মার্কিন তরুণী সানা উল্লাহ। বাবা-মা, দুই বোন ও এক ভাইয়ের সংসার। ছোটবেলা থেকেই সানা উল্লাহ একটু আলাদা, জেদি কিন্তু নম্র। নিজের কাজে শতভাগ মনোযোগী ও লক্ষ্যপূরণে অবিচল, তবে ধর্মপরায়ণ।
২০১৫ সালের একটি ঘটনা তার মনে ব্যাপক দাগ কাটে। নিজের বাসার একটি রুমে তার বোন তাকে বাধা দেয় নামাজ আদায়ে। তখনই প্রতিজ্ঞা করেন, নিজে নিয়মিত নামাজ আদায়ের পাশাপাশি নামাজের চিত্র মানুষকে দেখাবেন। তখন থেকেই এই তরুণী বিভিন্ন স্থানে মানুষের নামাজ আদায়ের ছবি তুলতে শুরু করেন। যা তাকে আন্তর্জাতিক পুরস্কার এনে দেয়।
সাগর পাড়, পাহাড়ের চূড়া, বরফাচ্ছাদিত পর্বত, গাড়ির গ্যারেজ, শপিংমল, উড়োজাহাজ, রেলস্টেশন ও রাস্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে একক ও জামাতে নামাজ আদায়ের ছবি (স্থিরচিত্র) তুলে আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘গোল্ডজিহার’ (Goldziher Prize) পেয়েছেন তিনি।
২০১৯ সালে তার তোলা `Places You’ll Pray’ শিরোনামে নামাজ আদায়ের ছবিগুলো এ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। এ অসামান্য কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পুরস্কার হিসেবে ৫ হাজার ইউএস ডলার পাবেন।
ছবিগুলো হাফিংটন পোস্ট, ফিউশন ও কোয়ার্টজসহ অনেক সাইটে প্রকাশিত হয়। আগামী ২ মে ২০১৯ যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির জাতীয় প্রেসক্লাবে তাকে পুরস্কার প্রদান করা হবে।
আমেরিকায় ইহুদি-খ্রিস্টান ও মুসলিমদের মধ্যে সাধারণত নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা, শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার অবদানস্বরূপ এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। তবে সানা উল্লাহ ছবির মাধ্যমে মার্কিন মুসলমানদের শান্তিপূর্ণ নামাজের ছবি কভারেজ দেওয়ার কারণেই তাকে এ অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হলো।
২০১৯ সালে সম্প্রীতির এ অ্যাওয়ার্ডের জন্য ৬ জন মনোনীত হয়। তারা হলেন- সানা উল্লাহ, লায়লা ফাদেল, হান্নাহ আল্লাম, আয়মান ইসমাইল, জায়নাব সুলতান এবং সি চেন। এ ৬ জনের মধ্যে ৫ জনই নারী।
সানা উল্লাহ ২০১৭ সালে ফটো সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। তবে ২০১৫ সাল থেকে আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে মানুষের নামাজ পড়ার ছবি তুলেছেন।
ইসলাম ও মুসলমানদের নিয়ে বিতর্কের সময়টিতে আমেরিকায় নামাজের ছবি উপস্থাপনের মাধ্যমে এ অ্যাওয়ার্ড লাভ ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য এক বড় অর্জন।
খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মের পরে ইসলাম ধর্ম আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ২০১৭ সালের এক গবেষণায় দেখা যায় যে, আমেরিকার মোট জনসংখ্যা ১.১ ভাগ মুসলিম।
মুসলমানরা প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। সূর্য ওঠার আগে ফজরের নামাজের মধ্য দিয়ে তাদের দিন শুরু হয় আর সন্ধ্যার পর এশার নামাজ আদায়ের মাধ্যমে দিন শেষ হয়।
সানা উল্লাহর উঠানো ছবিগুলো প্রমাণ করে যে, আমেরিকায় মুসলিমরা নির্ভয়ে যে কোনো স্থানে নামাজ আদায় করতে সক্ষম। নিঃসন্দেহে এটি শান্তি ও সম্প্রীতির নিদর্শন।