সরকারিভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও মানিকগঞ্জ জেলা জুড়ে অবাধ বিক্রি ও ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। প্রকাশ্যে এসব পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনের নেই কোন অভিযান। অনেকটাই নীরব ভূমিকায় রয়েছে পরিবেশ অধিদফতরসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।
পলিথিনের বিকল্প কিছু না পেয়ে বাধ্য হয়েই পলিথিনের ব্যবহার অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের।
শনিবার (২ নভেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সরেজমিনে জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা বাজার, মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বালিরটেক বাজার ও মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকার পৌর কাঁচাবাজারে পলিথিনের বিক্রি ও ব্যবহার করতে দেখা যায়। পূর্বের ন্যায় ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন। কোথাও নেই নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবহারের কোন বিধি-নিষেধ।
জেলার হরিরামপুর উপজেলার পাইকারি পলিথিন বিক্রেতা আবেদ আলী বলেন, প্রতিদিন প্রায় ১৫ কেজি পলিথিন বিক্রি করেনর তিনি। এই বাজারে তার মতো আরও
কমপক্ষে ১০ জন পলিথিন ব্যবসায়ী রয়েছেন। প্রত্যেকেই পূর্বের ন্যায় পলিথিন বিক্রি করে যাচ্ছে। পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধের বিষয়টি তিনি সংবাদ মাধ্যমের সুবাধে জানতে পেরেছেন। তবে স্থানীয় পর্যায়ে কোন সমস্যা হয়না বিধায় পূর্বের ন্যায় তিনি পলিথিন বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান।
একই বাজারের খুচরা পর্যায়ে খোলা লবন বিক্রেতা রবি মন্ডল বলেন, পলিথিন ছাড়া খুচরাভাবে লবন বিক্রির কোন সুযোগ নাই। তাই বাধ্য হয়েই পলিথিন ব্যবহার করছেন তিনি। তবে, স্থানীয় প্রশাসন পলিথিন ব্যবহার বন্ধে কোন অভিযান করলে বিকল্প কোন উপায়ে লবন বিক্রি করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বালিরটেক বাজারের এক মাছ বিক্রেতা বলেন, বড় মাছগুলো পলিথিন ছাড়া বিক্রি করা গেলেও ছোট মাছ পলিথিন
ছাড়া বিক্রির কোন উপায় নাই। পলিথিনের বিকল্প কোন ব্যবস্থা থাকলে অবশ্যই সে-ই পদ্ধতিতে মাছ বিক্রি করা হবে। কোন উপায় না থাকার কারণেই তারা পলিথিনে করে মাছ বিক্রি অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান তিনি।
একই বাজারে লালন মিয়া নামের এক পাইকারি পলিথিন বিক্রেতা বলেন, সরকার এর আগেও পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ করেছিলো। টিকে নাই। এবারও কয়েকদিন
বিক্রি ও ব্যবহার কমলেও আবারও পলিথিন বিক্রি চলবে দেদারসে। সরকার পলিথিন উৎপাদন কারখানা বন্ধ করে দিলেই স্থানীয়ভাবে বিক্রি বন্ধ হবে। তাছাড়া অভিযান
চালিয়ে পলিথিন বিক্রি বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন বৃদ্ধ বয়সের এই ব্যবসায়ী।
মানিকগঞ্জ পৌর কাঁচা বাজারের একাদিক ডিম ও সবজি বিক্রেতা বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা না থাকলে পথিথিনের ব্যবহার বন্ধ করা প্রশাসনের জন্য কষ্টকর হয়ে যাবে। পলিথিন ছাড়া খুচরা পণ্য বিক্রি করা দায়। পলিথিনের বিকল্প কোন ব্যবস্থা থাকলে অবশ্যই পলিথিন বিক্রি ও বন্ধের সিদ্ধান্ত দ্রুত কার্যকর করা যাবে বলে মন্তব্য করেন তারা।
মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. মো. ইউসুফ আলী বলেন, পলিথিনের ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধে জনবহুল এলাকায় মাইকিং করে জন সাধারণদের সচেতন করা হচ্ছে। মানিকগঞ্জ পৌর কাঁচাবাজার কমিটির সভাপতি-সম্পাদককে পলিথিন ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয় করে পলিথিনের বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ইউসুফ আলী।
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, সরকার যে সকল ক্যাটাগরির পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে সে সকল পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধে রোববার থেকে অভিযান চালাবে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকগণ। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার বন্ধ করা হবে বলে জানান তিনি।