দুবলার চরে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ১৬ হাজার জেলে

খুলনা, জাতীয়

আবু হোসাইন সুমন,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, মংলা, বার্তা২৪ | 2023-08-22 15:50:12

বঙ্গোপসাগর পাড়ে সুন্দরবনের দুবলার চরের জেলে পল্লীর প্রায় ১৬ হাজার জেলে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে শুঁটকি উৎপাদনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এছাড়া জেলে পল্লীতে রয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। দুর্গম সাগর মোহনার দুবলার অন্তত ৮টি চরে প্রতি বছর শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণে নিয়োজিত এসব জেলে-বহদ্দারের দুর্যোগকালীন আশ্রয়েরও নেই সুব্যবস্থা।

জনবিচ্ছিন্ন চরগুলোতে সুপেয় পানির তেমন কোন ব্যবস্থা না থাকায় বালুময় চরে ছোট ছোট কুপ খনন করে সেখান থেকে পানি তোলা হয়। নিয়মিত সেই অস্বাস্থ্যকর পানিই পান করতে হয় কয়েক হাজার জেলেদের। ফলে শুঁটকি মৌসুমের পাঁচ মাস সেখানে অবস্থানকালে নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্তদের জোটে না কোন চিকিৎসা। জেলেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করে সরকারের রাজস্ব ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করলেও সরকারিভাবে তাদের চিকিৎসা সেবার তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবন থেকে বছরে যে পরিমাণ রাজস্ব আয় হয়, তার বড় অংশ আসে দুবলার চরের শুঁটকি পল্লী থেকে। পূর্ব সুন্দরবনের বাগেরহাটের শরণখোলা রেঞ্জের শরণখোলা টহল ফাঁড়ির অধীনে আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শ্যালার চর, মেহের আলীর চর, নারকেলবাড়িয়াসহ সাগর মোহনার ৮টি চরে শুঁটকি উৎপাদন হয়। প্রতিবছর পহেলা নভেম্বর থেকে শুঁটকি উৎপাদনের প্রস্তুতি শুরু হয়। আর চলে মার্চ মাস পর্যস্ত।

আলোর কোল শুঁটকি পল্লীর লেদু বহদ্দার, অফিস কিল্লার শহিদুল মল্লিক ও শুকুর আলী মীর জানান, এ বছর ডায়রিয়া, আমাশয়সহ চরে পানিবাহিত নানা রোগ দেখা দিয়েছে। কুপ খনন করে যে পানি পাওয়া যায়, তা দিয়ে হাজার হাজার জেলের চাহিদা পূরণ হয় না। তাঁরা চরে পুকুর খনন, আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ ও স্বাস্থ্য ক্যাম্প স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন।

দুবলার চরের মৎস্য জীবীদের সংগঠন ‘দুবলা ফিশারমেন গ্রুপে’র সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘দুবলার চরের জেলে পল্লীতে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে শুঁটকি উৎপাদন করছে জেলেরা। বিশেষ করে এখানে খাবার পানির চরম সংকট রয়েছে। এছাড়াও পুকুরের পাড় ভেঙে সাগরের নোনা পানি ঢুকে পড়ায় তা আর ব্যবহার করা যাচ্ছে না। বর্তমানে বালুর চরে ছোট ছোট কুপ খনন করে সামান্য পরিমাণ পানি তুলে কোনও রকম জীবন চলছে চরবাসীর। ফলে এ বছর পেটের পীড়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে বেশি।

তিনি আরও জানান, চরে সরকারিভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। জেলেরা তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শুঁটকি মৌসুমে পল্লী চিকিৎসক নিয়ে আসেন। তা দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসার কাজ সারলেও বড় ধরণের কিছু হলে সমস্যায় পড়তে হয়। দুর্গম সাগর থেকে দ্রুত কোথাও নেয়ার সুযোগ থাকে না। তাছাড়া সাইক্লোন শেল্টারগুলো মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তাতে মানুষ বসবাসের কোনও সুযোগ নেই। দুবলার শুঁটকি পল্লীই সুন্দরবনের রাজস্ব আয়ের একটি বড় উৎস। তাই জেলেদের স্বার্থে পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ, ভ্রাম্যমাণ স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপন ও সুপেয় পানির জন্য পুকুর খননের দাবী সকলের।

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক ও শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো: জয়নাল আবেদীন জানান, দুবলার জেলে পল্লীতে বন বিভাগের একটি টহল ফাঁড়িসহ র‌্যাব ও কোস্ট গার্ডের ক্যাম্প রয়েছে। ৮টি চরে পাঁচটি সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে। এগুলো সিডরের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়ে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবুও দুর্যোগ মুহূর্তে ঝুঁকি নিয়ে সেখানে আশ্রয় নেয় জেলেরা। বন বিভাগের অফিস ভবনটিও বঙ্গোপসাগরে বিলীন হওয়ার পথে। তবে শুঁটকি মৌসুমে যাতে জেলে পল্লীতে সরকারিভাবে ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করা হয় এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর