ্রমণে নিরুৎসাহিত করুন।
* অত্যাবশ্যকীয় ভ্রমণে সাবধানতা অবলম্বন করুন।