সংসদ কোটার চেয়ে ভিআইপি কোটার কর্মচারীদের কদর বেশি

ঢাকা, জাতীয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-28 17:48:25

সংসদের বিভিন্ন দফতরে কর্মরত তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা দীর্ঘকাল ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সংসদের কাজের সুবিধার্থে তারা নাখালপাড়া পুরাতন সংসদ সদস্য ভবনের তিন তলা ভবনের কিছু কক্ষে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। স্বল্প আয়ের এসকল কর্মচারীদের ঢাকা শহরে বাসাভাড়া করে থাকার মতো অবস্থা নেই। তাই বাধ্য হয়ে ছোট্ট একটি কক্ষে পরিবার নিয়ে থাকেন। ২০১১ সাল বা তার আগ থেকে এখানে বেশ কয়েকটি পরিবার বসবাস করে আসছেন।

ভালো ভাবেই চলছিল তাদের সংসার। কিন্তু বাদ সেধেছে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর। জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী তাদেরকে অবিলম্বে বাসা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এনিয়ে ওই সকল কর্মচারীদের পরিবার চরম আবাসন সংকটে ভুগছে। বিভিন্ন সরকারের আমালে বরাদ্দকৃত এসব কক্ষের কর্মচারীদের কেউ ভিআইপি কোটায় আবার কেউ সংসদ কোটায় বরাদ্দ পেয়েছিলেন।

নিয়মানুযায়ী তারা প্রতিমাসে মূল বেতনের ১০ শতাংশ বাসা ভাড়া বাবদ দিয়ে আসছেন। সংসদের কাছাকাছি হওয়ায় তারা অনেকেই পায়ে হেঁটে সংসদে চলে আসেন। এতে যে কোনো প্রয়োজনে তাদের ডাকলেই কাছে পায় সংসদ সচিবালয়।

গত ২০ নভেম্বর চিফ হুইপের আদেশক্রমে সংসদ সচিবালয়ের সদস্য ভবন শাখা থেকে বাসা খালি করার জন্য একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে তাদের মধ্যে সংসদ কোটার দৈনিক ভিত্তিক সাংবাৎসরিক কর্মচারীদের ১৯টি পরিবারকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে বাসা ছাড়তে বলা হয়েছে। অন্যদিকে ভিআইপি কোটায় অর্থাৎ স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার এবং হুইপদের মনোনীত কর্মচারীদের বাসা ছাড়ার বিষয়ে কোনো চিঠি বা নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

সংসদ কোটার কর্মচারীরা মূলত সংসদের স্টাফ তারা সরকারি বিধিমালা অনুযায়ী নির্দিষ্ট বয়স অনুযায়ী চাকরি বহাল থাকে। অন্যদিকে ভিআইপি কোটার কর্মচারীরা সাধারণত ৫ বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত। যে কোনো সময় তাদের চাকরি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে সংসদ কোটার চেয়ে ভিআইপি কোটার কর্মচারীদের কদর বেশি।

চিঠি পাওয়ার পর যেসকল কর্মচারী বাসা ছাড়ার চিঠি পেয়েছেন তারা সকলে মিলে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, চিফ হুইপ ও সংসদ সচিবালয়ের সচিবের কাছে বরাদ্দ বহাল রাখার আবেদন করেন। এর মধ্যে চিফ হুইপের সঙ্গে একদফা সাক্ষাৎও করেন। তখন চিফ হুইপ তাদের আশ্বস্ত করেন যে স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টির সুরাহা করবেন। তাদের ওই সাক্ষাতের পর আরও একমাস সময় বাড়িয়ে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সকলকে বাসা ছাড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর আগে একইভাবে সচিব হোস্টেলের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের নামে বরাদ্দকৃত বাসা খালি করার জন্য তাদের চিঠি ইস্যু করার পর স্পিকারের সঙ্গে দেখা করলে তাদের সেই বরাদ্দ পুন:বহালের সিদ্ধান্ত হয়।

সংসদ কোটার সাংবাৎসরিক কর্মচারীদের অনেকেই দাবি করেছেন আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা না করে এভাবে বাসা ছাড়তে বললে আমরা কোথায় থাকব। আমরা যে কয় টাকা বেতন পাই তা দিয়ে বাইরে বাসা ভাড়া করে থাকলে সংসার চালাবো কিভাবে? যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন কেউ গৃহহীন থাকবে না সেখানে আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা না করে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি আমাদের স্যাররা সেটা করবেন না। আমাদের দাবি মেনে নিয়ে বাসা ছাড়ার পূর্বের নির্দেশ প্রত্যাহার করবেন।

জানা গেছে সংসদ কোটার সাংবাৎসরিক কর্মচারীদের ছাড়তে বললেও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর তিন জন স্টাফ, ডেপুটি স্পিকারের ৩ জন স্টাফ এবং প্রত্যেক হুইপের দুইজন করে স্টাফ ঠিকই সেখানে বহাল তবিয়তে থাকছেন। এরমধ্যে হুইপ ইকবালুর রহিমের ৩ জন স্টাফ থাকেন নাখাল পাড়ার ওই সংসদ সদস্য ভবনের এক কক্ষ বিশিষ্ট বাসায়।

চিঠিতে বলা হয়েছে সংসদ ভবন এলাকার দায়িত্বে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের আবাসন সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে এবং প্রশাসনিক প্রয়োজনে নাখালপাড়াস্থ পুরাতন সদস্য ভবনের কক্ষ নং- ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ২৪, ২৫, ৪৫, ৭৪, ৮০, ৮২, ৮৩, ৮৬, ৮৭ ও ২ নং গেইটের সংলগ্ন অভ্যর্থনা কক্ষ খালি করা একান্ত প্রয়োজন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর