মক্কা মোকাররমা (সৌদি আরব) থেকে: ভালো নেই আবদুল কুদ্দুস (৫৬)। প্রায় তিন দশকের প্রবাস জীবন। কোথায় এখন সুদিনের স্বপ্ন দেখবেন- তা নয়, চোখের সামনে ধূসর আর বিবর্ণ ভবিষ্যত।
১৯৮৩ সাল থেকে প্রবাসী জীবন আবদুল কুদ্দুসের। ওমান-দুবাই হয়ে ২০০০ সালে পাড়ি জমান মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরবে।
পবিত্র নগরী মক্কার মসজিদুল হারামের অদূরে ব্যস্ততম ইবরাহিম খলিল রোডের মেসফালায় ছোট পরিসরে সুপার মার্কেট পরিচালনা করেন তিনি।
নিজের এলাকাকে ভালোবেসে দোকানের নাম দিয়েছেন ‘লোহাগাড়া সুপারমার্কেট।’ চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার বড়হাতিয়া গ্রামের মরহুম হাজী আজম উল্লাহর ছেলে কুদ্দুস। দুই ভাই চারবোনের মধ্যে সবার বড়। সৌদি আরবে একটি লন্ড্রি আর টুকটাক হোটেল ব্যবসা করে আজ তিনি সুপার মার্কেটের মালিক। চার বছর আগেও বেশ ভালো ছিলেন। এখন টিকে থাকাই চ্যালেঞ্জ।
দিন যাচ্ছে ভিনদেশীদের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় কঠোর নিয়মকানুন আরোপ করছে সৌদি সরকার। বিভিন্ন খাতে সৌদিকরণের কারণে এখন প্রবাসী উদ্যোক্তাদের টিকে থাকাই কঠিন। আইনের কঠোর অনুশাসন আর কড়াকড়ি। সেইসঙ্গে আয়ের সাথে ব্যয়ের সামঞ্জস্যতা হারিয়ে যাওয়ায় অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে দেশে ফিরছেন। যারা আছেন, তারা মাটি কামড়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।
আবদুল কুদ্দুস তাদের দলে। দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের হাত ধরে সৌদি আরব অগ্রসর হচ্ছে ভিশন ২০৩০ অর্জনে। এর অংশ হিসেবে ‘সৌদিকরণ ২০২০’ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছে এখানকার সরকার।
উদ্দেশ্য, গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোতে স্থানীয়দের নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে বেকার সমস্যা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসা। মূলতঃ প্রবাসীরা যেসব খাতে সাফল্য এনেছে সেসব খাতে তাদের হটিয়ে স্থানীয়দের স্থলাভিষিক্ত করা হচ্ছে। যে কারণে আগামী ২০২০ সালের পর সৌদি সরকারের পাবলিক সেক্টরে কাজের সুযোগ আরো সঙ্কুচিত হয়ে আসবে প্রবাসী শ্রমিকদের।
ইতোমধ্যে সৌদি প্রবাসীদের জন্য ঘড়ি, অপটিক্যাল স্টোরেজ, ঔষধ, বৈদ্যুতিক ও ইলেকট্রনিক, প্রাইভেট কারের খুচরা যন্ত্রাংশ, ভবন নির্মাণের উপাদান, কার্পেট, অটোমোবাইল এবং মোবাইলের, বাড়ির আসবাবপত্র ও অফিসের জন্য তৈরিকৃত ফার্নিচারের, প্রস্তুতকৃত গার্মেন্টস পোশাক, শিশু ও পুরুষদের পোশাক, গৃহস্থলি ও চকলেক বা মিষ্টির দোকান পরিচালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সৌদি সরকার।
এসব খাতের প্রবাসী উদ্যোক্তারা পুঁজি খুইয়ে এখন দেশে ফিরছেন। তার ওপর উচ্চহারে আকামা, কফিলের ফি’র সঙ্গে দিনকে দিন দোকান ভাড়া, বিভিন্ন সেবা সংস্থার ফি বেড়ে যাওয়ায় মুসিবতে আবদুল কুদ্দুসের মতো ব্যবসায়ীরা।
তিনি জানান, এখানে মূলত সাত মাস ব্যবসা হয়। অবশিষ্ট সময়গুলোতে লোকসান দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে হয়। এর মধ্যে নতুন নিয়ম করেছে, প্রতি ১০ জন কর্মীর বিপরীতে ৭ জন সৌদিকে রাখতে হবে। মোটা অংকের বেতনে সৌদি রেখে মূলত লোকসানের পাল্লাই আরও ভারী হবে।
তিনি বলেন, সৌদির অর্থনীতিকে আবার ঘুরে দাঁড় করানোর লক্ষ্যে যে ভিশন হাতে নেওয়া হয়েছে। তা বাস্তবায়নে নেওয়া কড়া পদক্ষেপে মূলত আমাদের মতো প্রবাসীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যে কারণে নিরুপায় হয়ে সৌদি আরব ছাড়তে হচ্ছে প্রবাসীদের।