ভাইদের ডাকে গিয়েছি, এমপি-মন্ত্রী হতে যাইনি

, জাতীয়

জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-10-17 20:01:41

সচল পায়ে গুলিতে অচল হয়ে হাসপাতালের বেডে পড়ে আছেন গার্মেন্টস কর্মী মাসুদ মিয়া। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পরেও উত্তরায় পুলিশের গুলিতে মারাত্মক আহত হন তিনি। ভারি অস্ত্র ব্যবহার করায় কোমরের একটু নিচে গুলি লাগায় এখনো বের করতে পারেননি চিকিৎসকরা।

ঢাকায় বেসরকারি হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে সাভারের সেন্টার ফর দ্য রিহ্যাবিলিটেশন অব দ্য প্যারালাইজড (সিআরপি) আছেন মাসুদ মিয়া। টাকার অভাবে এখন চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। পায়ে গুলির ক্ষতচিহ্ন সারাতে চারটা ইনজেকশন দিতে হবে, কিন্তু টাকার জন্য দিতে পারছেন না।

ক্ষোভ প্রকাশ করে মাসুদ মিয়া বার্তা২৪.কমকে বলেন, দেশের বড় কিছু হবো বা এমপি-মন্ত্রী হবো এটার জন্য যাইনি। দেশের জন্য গেছি, ভাই-ব্রাদারের জন্য গেছি, সমন্বয়কদের জন্য গেছি। আমরা নিজের স্বার্থের জন্য যাইনি, কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারি একটা লোক বা কোন কর্মকর্তা আসেনি। এদিকে, এখন টাকার জন্য চিকিৎসা চালাতেও পারছি না।

মাসুদ মিয়ার একই অবস্থা গাজীপুরে কাজ করে গার্মেন্টস শ্রমিক আশানূর রহমানের। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিকেলে গাজীপুরের ভাসান থানার সামনে পুলিশের গুলিতে হাত ও মাথায় শতাধিক ছররা গুলি নিয়ে থেরাপি দিতে এসেছেন এখানে। গুলিবিদ্ধ হয়ে দীর্ঘদিন সিএমএইচ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর ডাক্তারের পরামর্শে এখানে পাঠানো হয়।

আশানূর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, গুলি লাগার পর দীর্ঘ দিন সিএমএইচে চিকিৎসা নিয়েছি। কিন্তু এখনো আমার মাথায় ও হাতের চামড়ার ভেতরে থাকা গুলি বের করতে পারেনি। এগুলোর যন্ত্রণায় ঘুমাতে পারি না। গুলি ভেতরে থাকায় ডান হাতের আঙুলসহ হাত বাঁকা হয়ে গেছে।

আশানূরের অভিযোগ, আমাদের জন্য সরকার কিছু করতেছে না। সরকারের লোকেরা হাসপাতালে এসে একজন-দুজনকে দেখে চলে যায়। আমরা পাশের বেডে আমাদের দিকে ফিরেও তাকায় না। আমাদের দিকে তাকায় একটু কথাও বলল না। কেন? আমাদের রক্তের বিনিময়ে দেশটা স্বাধীন হয়েছে।

আশানূর বলেন, কিছুদিন আগে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা এসেছেন। এক রুমে দু'জন আছে, উনি একজনকে দেখে চলে যান। আমাদের দিকে একবার ফিরেও তাকায়নি। নাম ভাঙানোর জন্য আমাদের দেখতে আসে, ভালো-মন্দ কিছু জিজ্ঞেস করে না। আমার হাতের যে অবস্থা, আমি যে কিছু করতে পারবো না, সেটা কি কেউ চিন্তা করছে? আমরা চাই আমাদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিয়ে ভালো করে দিক।

মাসুদ মিয়া ও আশানূরের মত এমন শতাধিক গুলিবিদ্ধ হয়ে অঙ্গহারা মানুষ থেরাপি নিচ্ছেন এই পুনর্বাসন কেন্দ্রে। সবার একটাই প্রত্যাশা দ্রুততম সময়ের মধ্যে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে তারা।

এ বিষয়ে সিআরপির প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা শাহ মোহাম্মদ আতাউর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেখেছি। আন্দোলনে আহতদের জন্য একটা প্রকল্প হাতে নিয়েছি। আমাদের প্রকল্পের মাধ্যমে আহতের পুনর্বাসন ও তাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ও হবে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের এই সেন্টারে আবাসিকভাবে চিকিৎসা নিচ্ছে ৩০ জন রোগী। সকালে এসে সন্ধ্যায় ফিরে যায় এমন রোগীর সংখ্যা প্রায় ২০ জন। সব মিলিয়ে ৫০ জনকে আমরা চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের আওতায় নিয়ে এসেছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর