ব্যাংক ঋণ পরিশোধ না করে আত্মসাতের অভিযোগে মজিবুর রহমান মিলন নামের এক শিপইয়ার্ড মালিককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়া তাকে ১০০ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সোমবার (২২ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুন্সী আবদুল মজিদ এ রায় ঘোষণা করেন। আসামি মিলন মামলার শুরু থেকে পলাতক আছেন। তার অনুপস্থিতি এ রায় ঘোষণা করা হয়।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু গণমাধ্যমকে জানান, আদালত চট্টগ্রামের মুহিব স্টিল অ্যান্ড শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রির মালিক মজিবুর রহমান মিলনকে দুদক আইনের সিডিউলভুক্ত ৪০৯ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১০০ কোটি টাকা জরিমানা, অনাদায়ে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন।
এছাড়াও ৪২০ ধারায় তাকে পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। উভয় ধারার সাজা একত্রে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেছেন।
এজাহার হতে জানা যায়, ২০১১ সালে অগ্রণী ব্যাংকের চট্টগ্রামের লালদীঘি পূর্ব পাড় করপোরেট শাখা থেকে রিভলভিং এলসি সুবিধা নিয়ে কোরিয়া থেকে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি করে মুহিব স্টিল। পরে বিভিন্ন সময়ে ঋণের সুদ-আসলে কিছু টাকা পরিশোধ করে ২০১৭ সালে ৯১ কোটি ৯২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯২ টাকা ঋণস্থিতি রেখে পরিশোধ না করে পরিবার-পরিজন নিয়ে আত্মগোপন করেন।
এমন অভিযোগে ২০১৮ সালের ২৪ মিলনের বিরুদ্ধে এ মামলা করে দুদক। ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, আসামি মজিবুর রহমান মিলনের আবেদনের প্রেক্ষিতে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের লালদিঘী পূর্ব পাড় শাখার অনুকূলে বিদেশ হতে স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি বা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহের জন্য ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর ৩৬ কোটি টাকা এলটিআরসহ ৪৫ কোটি টাকার এলসির ঋণ মঞ্জুর করা হয়। ২০১০ সালের ২৬ এপ্রিল এলটিআর ঋণ সীমা ৩৬ কোটি টাকা থেকে ৭১ কোটি ২০ লাখ টাকায় এবং এলসি ক্ষণ সীমা ৪৫ কোটি টাকা থেকে ৮৯ কোটি টাকায় বর্ধিত করা হয়। তৃতীয় দফায় একই বছরের ৭ মে ৮৯ কোটি টাকার রিভলভিং ঋণপত্র লিমিটের আওতায় স্থানীয়ভাবে পণ্য বা মালামাল সংগ্রহের জন্য ৪০ কোটি টাকার স্থানীয় ঋণপত্র খোলার অনুমোদন দেয়া হয়।
ঋণ মঞ্জুরীর প্রেক্ষিতে আসামি কোরিয়া থেকে MV ZHENG হাঞ নামক একটি জাহাজ আমদানি করেন। যা ২০১১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে শুল্কায়ন শেষে খালাস করা হয়। অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড পক্ষে জাহাজের মূল্য বাবদ ২০১২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ৬৩ লাখ ৪০ হাজার ৬৩৮ ইউএস ডলার অর্থাৎ ৪৮ কোটি ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১৪ টাকা পরিশোধ করে। পরিশোধ করা টাকার মধ্যে ৪৭ কোটি ৭৬ লাখ ৯ হাজার ২৪৪ টাকা আসামির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে নিট ঋণ প্রদান করে ব্যাংক। ব্যাংকে জামানত হিসেবে আসামির দুইটি এফডিআর অ্যাকাউন্টে মোট ৪ কোটি টাকা রাখা ছিল।
এছাড়া স্থানীয়ভাবে পণ্য সংগ্রহের জন্য ব্যাংক ২০১০ সালের ৮ ডিসেম্বর ১৭ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং একই বছরের ১৯ আগস্ট ১৮ কোটি ২ লাখ টাকা ঋণ দেয়। এ হিসেবে মোট ৮২ কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ৪৪ টাকা ঋণ প্রদান করা হয় আসামিকে। ঋণের কিছু অর্থ পরিশোধও করেন আসামি মজিবুর। এরপরেও তার কাছে ব্যাংকের পাওনা ছিল ৯১ কোটি ৯২ লাখ ৮৪ হাজার ৩৯২ টাকা। যা তিনি পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করে গা-ঢাকা দিয়েছেন।