ট্রেন দুর্ঘটনায় রেল বিভাগের ক্ষতি ৩৮ লাখ টাকা!

ঢাকা, জাতীয়

তৌফিকুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-25 20:56:47

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ রেলওয়েতে দুটি বড় ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। যার একটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মন্দবাগ স্টেশনে দুটি ট্রেনের সংঘর্ষ এবং অপরটি  সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া স্টেশনে বগি লাইনচ্যুত হয়ে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে মন্দবাগ ট্রেন দুর্ঘটনায় রেল বিভাগের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা। এদিকে উল্লাপাড়া ট্রেন দুর্ঘটনায় আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানায় নি রেল কর্তৃপক্ষ।

মন্দবাগে তূর্ণা নিশীথা ও উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় ৩৮ লাখ টাকা ক্ষতির মধ্যে, ক্যারেজ ও ওয়াগন বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ২০ লাখ ৬২ হাজার ৩৮০ টাকা, লোক বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ১৭ লাখ টাকা, তাছাড়া প্রকৌশল বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ২০ হাজার ৯০০ টাকা বলে জানা গেছে।

মন্দবাগে দুটি ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনায়, উদয়ন এক্সপ্রেস মন্দবাগ লুপ লাইনে প্রবেশকালে ঢাকা অভিমুখী তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেস বিপরীত দিক থেকে এসে সংঘর্ষ ঘটায়। এর ফলে উদয়ন এক্সেপ্রেস ট্রেনের ১০, ১১, ১২ ও ১৩ নম্বর মোট চারটি বগি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলো ১১ নম্বর বগিটি। তাছাড়া তূর্ণা নিশীথা এক্সপ্রেসে ইঞ্জিনেরও ক্ষতি হয়েছিলো।

তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই ঘটনায় ১৫ জন যাত্রী নিহত ও ৫৭ জন যাত্রী আহত হয়েছেন। তাছাড়া পরবর্তীতে হাসাপাতালে চিকিৎসা নিয়ে অনেক যাত্রী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিয়ে গেছেন।

ঢাকা থেকে রংপুর অভিমুখী রংপুর এক্সপ্রেস বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে উল্লাপাড়া স্টেশন রেলগেটের কাছে যাবার পর ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে পাওয়ার কার ও ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায়। এতে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৯টি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যার মধ্যে ৪টি বগির শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং অপর ৫টি বগি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে উল্লাপাড়ায় ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় এখন পর্যন্ত রেল বিভাগের কী পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি হয়েছে সেটি জানা যায়নি। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলে এর ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। 

বর্তমানে রেলওয়েতে ইঞ্জিন বা (লোকোমোটিভ) এর সংকট রয়েছে। ফলে রেল সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। তার ওপর এই দুর্ঘটনায় ট্রেনগুলোর কয়েকটি ইঞ্জিন এবং দুর্ঘটনার কবলে পড়া সবগুলো ট্রেনের বগিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনগুলো যেসব রুটে চলাচল করতো সেসব রুটে কিছুটা বিপাকে পড়তে হয়েছিলো যাত্রীদের। তাছাড়া যে কোনো রেল দুর্ঘটনার পর ট্রেনের শিডিউলে বিপর্যয় দেখা যায়। আবার অনেক ট্রেনের যাত্রা বাতিল করতে হয় ফলে রেলের এই সময়ও কিছুটা ক্ষতিও গুনতে হয়।

রেল সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় ট্রেন দুর্ঘটনার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বগি ও ইঞ্জিনগুলো মেরামত করে বহরে যুক্ত করার জন্য পাহাড়তলী রেল কারখানায় পাঠানো হয়েছে। যেগুলো মেরামত করার উপযোগী সেগুলো মেরামত করে নির্ধারিত বহরে যুক্ত হবে। আবার যেগুলোর অবস্থা খুব খারাপ সেগুলো বাতিল করা হবে। তাছাড়া উল্লাপাড়া ট্রেন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বগিগুলো সৈয়দপুর রেল কারখানায় পাঠানো হয়েছে সেগুলোও যথাযথ মেরামত শেষে কাঙ্ক্ষিত বহরে যুক্ত হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো.মোফাজ্জেল হোসেন বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'রেলে দুর্ঘটনা ঘটুক আমরা কেউই চাইনা। একটি দুর্ঘটনা ঘটলে রেল বিভাগের অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়। তাই আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি যেন ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে'।

বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক কাজী সাইফুল নেওয়াজ বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'রেলের আধুনিকায়ন অতি জরুরি। রেল সেক্টরকে আধুনিক করলে দুর্ঘটনা কমে আসবে। আর দুর্ঘটনা না ঘটলে সেখানে আর্থিক ক্ষতি হবে না। ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটলে সাময়িক সময়ের জন্য পুরো ট্রেন ব্যবস্থা বিকল হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে সবদিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে রেল বিভাগ। তাই সময় এসেছে অন্যান্য দেশের রেল ব্যবস্থার মতো আমাদের দেশের রেল ব্যবস্থার পরিবর্তন করা।'

ট্রেনের যাত্রী সেবা নিয়ে কাজ করা যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ট্রেন একটি জনবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থা। সাম্প্রতিক সময়ে যে ট্রেন দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে এগুলো অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এই ধরনের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য রেল বিভাগকে দক্ষ জনবল বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে বিদ্যমান ব্রিটিশ আমলের রেল ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে তাহলে দুর্ঘটনা কমবে এবং আর্থিক কোনো ক্ষতি হবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর