ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ 'ফ্যাসিবাদের সব বৈশিষ্ট্য' প্রদর্শন করেছে অভিযোগ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ দেশের রাজনীতিতে আপাতত আওয়ামী লীগের কোনো স্থান নেই।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা এ মন্তব্য করেন। বুধবার (৩০ অক্টোবর) পত্রিকাটির অনলাইন সংস্করণে এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনাকে দেশে প্রত্যপর্ণ করার বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখনই ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবে না। তবে দেশের অপরাধ আদালত রায় ঘোষণা করলে তার সরকার শেখ হাসিনাকে ভারতের কাছে থেকে ফেরত চাইবে।
ড. ইউনূস বলেন, তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য অভিযুক্ত।... রায় প্রকাশের পর আমরা তাকে ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।রায় হওয়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এ বিষয়ে কিছু করার আছে বলে আমি মনে করি না।
এখনই তাকে ফেরত না চাওয়ার কারণ হিসেবে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, সম্ভবত দুই দেশের মধ্যে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে তা এড়াতেই এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
মুহাম্মদ ইউনূসের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, “স্বল্প সময়ের জন্য হলেও, নিশ্চিতভাবেই এই দলের কোনো স্থান বাংলাদেশে নেই। আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা বাংলাদেশে নেই।”
তিনি বলেন, "আওয়ামী সরকার বিগত ১৫ বছরে জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যবহার করেছে এমনকি নিজেদের স্বার্থ বাড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করেছে তারা।"
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিবাদী দলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শেখ হাসিনার পতনের পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ক্ষমতাথাকাকালে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান দখলের অভিযোগ তুলেছে। এছাড়াও দলটিকে সাময়িকভাবে রাজনীতি থেকে স্থগিত করা উচিত নাকি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা উচিত তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে বিতর্ক।
পত্রিকাটি জানায়, ইউনূস ধারণা করেছিলেন যে আওয়ামী লীগের পতন হতে পারে। কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগের ভাগ্য এ সরকারের দ্বারা নির্ধারিত হবে না। কারণ এটি কোনো "রাজনৈতিক সরকার নয়"।
আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কি না এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, "সে বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ঐক্যমত্যের’ মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। তারাই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক স্থান নির্ধারণ করবে।"
ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। সেক্ষেত্রে নির্বাচন নিয়ে দলটির কী পরিকল্পনা সেটারও কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে দলটির সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, "আওয়ামী লীগ যেকোনো সময় নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত।"
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ইচ্ছা আছে কী না এমন প্রশ্নে ইউনূস বলেছেন, রাজনীতিতে যোগদান বা রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো ইচ্ছা নেই। নির্বাচনের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরি করার পাশাপাশি বেশকিছু সেক্টরে সংস্কার করাই আমাদের লক্ষ্য। নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ হলেই আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করব।
শেখ হাসিনার শাসনামলের পতনের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিদেশী সমর্থক ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে।
এর আগে শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় আগস্টে পত্রিকাটিকে বলেছেন, "বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার জন্য তার মা দায়ী নয়। এই অভিযোগটি মিথ্যা। তিনি (শেখ হাসিনা) যেকোনও বিষয়ের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত, কারণ তিনি বেআইনি কিছু করেননি।"
প্রতিবেশি দেশ ভারতের সঙ্গে সবসময় সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চান জানিয়ে ইউনূস বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নয়াদিল্লির সমর্থনের অভাব রয়েছে। তাদের সমর্থন না পাওয়া খুবই দুঃখজনক।
মোদীর সফরে এই সরকার তাকে "মোস্ট স্বাগত" জানাবেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছি। . . প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যে সম্পর্ক থাকা উচিত তা রাখতে আমাদের সর্বোত্তম সম্পর্ক থাকতে হবে।”
আওয়ামী লীগের পতনের পর হিন্দুদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, "হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার "কিছু ঘটনা" এবং "খুব অল্প সংখ্যক" প্রাণহাণির ঘটনা ঘটেছে। তবে এদেরকে সংখ্যালঘু বিবেচনায় আক্রমণ করা হয়নি। অধিকাংশ হিন্দুই এই আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিল। সে প্রেক্ষিতেই তাদের ওপর হামলা করা হয়েছে।"