তাপমাত্রা বাড়তে থাকায় এবং বাতাসের কারণে অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল তীব্র থেকে তীব্রতর আকার ধারণ করছে। এ কারণে দেশটির তিনটি রাজ্যকে সতর্ক করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বুধবার (১৯ নভেম্বর) সাউথ অস্ট্রেলিয়া অঙ্গরাজ্যে সর্বোচ্চ বিপজ্জনক সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যের বেশ কিছু অংশেও বৃহস্পতিবার একই মাত্রার সতর্কতা জারি করেছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে তাসমানিয়া অঙ্গরাজ্যেও বাড়ছে ঝুঁকি।
গতমাস থেকে শুরু হওয়া দাবানলে এ পর্যন্ত ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। দাবানলে নিউ সাউথ ওয়েলস এবং কুইন্সল্যান্ডে প্রায় পাঁচ শতাধিক বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। এই দাবানল খরা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই কি না সেই বিতর্ক সৃষ্টি করছে।
অস্ট্রেলিয়ার বৃহত্তম শহর সিডনিও দাবানলের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার এই ধোঁয়ায় শহরটিতে বেশ কয়েকজন অসুস্থ হয়েছেন।
বুধবার সাউথ অস্ট্রেলিয়ায় তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি পৌঁছানোর পর এবং ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার বেগের বাতাস বইতে শুরু করে। এতে করে অগ্নিশিখা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। পড়ে অঙ্গরাজ্যটিতে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি হয়। এছাড়া রাজ্যে প্রায় ১০ হাজার ঘর-বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের এক মুখপাত্র বিবিসিকে জানান, যদি নতুন করে কোনো অগ্নিকাণ্ডের সৃষ্টি হয়, তবে পরিস্থিতি আর নিয়ন্ত্রণে থাকবে না।
দেশটির আবহাওয়া ব্যুরো জানিয়েছে, এই রাজ্যে নয় মাস ধরে শুষ্ক অবস্থা বিরাজ করছে, যা একটি রেকর্ড। তারা বলছে, আগামী কয়েক মাসেও কোন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই।
ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্যের উত্তরে 'রেড কোড' সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এটিও ‘বিপর্যয়কর মাত্রার’ সমমানের।
স্থানীয় অগ্নিনির্বাপণ প্রধান স্টিভ ওয়ারিংটন দ্য এজ সংবাদপত্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলছেন, এখানে যদি অগ্নিকাণ্ড ঘটে, তবে এখানে টিকে থাকা সম্ভব নয়।
এদিকে তাসমানিয়া রাজ্যেও দাবানলের ভয়াবহ হুমকি রয়েছে। নিউ সাওথ ওয়েলস এবং কুইন্সল্যান্ডেও দাবানলের তীব্রতা বাড়ছে। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ায় গত এক সপ্তাহ ধরে বিপর্যয়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা এবং গবেষকরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার শুষ্ক মৌসুমের সময়কাল বৃদ্ধি পাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে।
দেশটির আবহাওয়া ব্যুরোর তথ্যমতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণেই খরার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটছে।
গত বছর দেশটিতে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা রেকর্ড ছাড়ায়। ২০১৭ এবং ২০১৮ সালের গ্রীষ্মে দেশটির ইতিহাসে যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করে।
এই দাবানল নিয়ন্ত্রণ না করতে পারায় দেশটির কনজারভেটিভ সরকার সমালোচিত হচ্ছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটি কার্বন নিঃসরণের প্যারিস চুক্তির অঙ্গীকার রক্ষা করতে পারেনি।