শিক্ষা কর্মকর্তার বিদায়ের পরেও সংবর্ধনার জন্য চাঁদা দাবি

, জাতীয়

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ফেনী | 2025-01-22 15:38:26

ফেনীতে বিদায়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো:নাসির উদ্দিন আহমেদকে ২য় বারের মতো বিদায়ী সংবর্ধনা দিতে চাঁদা চাওয়া হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠান আয়োজনে ফেনী সদরের ১৫১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫০০ টাকা করে চাঁদা নির্ধারণ করা হয়েছে। চাঁদা ওঠানোর নির্দেশনা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গণির বিরুদ্ধে। সেই হিসেবে মোট চাঁদার পরিমাণ হয় ৭৫ হাজার ৫০০ টাকা।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আবদুল গণি বলছেন, সদরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের উদ্যোগে এ আয়োজন করা হচ্ছে। মাসিক সমন্বয় সভা শেষে এ সংবর্ধনা ও দুপুরের খাবারের পরিকল্পনা করেছেন তারা। কিন্তু শিক্ষকদের দাবি, উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গণি একাই এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তা শিক্ষকদের উপর চাপায় দিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক জানান, গত ১৬ জানুয়ারি চাকুরি থেকে অবসর নেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো: নাসির উদ্দিন আহমেদ। ইতোমধ্যে গত ১২ জানুয়ারি তাকে জেলা শিক্ষক সমিতি, ফেনী সদর উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, সোনাগাজী উপজেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। বিদায় নেওয়ার পরও আগামী বৃহস্পতিবার আবার তাকে সংবর্ধনার উদ্যোগ নেন সদর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল গণি। এ নিয়ে তিনি সদর উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে বৈঠক করেন ও সদরের প্রতি বিদ্যালয় থেকে ৫০০ টাকা চাঁদা নির্ধারণ করে দেন।

শিক্ষকদের সাথে কথা বলে আব্দুল গণির বিরুদ্ধে আরও অভিযোগের তথ্য পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে দায়িত্বের বাইরে গিয়ে প্রভাব বিস্তারসহ অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তারা বলছেন, বিদায় নেওয়ার পরও পুনরায় বিদায় সংবর্ধনা আয়োজনে টাকা দেয়ার জন্য শিক্ষকদের বাড়তি চাপ দেয়া হচ্ছে। এটাতে শিক্ষকদের সম্মতি ছিল না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেন, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন দ্বায়িত্বে থাকার সময় শিক্ষকদের উপর চাপ প্রয়োগ করে তার জন্য দুপুর ও রাতের খাবার ব্যবস্থার নির্দেশ দিতেন আবদুল গণি। বিদায়ী শিক্ষা কর্মকর্তার পরিবারের সদস্যরা এলেও শিক্ষকদের তাদের জন্য খাবার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দিতেন তিনি। এছাড়া সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার নাজমা বেগমকে নিয়ে বিভিন্ন বিদ্যালয় পরিদর্শনে গেলে গাড়িভাড়া বাবদ ১ হাজার টাকা আদায় করতেন আব্দুল গণি।এছাড়াও শিক্ষা অফিসারের গাড়িচালক বিভিন্ন স্কুলে গেলে তাকেও ৫০০ টাকা করে দিতে বলতেন তিনি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জেলা শিক্ষা অফিসার কোন বিদ্যালয় পরিদর্শন করবেন এটি সম্পূর্ণ গোপনীয় হলেও আব্দুল গণি সেই স্কুলকে আগে জানিয়ে দিতেন এবং নাজমা বেগমের গাড়ি ভাড়া বাবদ টাকা দিয়ে দেওয়ার জন্য বলতেন। অনেক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কম থাকার পাশাপাশি পড়ালেখার মান নিম্নগামী হলেও রিপোর্টে সন্তোষজনক লেখার অভিযোগ রয়েছে আবদুল গণির বিরুদ্ধে।

সংবর্ধনা আয়োজনের নিজ সিদ্ধান্তে চাঁদা আদায়ের অভিযোগের বিষয়ে আব্দুল গণি বার্তা২৪.কমকে বলেন, এটি শিক্ষকদের উদ্যোগ। টাকা দেওয়ার বিষয়ে তারা স্কুলে বলেছে কিনা সেটি শিক্ষকরা জানে। উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দেইনি। শেষ কার্যদিবসের পর আবার এমন আয়োজন করার এখতিয়ার আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ শিক্ষকদের বিষয়। আমার জানা নেই। আমার কাছ থেকে স্বার্থ আদায় করতে না পেরে এসব কথা বলা হচ্ছে। সবকিছু মিথ্যা।

স্কুল পরিদর্শনে টাকা আদায় ও অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্কুলে আকস্মিকভাবে পরিদর্শন করা হত। আগেই বলে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। ড্রাইভারকে বকশিশ, গাড়িভাড়া দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ড্রাইভাররা টাকা চাইত। দেওয়া না দেয়া ছিল শিক্ষকদের বিষয়। এ বিষয়ে আমার জানা নেই।

বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে অনিয়মের অভিযোগ প্রসঙ্গে আবদুর গণি বলেন, এমন কিছু করার কোন কারণ নেই। কিন্ডারগার্টেন, মাদ্রাসার কারণে শিক্ষার্থী সংখ্যা এমনিতেই কম। সেটি বাড়ানোর জন্য সমন্বয় সভা করে হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, শেষ কার্যদিবস শেষ করে ভারপ্রাপ্ত জেলা শিক্ষা অফিসার হিসেবে ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ফেনী থেকে বিদায় নেন বিদায়ী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ। এ বিষয়ে সদ্য বদায়ী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন আহমেদ জানান, আমি অবসরে চলে গিয়েছি। এসব বিষয়ে আমার জানার কথা না। কে আমাকে সংবর্ধনা দিবে এটার জন্য কার থেকে টাকা নিচ্ছে এসব আমার জন্য লজ্জাজনক। এ বিষয়ে অন্যকোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর