পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন স্থগিত, সচল বিদ্যুৎ সরবরাহ

, জাতীয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-10-17 20:55:11

দিনভর নানা নাটকীয়তার শেষে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারির আশ্বাসে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়েছে বলে অনেক জেলা থেকে খবর পাওয়া গেছে। বিকেলের মধ্যে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে বলে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সুত্র দাবি করেছে।

আন্দোলনরত পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২০ কর্মকর্তাকে অব্যাহতি প্রদান ও ১০ জনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে সর্বাত্মক শাটডাউনের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার খবর আসতে থাকে। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর হয়ে ওঠে।

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে একটি খবর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয় আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে দাবি পুরণ না হলে সর্বাত্মক শাটডাউন ও লংমার্চ কর্মসূচি পালন করা হবে। অব্যাহতি দেওয়া কর্মকর্তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল, দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার, আরইবি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ও দুই দফা বাস্তবায়নে আল্টিমেটাম দেয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

দুপুরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলনকারি নেতাদের গ্রেফতারের খবর। এতে করে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। বিকেলের পর থেকে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বৈষম্য বিরোধী নেতাদের কাউকে ফোনে পাওয়া যায় নি। তাদের ফোন নম্বরগুলো বন্ধ পাওয়া যায়।

সন্ধায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের অনুরোধে কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করলেও দাবি আদায় না পর্যন্ত আন্দোলনে চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান তারা। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের সঙ্গে শিগগিরই বৈঠক হতে পারে বলে সুত্র জানিয়েছে।

অন্যদিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেছেন, আলোচনার মাধ্যমেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে জিম্মি করে কিছু করতে চাইলে তাদের প্রশ্রয় দেয়া হবে না।

সারাদেশে ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রয়েছে। দেশের প্রায় ৮০শতাংশ গ্রাহক তাদের আওতায়। সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দ্বৈতশাসন ও ৪৭ বছর ধরে চলমান শোষণ, বৈষম্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আরইবি-পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকুরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সব চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। তারই ধারবাহিকতায় ২ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।

সর্বশেষ ২৭ আগস্ট বিদ্যুৎ ভবনের আন্দোলনকারী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও বিদ্যুৎ বিভাগের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা। বৈঠকের পরেই আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু তাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় আবার আন্দোলনে নামে তারা। অন্যদিকে ২০ জনকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অব্যাহতি দিলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করে। ১৭ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন জেলায় ৬১টি সমিতিতে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে প্রতিবাদ জানায় সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লাখ লাখ গ্রাহক। বিকেলের দিকে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক প্রকৌশলী রাজন কুমার দাস (এজিএম), প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া (ডিজিএম) দীপক কুমার সিংহ (ডিজিএম)সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সমিতির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। সন্ধ্যায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে সমিতির কর্মকর্তা কর্মচারীদের সমস্যা সমাধান এবং আটকদের ছেড়ে দেওয়া আশ্বাস দিলে রবিবার পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেন তারা।

আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হাকিম (এজিএম) গণমাধ্যমকে জানান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমাদের দাবি দাওয়া বিষয়ে আলোচনার জন্য সময় চেয়েছেন, মামলা প্রত্যাহার এবং আটকদের ছেড়ে দেয়াসহ কোন প্রকার হয়রানি না করার আশ্বাস দেয়ায় আমরা কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর