তখনো পশ্চিমবঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আম্পান প্রবেশ করেনি। তার আগেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সাথে পরিযায়ী শ্রমিকদের পশ্চিমবঙ্গে ফেরানোর চুক্তি হয়েছিল। এরপরই পশ্চিমবঙ্গকে আম্পান লন্ডভন্ড করে দেয়। তবে পূর্বনির্ধারিত চুক্তি অনুযায়ী মহারাষ্ট্র থেকে ১৪টি ট্রেনে ৫০ হাজার পরিযায়ী শ্রমিক পশ্চিমবঙ্গে ফিরে আসছে। তার জেরেই রাজ্যের ছেয়ে যাচ্ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, ভারতের মহারাষ্ট্র সবচেয়ে করোনা কবলিত অঞ্চল। সেই অঞ্চল থেকে ৫০ হাজার শ্রমিক পশ্চিমবঙ্গে ফিরলে করোনা মহামারির রূপ নিতে পারে এমনটাই জানিয়েছিলেন রাজ্যের বিশেষজ্ঞরা। এমনকি রাজ্য সরকারের ভুল পদক্ষেপে মহারাষ্ট্রকে ছাপিয়ে যেতে পারে পশ্চিমবঙ্গ। বিশেষজ্ঞদের সেই আশঙ্কা সত্যে পরিণত হতে চলেছে।
ভিনরাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিক আসার পর পশ্চিমবঙ্গে করোনা সংক্রমণ যেমন দ্রুতহারে বাড়ছে তেমনি কন্টেইনমেন্ট জোনের সংখ্যাও গত কয়েক দিনে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে।
আগে যেখানে ১৪টি জেলার মধ্যে কন্টেইনমেন্ট জোন সীমাবদ্ধ ছিল, এখন তা বেড়ে ১৯টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
এর জেরে অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত বুধবার (২৭ মে) বলেছিলেন, 'করোনা আমরা কন্ট্রোল করে ফেলেছিলাম, কিন্তু পরিকল্পনা ছাড়াই লক্ষ লক্ষ পরিযায়ী শ্রমিক আসার ফলে যে সব জেলায় সংক্রমণ ছিলো না, সেখানেও এখন তা দেখা দিচ্ছে।'
ইতিমধ্যে ট্রেন, বাস, গাড়ি ও নিজের উদ্যোগে ভিন রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিক, পর্যটক এবং বহু মানুষ আসাতে শুরু করেছে। ফলে করোনা সংক্রমণ পশ্চিমবঙ্গে দ্রুতহারে বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ পর্যন্ত রাজ্যে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ অন্য রাজ্য থেকে ফিরে এসেছেন, আরও বহু মানুষ আসার অপেক্ষায়। এভাবে যদি মহারাষ্ট্র, গুজরাট, দিল্লি প্রভৃতি করোনা সংক্রমিত এলাকা থেকে লাখ লাখ মানুষ আসেন, তাহলে রাজ্যে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে বলে উদ্বিগ্ন মমতা। আর রাজ্যে সবথেকে বেশি প্রভাব পড়েছে কলকাতায়।
গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে করোনা ধরা পড়েছে ৩৪৪ জনের। মারা গেছেন ৬ জন। সব মিলিয়ে মোট সক্রিয় ও আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে বেড়ে হয়েছে ৪৬৪৬ ও ২৫৭৩ জন। মৃত্যু হয়েছে ২১৭ জনের। এখনো পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৫৭৮ জন।
এছাড়া ভারতের নিরিখে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬৫ হাজার ৭৯৯ জন। মৃত্যু হয়েছে ৪ হাজার ৭ জনের বেশি।