ব্যাপকভাবে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় যখন চীনের উহান শহরের অধিকাংশ মানুষ নিজেদের বাড়িতে অবস্থান করছে, তখন লিন ওয়েনহুয়া ফাঁকা রাস্তায় তার গাড়ি নিয়ে ছুটে চলেছেন নিজের দায়িত্ব পালনের জন্য।
লিন ওয়েনহুয়া। পেশায় চলচ্চিত্রকার। ৩৮ বছর বয়সী লিন সেদিনগুলোর কথা মনে করে বলেন, কখনও কখনও কোনো ডাক্তার হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। একবার তো এক পোষা প্রাণিওয়ালা তাকে বন্ধুর বাড়ি পৌঁছে দিতে বলেছিল।
বাকি সময়টা তিনি ফ্রি’তে পাওয়া ক্যালেট্রার বক্সে করে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী অথবা তাদের আত্মীয়দের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। ক্যালেট্রা সাধারণত এইচআইভি এবং এইডস রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
সেখানকার অধিবাসীরা বলেন, চীনে করোনার প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠার পর বিশেষ করে জানুয়ারির শেষ থেকে ফেব্রুয়ারির শুরুর সময়টায় উহানে সরবরাহ চালু রাখতে লিনের মত স্বেচ্ছাসেবীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সেসময় ১১ মিলিয়ন মানুষের এই শহরে আক্রান্তের ক্রমবর্ধমান সংখ্যা সরকার এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাকে চাপের মুখে ফেলে দিয়েছিল।
গণপরিবহন, ট্যাক্সি এবং ভাড়া গাড়ি বন্ধ করে দেওয়ায় হাজারও স্বেচ্ছাসেবী চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অন্যান্য পণ্য পৌঁছে দিয়েছে এবং দূর্গতদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নিয়েছে।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে লিন জানান, ২৩ জানুয়ারি থেকে তিনি প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার গাড়ি চালিয়েছেন।
লিন তার প্রতিদিনের যাতায়াতের এবং লকডাউন করা উহানের জীবনের ভিডিও করেছেন এবং টুইটারের মতো উইবোতে সেগুলো প্রতিদিনকার ডায়েরি লেখার মতো করে পোস্ট করেছেন। উইবোতে তার প্রায় ৫ মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে।
ওষুধ সরবরাহকারী হিসেবে তার এই স্বেচ্ছাসেবা তখন থেকে শুরু হয় যখন এক বন্ধু তাকে ব্রাদার স্কুইরেলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তিনি একজন এইচআইভি রোগী যিনি ক্যালেট্রা পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। জানুয়ারিতে চীন করোনাভাইরাসের লক্ষণ যুক্তদের চিকিৎসায় পরীক্ষামূলকভাবে এই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।
লিন আরও বলেন, ‘যখন আমি প্রথম ওষুধ পাঠানোর কথা শুনলাম তখন ইতস্ততবোধ করছিলাম। কিন্তু তারপর ভেবে দেখলাম, এই ওষুধগুলো রোগীদের কাছে বাঁচার আশা জাগায়। তাই আমি কাজটি করার সিদ্ধান্ত নেই।’
তিনি প্রায় ৩০ জনের কাছে ওষুধ পৌঁছে দিয়েছেন। সঙ্গরোধে থাকা অসুস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় উহান যখন ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে অস্থায়ীভাবে হাসপাতাল তৈরি করলো তখন তিনি তার এই কাজ বন্ধ করে দেন। গত কয়েক সপ্তাহে চীনের মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় তার আর কাজের প্রয়োজন হয়নি। তাই তিনি আবার বিজ্ঞাপনী সংস্থার জন্য ফ্রিল্যান্সার চলচ্চিত্রকার হিসেবে তার নিজের কাজে মন দিয়েছেন।
‘অবশেষে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। আমরা জয়ের আলো দেখতে পাচ্ছি’, হাসিমুখে একথা জানান দুর্যোগের দিনে মানুষের পাশে দাঁড়ানো এই স্বেচ্ছাসেবী।