সুপথে ফেরা জঙ্গিদের আর্থিক সহযোগিতা দিচ্ছে পুলিশ

ঢাকা, জাতীয়

শাহরিয়ার হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-21 06:25:16

তিন বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। নৃশংস সেই হামলার পর জঙ্গিবিরোধী ব্যাপক অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তখন জানা যায়, জেনে-না জেনে অনেকেই এ ফাঁদে পা দিয়েছেন। কিন্তু জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যারা এরই মধ্যে বিভিন্ন মামলায় সাজা ভোগ করেছেন বা করছেন, তাদের প্রতি সমাজের সব মানুষেরই নেতিবাচক ধারণা রয়েছে।

ফলে হতাশায় তাদের জীবন হয়ে উঠছে দুর্বিষহ। তাই আভিযানিক কার্যক্রমের পাশাপাশি নতুন কেউ যাতে এ পথে পা না বাড়ায়, তা নিয়ে নানামুখী কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে বাবা-মা, অভিভাবক ও তাদের তরুণ সন্তানদের সচেতন করতে সামাজিক আন্দোলনকেই অন্যতম অস্ত্র হিসেবে মনে করছে তারা। দেশের সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলে এ ধরনের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বহুলাংশে দমন করা সম্ভব হবে।

এসব কার্যক্রমের মধ্যে বিশেষ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতামূলক কয়েকটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

পাশাপাশি সাজাভোগ শেষে মুক্তি পাওয়া জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে আর্থিক প্রণোদনা ও কাউন্সেলিং করছে সিটিটিসি।

সূত্র বলছে, সিটিটিসির ডির‌্যাডিকালাইজেশন কর্মসূচির আওতায় প্রাথমিকভাবে ৪২ জন জঙ্গিকে তালিকাভুক্ত করা হয়। পরবর্তীকালে নানা বিশ্লেষণ শেষে ওই তালিকা থেকে বেছে নেওয়া হয় ২২ জনকে। এদের মধ্যে ইতোমধ্যে আটজনকে আর্থিক প্রণোদনার পাশাপাশি সমাজের মূলধারায় মানিয়ে নিতে সহায়তা করা হয়েছে। তারা ২০০৫ সালে দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলা মামলায় সাজা ভোগ করেন। এ সহায়তা গ্রহণকারীদের সবাই সাজাভোগ শেষে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, সিটিটিসির একটি কর্মসূচির আওতায় জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে বা পুনর্বাসনে সহায়তা করা হচ্ছে। যেসব জঙ্গি তাদের ভুল বুঝতে পেরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান, তাদেরই আনা হচ্ছে এ কর্মসূচির আওতায়।

সিটিটিসির পরিসংখ্যান বলছে, হলি আর্টিজানে হামলার পর থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৫৩৫ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময়ে ১৯টি অপারেশনে ৬৩ জঙ্গি নিহত হয়েছেন। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও সিটিটিসির অভিযানে এখন পর্যন্ত এক হাজার ২২০ জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছেন। নিহত হয়েছেন ৮৮ জন।

সার্বিক বিষয়ে সিটিটিসির প্রধান ডিআইজি মনিরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ২০০৫ সালে দেশজুড়ে সিরিজ বোমা হামলা মামলায় যারা বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত হন, তাদের অনেকেই সাজাভোগ শেষে কারাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাদের তালিকা করছি। জেলে থাকার সময় তাদের কারও কারও উপলব্ধি হয়েছে যে তারা ভুল পথে ধাবিত হয়েছেন। দীর্ঘদিন সাজাভোগ শেষে বের হওয়ার পর তাদের পুনর্বাসনে আমরা কাজ করছি। ইতোমধ্যে আটজনকে আর্থিক সহায়তা করেছি। বাকিদেরও সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে কাজ করছি। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। সামাজিকভাবেই এটা করতে হবে।

জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় সাজাভোগ শেষে বের হওয়াদের সমাজের মূলধারায় ফেরাতে গণ্যমান্য ব্যক্তির সহায়তা নিচ্ছে সিটিটিসি। এ ছাড়া উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরিতে ৩২ জেলায় বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এ কর্মসূচির আওতায় ছয়টি করে প্রোগ্রাম করা হচ্ছে প্রতিটি জেলায়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর