টাউট-বাটপাররা সৎ ব্যবসায়ীদের খেয়ে ফেলছে: গণপূর্ত মন্ত্রী

ঢাকা, জাতীয়

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-24 11:33:32

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, আবাসন খাতের যারা সৎ ও ভালো ব্যবসায়ী এবং আইন মেনে সততার সঙ্গে ব্যবসা করছেন তাদেরকে খেয়ে ফেলছে টাউট-বাটপার নামক ডেভলপাররা।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের ফেম হলে পাঁচ দিনব্যাপী রিহ্যাব উইন্টার ফেয়ারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

রেজাউল করিম বলেন, বুড়িগঙ্গা পার হয়ে মাওয়া ঘাট পর্যন্ত গেলে বাটপার ডেভলপারদের চমৎকার সাইনবোর্ড দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। তাদের বিজ্ঞাপন দেখে স্বল্পআয়ের মানুষ এবং প্রবাসীরা খুব সহজেই বিশ্বাস করে টাকা দিয়ে দেয়। পড়ে দেখতে পান যেখানে সাইনবোর্ড দেওয়া ছিল সেখানে ওই কোম্পানির কোন জায়গায় নেই। দুই কাঠা জমি ভাড়া করে বিশাল সাইনবোর্ড বসিয়েছেন। যারা সততার সঙ্গে রিহ্যাবের ব্যবসা করেন তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে এই শ্রেণির মানুষগুলো।

দুর্নীতিগ্রস্ত ডেভলপারদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাদের বিরুদ্ধে রিহ্যাবের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া উচিত। অন্তত একটি বিজ্ঞাপন হলেও দেওয়া উচিত যে তাদের থেকে বিরত থাকুন। এরা রিহ্যাবের সদস্য নয়। অথবা এদের সঙ্গে কেউ কোন চুক্তিতে গেলে তা নিজ দায়িত্বে যেতে হবে।

ব্যবসায়ীদের সমস্যার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিছু সমস্যার কথা আপনারা উত্থাপন করেছেন। এরমধ্যে রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত জটিলতার কথা আমি আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেছি। ভেটিং হয়ে গেছে নেক্সট পর্লামেন্ট সেশনে এটা কেবিনেট হয়ে আসবে। অনেক ব্যবসায়ী টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারছেন না, কারণ পিপিআরে এমন নিয়ম উল্লেখ আছে যে, গত বছর কত টাকার কাজ করেছেন বা কি অভিজ্ঞতা আছে এর ভিত্তিতে একটি পয়েন্ট দেওয়া হয় যার জন্য নতুন ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। প্রধানমন্ত্রী এ প্রথা ভেঙে দিবেন বলেছেন। ইতিমধ্যে প্ল্যানিং কমিশন কাজ শুরু করে দিয়েছে।যারা ভালো কাজ করবেন সততার সঙ্গে কাজ করবেন তাদের জন্য যা কিছু করতে হয় আমরা করব। কিন্তু দুর্নীতি এবং অনিয়মের বিন্দুমাত্র স্পর্শ যার মধ্যে থাকবে তারা কোনো সহানুভূতি পাবে না।

স্থাপত্য শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্তদের ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিহ্যাবের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত আছেন তাদেরকে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। ১৬ টি স্তরের মধ্যে বর্তমানে ব্যবসায়ীদের যোগাযোগের জন্য ৪টি স্তর আছে। এই কয়টিতেও কিছু হয়রানির অভিযোগ আছে। তা দূরীকরণে আমরা অটোমেশন পদ্ধতি চালু করেছি তবে তা পূর্ণাঙ্গ হতে কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু এখনো আপনারা কম্পিউটারে বসে স্ক্যান করে প্লান সাবমিট করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিষ্কার নির্দেশনা সেবা সহজীকরণ করতে হবে। অনাহত জটিলতায়, দীর্ঘ প্রক্রিয়ায়, ঝুলে থেকে টেবিলে টেবিলে গিয়ে অনাকাঙ্খিত চাহিদা মেটাবার এই প্রবণতা দূর করার জন্য আমরা কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

সরকারের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, সাধারণ জনসাধারণ যারা এ দেশের মালিক তারা ভোগান্তির শিকার হবেন আর আমরা যারা উচ্চ পর্যায়ে রয়েছি, এমপি-মন্ত্রী তারা লুটেপুটে খাবো, শেখ হাসিনার সরকার এটা বরদাস্ত করে না।

ভূমি ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব কর্মকর্তারা সম্পৃক্ত আছেন তাদেরকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, আমরা একটি টাইম ফ্রেম করে দিয়েছি যে এই কয়দিনের মধ্যে ভূমির ছাড়পত্র দিতে হবে। এরমধ্যে ছাড়পত্র দিতে না পারলে যার টেবিলে এই কাগজ জমা থাকবে তাকে গুরুতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। এই পর্যন্ত ৯০ জন কর্মকর্তার নাম দুদকে দিয়েছি।

রিহ্যাবের প্রশংসা করে তিনি বলেন, দেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। এই উন্নয়নে রিহ্যাব অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সেজন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।

রিহ্যাবের প্রেসিডেন্ট মোঃ আলমগীর সামসুল আলামিন কাজল এর সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মোঃ সোহেল রানা এবং রিহ্যাবের ১ম ভাইস প্রেসিডেন্ট লিয়াকত আলী ভূঁইয়া। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন রিহ্যাবের একাধিক সদস্য।

মেলায় ১৬০টি প্রতিষ্ঠানের ২৩০টি স্টলসহ ৩০টি নির্মাণসামগ্রী এবং ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছে। ২৯টি প্রতিষ্ঠান এই মেলার সহযোগী হিসেবে কাজ করছেন। রিহ্যাব মেলায় র‍্যাফেল ড্র এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর