সময় টেলিভিশনের পাঁচ সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে বিদেশী সংবাদ সংস্থা এএফপি মিথ্যাচার করেছে বলে দাবি করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ভেরিফায়েড আইডিতে এক স্ট্যাটাসে সংবাদকর্মীদের চাকরিচ্যুতি প্রসঙ্গে নিজের ও সংগঠনের অবস্থান স্পষ্ট করেন হাসনাত আবদুল্লাহ।
হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেন, চাকরিচ্যুতির জন্য সময় টিভির মালিকদের কাছে আমরা কোনো সাংবাদিকের তালিকা দেইনি। এমনকি আমরা টিভি চ্যানেলটির শেয়ারও দাবি করিনি। কিন্তু এএফপি তার প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে এমনভাবে তুলে ধরেছে যে, ছাত্ররা সাংবাদিকদের বরখাস্ত করতে মালিকদের বাধ্য করেছে। এটি একদমই সত্য নয়।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে শতাধিক শিক্ষার্থীসহ প্রায় ২ হাজার নিহত হয়েছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে বিক্ষোভকারীদের হত্যা করা হয়েছে। তবে এই গণ-অভ্যুত্থানের সময় অনেক টিভি স্টেশন, সংবাদপত্র এবং খবরের ওয়েবসাইট সাংবাদিকতায় ন্যূনতম নৈতিকতা প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা ছাত্র এবং আন্দোলনকারীদের ‘জঙ্গবাদী’ এবং ‘ইসলামি চরমপন্থি’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তাদের অমানবিকতার প্রতিবাদ করার জন্য শান্তিপূর্ণভাবে সম্প্রতি সিটি গ্রুপের অফিসে গিয়েছিলাম। কারণ তারা হাসিনার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ব্যাপক সমর্থন ও বৈধতা দিয়েছে।
স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, সময় টিভি এই প্রচেষ্টায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। প্রকৃতপক্ষে ২৪ ঘণ্টার এই টিভি স্টেশন গত ১৬ বছরে মানবতার বিরুদ্ধে হাসিনার প্রতিটি অপরাধকে সমর্থন ও বৈধতা দিয়েছে। যার মধ্যে আছে বিচারব্যবস্থা হত্যা, জোরপূর্বক গুম এবং বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্র্যাকডাউন।
ভিন্নমত পোষণকারীদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালিয়েছে সময় টিভি। শহিদুল আলম, ডেভিড বার্গম্যান, লিসা গাজী এবং এএফপি ফ্যাক্ট চেক সম্পাদক কদর উদ্দিন শিশিরের মতো মানুষদের বিরুদ্ধে ভুলভাল রিপোর্ট প্রচার করেছে এই গণমাধ্যম।
হাসনাত আরও বলেন, এএফপি ঘটনাটি এমনভাবে বর্ণনা করেছে যে, ‘আমরা সিটি গ্রুপে প্রবেশ করেছি’, আমরা বৈধ প্রতিবাদ করার জন্য সেখানে যাইনি। এএফপি ১৬ বছরে বিক্ষোভকারীদের অমানবিকতা এবং মানবতার বিরুদ্ধে হাসিনার নৃশংস অপরাধকে বৈধতা দেওয়ার ক্ষেত্রে সময় টিভি যে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে তা উল্লেখ করেনি।
তিনি বলেন, আমরা পুনরায় বলতে চাই, আমরা সময় টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে জুলাইয়ে সময় টিভির জনবিরোধী ভূমিকা নিয়ে কথা বলেছি। বরখাস্তের জন্য আমরা মালিকদের কোনো সাংবাদিকের তালিকা দিইনি। আমরা টিভি স্টেশনের শেয়ারও দাবি করিনি। আমাদের মাঝে তেমন কোনো আলোচনা হয়নি। আমি এই অভিযোগগুলোকে আমার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে বিবেচনা করি। টিভি স্টেশনের মালিক বা সিটি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কোনো বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে এসব অভিযোগ আসেনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আরও বলেন, বারবার বলেছি আমরা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাকস্বাধীনতায় বিশ্বাসী। আন্দোলনকালে হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত সাংবাদিক এবং হাসিনার রক্তপিপাসু নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে যারা সত্য রিপোর্ট করতেন সেই সাংবাদিক ও সম্পাদকদের প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আমরা তাদের স্যালুট জানাই। আমরা সব বিদেশি সংবাদমাধ্যমের বিপ্লবের সময় তাদের ভূমিকার জন্য অভিবাদন জানাই।
এর আগে জুলাই আন্দোলনে দেশের বেসরকারি টেলিভিশন সময় টিভির ভূমিকা নিয়ে কয়েকজন সংবাদকর্মীকে চাকরিচ্যুত করার জন্য তালিকা সরবরাহ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন—এমন একটি তথ্য সম্প্রতি বিভিন্ন মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নিজের ভেরিফাইড ফেসবুক ওয়ালে ব্যাখ্যা দিয়েছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।