বেনামী এনজিওর আয়োজনে ইইউ এমপিদের জম্মু-কাশ্মীর সফর

ভারত, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-24 13:28:41

জম্মু-কাশ্মীরে বিদেশি প্রতিনিধি ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এমপিদের লোক দেখানো সফর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। একটি বেনামী এনজিও এ সফরের আয়োজন করেছে বলে জানিয়েছে ভারতের মিডিয়া।

এনজিওটি সরাসরি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দেখা করিয়ে দেওয়ার কথা বলে তাদের ভারতে নিয়ে আসে।

যেখানে ভারতের রাজনৈতিক নেতাদের জম্মু-কাশ্মীরে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বা বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে কীভাবে বিদেশি নাগরিকদের যেতে দেওয়া হচ্ছে, সে প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছে বিরোধীরা। এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) জম্মু ও কাশ্মীর পরিদর্শনে যান ইইউ নেতারা।

আগস্টে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা প্রত্যাহার এবং রাজ্যটিকে ভেঙে দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করার কেন্দ্রীয় ঘোষণার পর থেকে সেখানে এবারই প্রথম কোনও আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি দল সফর করল।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে দেখা করেন ইইউ নেতারা। বিশৃঙ্খলার শঙ্কায় ২৭ জনের মধ্যে চারজনকে বাদ দেওয়া হয় সফর থেকে।

ভারতের সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, সফরে যাওয়া ইইউ এমপিরা অতি ডানপন্থী দলের। এদের ২৭ জনের মধ্যে মাত্র তিনজন বামপন্থী বা স্বাধীন মনোভাবের। একটি বেনামি এনজিও এ সফরের আয়োজন করেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

কিন্তু তারা বলছে, নিজেদের ব্যক্তিগত ব্যবস্থায় ভারতে এসেছেন তারা। বিভিন্ন ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে, নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনীতে শ্রীনগরের ভেতর দিয়ে সফর করছে প্রতিনিধি দল। এ সফরে তারা পেছনে ফেলে যান চারটি জায়গা, যেখানে জম্মু-কাশ্মীরে আটক করে রাখা হয়েছে তিনজন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীসহ প্রায় ডজনখানেক রাজনৈতিক নেতাকে।

সেনাবাহিনীর সদর দফতরে নিয়ে যাওয়া হয় ইইউ নেতাদের, সেখানে তাদের নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়। বিজেপি সদস্যদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন তারা।

India
শ্রীনগরের ডাল লেক সফরে ইইউ এমপিরা

তবে অনেকের অভিযোগ, কোনও নামী নাগরিক সংগঠন, বাণিজ্য সংগঠন বা কাশ্মীরের মূলধারার কোনও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি তারা।

প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাদের দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে জানান ন্যাশনাল কনফারেন্সের দুই সাংসদ। সফর শেষে ডাল লেকে যান তারা। ডাল লেকে নৌকায় ভেসে বেড়ান এমপিরা।

শ্রীনগরের বিমানে ওঠার আগে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সকালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতা ন্যাথান গিল সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, বিদেশি প্রতিনিধি হিসেবে কাশ্মীরে যেতে পারা এবং সেখানে কী হচ্ছে, তা প্রথম দেখতে পারা, আমাদের জন্য দারুণ সৌভাগ্যের বিষয়।

সফরে না আসা একজন ইউরোপীয় সাংসদ টুইট করেন, এ প্রতিনিধি দল সরকারিভাবে ইউরোপীয় সংসদে বক্তব্য রাখেন না, তারা মূলত অতি দক্ষিণপন্থী সাংসদ। ‘সরকারি’ প্রতিনিধি হিসেবে তারা কাশ্মীরে যাননি। তারা ইউরোপীয় সংসদে বক্তব্য রাখেন না। কাশ্মীরে বন্ধ পরিস্থিতি শেষ হওয়া উচিত এবং সংবিধান অনুযায়ী আইনের শাসন ফেরানো উচিত।

২৭ জনের প্রতিনিধি দলের বাদ পড়া চারজনের একজন এমপি ক্রিস ডেভিস। এ লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক এমপি অভিযোগ করেন, অবাধ কাশ্মীরের পক্ষে প্রশ্ন করায় তাকে সফর থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে কোনও রকম নিরাপত্তা ছাড়াই ঘুরতে চেয়েছিলেন তিনি এবং যে কারও সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন, সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে নিজেই ধারণা নিতে চেয়েছিলেন।

india
সেনাবাহিনীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ইইউ এমপিদের

ক্রিস ডেভিস বলেন, আমি মোদি সরকারের জনসংযোগের কাজ করতে ইচ্ছুক ছিলাম না এবং সব ঠিক আছে, এ রকম ভাব দেখাতেও ইচ্ছুক ছিলাম না। এটা পরিষ্কার যে কাশ্মীরে গণতান্ত্রিক নীতি ধ্বংস করা হয়েছে এবং সারা বিশ্বের এটা দেখা প্রয়োজন।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে দেখা করেন এমপিরা। তারপরেই একটি বিবৃতিতে বলা হয়, জম্মু ও কাশ্মীরে তাদের সফর, জম্মু ও কাশ্মীর ও লাদাখের বৈচিত্র্যতা সম্পর্কে অবগত করবে, এছাড়া সেখানে সরকারের অগ্রাধিকার ও উন্নয়নের চিত্রও দেখতে পারবেন তারা।

এ সফরকে কটাক্ষ করেছেন রাহুল গান্ধিসহ বিরোধীরা। তিনি ট্যুইট করে বলেন, যেখানে ভারতীয় এমপিদের সেখানে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তাদের আটক করা হয়েছে, সেখানে ইউরোপের এমপিদের সফর, খুব বড় ভুল।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর