শৃঙ্খলমুক্তির ৪৮ বছর পেরিয়ে বাংলাদেশ

ঢাকা, জাতীয়

ইসমাঈল হোসাইন রাসেল, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-24 17:14:35

দীর্ঘ সংগ্রামের পথ পেরিয়ে ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতি পায় একটি স্বাধীন ভূখণ্ড, লাল-সবুজের পতাকা। পাকিস্তানি শাসকদের শোষণ-নিপীড়ন আর দুঃশাসন ভেদ করে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের প্রভাতি সূর্যের আলোয় ঝিকমিক করে ওঠে বাংলাদেশের শিশিরভেজা মাটি। অবসান হয় পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের নিকৃষ্টতম অধ্যায়। বাঙালি জাতির সেই চির গৌরবের মহান বিজয় দিবস আজ। লাল-সবুজের উৎসবের দিন। এদিন পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির ৪৮ বছর পূর্তি হচ্ছে।

২০০ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম পাকিস্তান রাষ্ট্রের। দীর্ঘ সময় পর পাকিস্তানি দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আসে বিজয়। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে আত্মসমর্পণ করে হানাদার বাহিনী। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

৬৩৭ খ্রিস্টাব্দে প্রথম স্বাধীন বাঙালি নৃপতি শশাঙ্কের মৃত্যুর পর থেকেই অরাজক হয়ে ওঠে বঙ্গভূমি। এরপর বহুবার বাঙালি অন্যের অধীনে গেছে। আবার সে পরাধীনতা অস্বীকার করেছে। তবে বাঙালি জাতি তার প্রথম ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র পেয়েছে প্রথম পরাধীনতার ১৩৩৪ বছর পর। হাজার বছরের শাসন শোষণের পর একটা সময় বাঙালির ভাষা সংস্কৃতি আর জাতিসত্তার প্রভু হয়ে বসে উর্দুভাষী পশ্চিম পাকিস্তানিরা। ১৯৪৭ সাল থেকে আবারো শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। যা পূর্ণতা পায় রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ ১৯৭১ সালে। বঙ্গবন্ধু তার বজ্রকণ্ঠে সেদিন পুরো জাতিকে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেন।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ স্বাধীনতার দাবিকে নস্যাৎ করতে শুরু হয় ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা। নিরস্ত্র ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলে পরে পাকিস্তানি হায়েনারা। তাদের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। শুরু হয় মুক্তিপাগল বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ।

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হাতের অস্ত্র ফেলে নতজানু হয় বীর বাঙালির সামনে। স্বাক্ষর করে পরাজয়ের সনদে। সেদিন বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ৯১ হাজার ৫৪৯ পাকিস্তানি সেনা প্রকাশ্যে আত্মসমর্পণ করে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজী মিত্র বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের সর্বাধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে চূড়ান্ত বিজয়।

ত্রিশ লাখ শহীদের রক্ত আর দু’লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় এই বিজয়। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরগুলোর প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপ জাতীয় পতাকায় সজ্জিত করা হয়েছে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সংবাদপত্র বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর