দেশের স্বার্থ বিকিয়ে চলবে ইথিওপিয়ান এয়ার

, জাতীয়

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-10-26 19:40:07

আগামী ২ নভেম্বর ঢাকা থেকে সরাসরি আদ্দিস আবাবায় ফ্লাইট শুরু করতে যাচ্ছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স। ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের এই ফ্লাইট চালু হলে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে। এতে করে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইন্স বিমান ইউরোপের বিভিন্ন রুট ও কানাডার টরন্টো রুটের যাত্রী হারাবে।

এরই মধ্যে সপ্তাহে পাঁচটি ফ্লাইট পরিচালনা করার ঘোষণা দিয়েছে এয়ারলাইন্সটি। শুধু তা-ই নয়, একটি টিকিট কিনলে একটি ফ্রি অফার দিয়েছে। এই অফারটি ৩ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। বলা হচ্ছে ‘পে লোকাল, ফ্লাই গ্লোবাল’ এই মূলমন্ত্রে যাত্রীদের আকৃষ্ট করার জন্য মার্কেটিং করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে ফ্রি ও কম মূল্যের টিকেটের অফারের ফলে বিমান ইউরোপের রোম, ম্যানচেস্টার, লন্ডন রুটের যাত্রী হারাবে। এছাড়া জনপ্রিয় কানাডার টরন্টো রুটে লোকসানে পড়তে হবে বিমানকে।

ইথিওপিয়ান আফ্রিকা মহাদেশের শীর্ষ ও বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এয়ারলাইন্স। তাদের আদ্দিস আবাবা থেকে লন্ডন, টরন্টো রুটে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে। তাছাড়া বিমান এসব রুটে দুই থেকে চার দিনের বেশি ফ্লাইট নেই। অন্যদিকে ইথিওপিয়ান সপ্তাহের সাতদিনই এসব রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। এর সঙ্গে একটি টিকিটের মূল্যে ফ্রি টিকিট ও কম মূল্যের টিকিট অফার দিচ্ছে, যা সহজেই যাত্রীদের আকৃষ্ট করবে।

ঢাকা থেকে সৌদি আরব, ওমান, কাতার, কুয়েত, আরব আমিরাত, বাহরাইনসহ যেসব দেশে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক থাকেন তাদেরও টার্গেট করছে আফ্রিকা মহাদেশের এই এয়ারলাইন্সটি। ঢাকা থেকে যাত্রীদের আদ্দিস আবাবায় নিয়ে ট্রানজিট ফ্লাইটের মাধ্যমে আবার মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটে নিয়ে যাবে। এতে করে মাধ্যপ্রাচ্যে বিমানের শক্তিশালী নেটওয়ার্কে আঘাত হানবে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স। এতে যদি এই রুটের যাত্রীরাও ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সে যায় তাহলে বিমানের কিছুই করার থাকবে না।

কম মূল্যে টিকিট বিক্রির মন্ত্র নিয়েই এসব যাত্রীকে আকৃষ্ট করবে ইথিওপিয়ান। শুধুমাত্র সৌদি আরবেই থাকেন ২০ লাখ বাংলাদেশি। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশে থাকেন আরও ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি। এই বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশিকে টার্গেট করে ঢাকা থেকে ফ্লাইট পরিচালনার পরিকল্পনা করেছে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স।

নাম না প্রকাশের শর্তে বিমানের এক কর্মকর্তা বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিশ্বের কোনো দেশের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ স্ব স্ব দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না। অথচ বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এ ধরনের একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যেখানে বিমান সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হবে, যাত্রী হারাবে। এতে করে দেশের টাকা বিদেশি এয়ারলাইন্সের হাতে চলে যাবে।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকেই বেবিচক সব সময়ই বিমানের সবুজ সংকেত পেলেই তবে বিদেশি এয়ারলাইন্সসমূহকে ফ্লাইট পরিচালনা অনুমতি দিতো। এখন বেবিচক এসব তোয়াক্কা করে না। ভারতও এক সময় বিমানকে ইচ্ছেমতো যাত্রী নিয়ে যেতে দিতো। নির্দিষ্ট সংখ্যক যাত্রীর পর যাত্রীপ্রতি লেভী দিতে হতো বিমানকে। এখন আপনি হয়তো বলবেন, যাত্রীদের স্বার্থ দেখাই বেবিচকের কাজ। সেই দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, যাত্রীরা হয়তো সাময়িকভাবে কিছুটা কম মূল্যে টিকিট পাবেন। কিন্তু হাজার হাজার বাংলাদেশি যাত্রীর টাকা বিদেশি একটি এয়ারলাইন্স নিয়ে যাবে। এতে কিভাবে দেশের স্বার্থ রক্ষা হবে?

বিমানের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বলেছিলেন, বিমান যদি কোনো দেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। আবার যদি অনুমতি পায় তা হয় গভীর রাতে, যা যাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক সময় নয়। প্রাইম টাইমে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পাওয়ার কথা চিন্তাও করা যায় না।

তবে বিমান কিংবা ইউএস-বাংলার মতো দেশীয় এয়ারলাইন্সের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ। তাদের কথা দেশীয় এয়ারলাইন্স সক্ষমতা না বাড়ালে বেবিচকের কি করার রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বেসামরিক বিমান চলাচল বিশেষজ্ঞ এটিএম নজরুল ইসলাম বলেন, দেশীয় এয়ারলাইন্সের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আর এজন্য তো সরকারকেই কাজ করতে হবে। তা না হলে বিশ্বের শীর্ষ এয়ারলাইন্সগুলোকে ইচ্ছেমতো ফ্লাইট পরিচালনার অনুমোদন দেওয়া হলে দেশ যেমন অর্থ হারাবে, তেমনি দেশীয় এয়ারলাইন্স প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না।

এ সম্পর্কিত আরও খবর