ক্ষমতা হারিয়ে পালিয়ে যাওয়া শাসকদের ফিরে আসার রেকর্ড খুব কম হলেও সিরিয়ায় ঘটছে নাটকীয় ঘটনা। ক্ষমতাচ্যুতির আড়াই সপ্তাহেই সিরিয়ায় আসাদপন্থীরা প্রত্যাঘাত করেছে। তাদের আক্রমণে নিহত হয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ১৪ নিরাপত্তা কর্মকর্তা। গত ৮ ডিসেম্বর আসাদ সরকারকে উৎখাত করে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কো দখল করেছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী, যারা এখন আসাদ অনুগত সৈন্যদলের পাল্টা হামলার শিকার।
যুদ্ধে যখন জ্বলছে সিরিয়া তখন ক্ষমতাচ্যুত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা আল-আসাদের শরীরে আবারও রক্তের ক্যানসার (লিউকেমিয়া) ফিরে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ। রাশিয়া থেকে এমনই সঙ্কুল পারিবারিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছে আসাদের অনুগত বাহিনী।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্ষমতা হারানোর আড়াই সপ্তাহের মধ্যেই প্রত্যাঘাতের ঘটনা বিরল। যে আঘাতে নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তত ১৪ জন নিরাপত্তা কর্মকর্তার মৃত্যু হয়েছে আর গুরুতর আহত হয়েছে অন্তত ১০। সে দেশের বিদ্রোহী জোট সরকারের তরফে বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) এ কথা জানানো হয়েছে।
বিবিসি প্রকাশিত খবর জানাচ্ছে, ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর টারতুসের কাছে মঙ্গলবার থেকে দু’তরফের সংঘর্ষ শুরু হয়। সেখানেই আসাদ বাহিনীর হামলায় ১৪ জন নিরাপত্তা আধিকারিক নিহত হন। মৃত্যু হয় আসাদ-অনুগত তিন সেনারও। সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, দামপস্কোর কুখ্যাত সেদনায়া কারাগারে বন্দি নির্যাতনের ঘটনায় জড়িত আসাদ সরকারের এক কর্মকর্তাকে গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে টারতুসে অভিযান চালানো হয়েছিল। তখনই দু’পক্ষের সংঘর্ষ শুরু হয়।
গত ৮ ডিসেম্বর আসাদ সরকারকে উৎখাত করে সিরিয়ার রাজধানী দখল করেছিল বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এবং তাদের সহযোগী ‘জইশ আল-ইজ্জা’র যৌথবাহিনী। ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট প্রাণ বাঁচাতে সিরিয়া ছেড়ে রাশিয়ায় চলে যান। তবে এখনও পশ্চিমে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী এলাকার কিছু অংশ প্রাক্তন সরকারের অনুগত সেনা ও মিলিশিয়া বাহিনীর দখলে রয়েছে। রাজধানী দখল করলেও দেশের অধিকাংশ এলাকা এখনও বিদ্রোহীদের নাগালের বাইরে রয়েছে। সেখানে আসাদের অনুগত সেনাদলের শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে।
আসাদের বাহিনী মূলত আলাভি শিয়া সম্প্রদায়ের সদস্যদের নিয়ে গঠিত, যারা নিজ সম্প্রদায়ের নাগরিকদের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে শামিল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে। ফলে রক্তাক্ত ও যুদ্ধপীড়িত সিরিয়ায় বিদ্রোহী সুন্নি ও কুর্দি পক্ষের পাশাপাশি আলাভি শিয়া সম্প্রদায়ও সশস্ত্র অবস্থান নেওয়ায় পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষকদের মতে, যদিও ক্ষমতা থেকে পালিয়ে যাওয়া শাসকদের ফের ক্ষমতায় ফিরে আসার রেকর্ড নেই বললেই চলে, তথাপি আসাদপন্থীদের সংঘবদ্ধ তৎপরতার কারণে সিরিয়ায় আসাদের প্রত্যাবর্তনের ক্ষীণ সম্ভাননা দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, সিরিয়ায় দীর্ঘ দিন শাসন করেছে আসাদ পরিবার। বাশারের পিতা হাফিজ় আল-আসাদ টানা ৩০ বছর সিরিয়া শাসন করেছিলেন। বাশার এবং তাঁর বাবা হাফিজ়, দু’জনে মিলে ৫০ বছরের বেশি সময় সিরিয়া শাসন করেছেন। ২০০০ সালে হাফিজ়ের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন বাশার। টানা ২৪ বছর শাসন করার পর গত ৮ ডিসেম্বর সিরিয়ায় তাঁর শাসনের পতন হয়।