শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টের ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে ২০৪ জন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। এশিয়ার অন্যতম শীষ ধনী দেশ দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনৈতিক অবস্থা এতো দ্রুত পরিবর্তন হবে কেউ ভাবতেও পারেনি।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে প্রস্তাব পাস হয়ে যাওয়ায় ইওলকে তার দায়িত্ব থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে যত দিন না তা কার্যকর হচ্ছে, তত দিন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব সামলাবেন প্রধানমন্ত্রী হান ডাক-সু। এখন ইউনের ভাগ্য নির্ভর করছে সাংবিধানিক আদালতের রায়ের ওপর। এই আদালতই স্থির করবে ইউনের অপসারণ বহাল থাকবে কি না।
দক্ষিণ কোরিয়ার নিয়ম অনুযায়ী, পার্লামেন্টে অভিশংসনের ছয় মাসের মধ্যে এই বিষয়ে সাংবিধানিক আদালতের রায় জানাতে হবে যে প্রেসিডেন্ট ইউন প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকবেন নাকি বরখাস্ত হবেন।
সাংবিধানিক আদালত যদি অভিশংসনের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে, তাহলে সেই রায় দেওয়ার পর থেকে পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে।
দেশটির সংবাদ মাধ্যম বলছে, প্রেসিডেন্ট ইউনের বিষয়ে আলোচনা করতে আগামী সোমবার সাংবিধানিক আদালতের বসার কথা রয়েছে।
গত ৩ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার সময় ইওল জানান, তিনি সারা দেশে সামরিক আইন বলবৎ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে হল তাকে, তার ব্যাখ্যাও করেছিলেন ইওল। তিনি জানান, উত্তর কোরিয়ার একনায়ক কিম জং উনের মদতে ক্ষমতা দখলের ছক কষছে বিরোধীরা। তার ব্যাখ্যা, দেশকে কমিউনিস্ট আগ্রাসন থেকে সুরক্ষা দিতে এবং রাষ্ট্রবিরোধী শক্তি নির্মূল করতে দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারি করছেন। এই আইন বাস্তবায়িত করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল পার্ক আন-সু-কে। সামরিক আইন জারির মধ্যে দিয়ে দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চেয়েছিলেন ইওল।
প্রেসিডেন্টের ভাষণের পরই দক্ষিণ কোরিয়ায় শুরু হয় বিক্ষোভ। বিরোধীরা তো বটেই, শাসকদলের অনেকেই সামরিক আইনের বিরুদ্ধে পথে নামেন। পার্লামেন্টের বিরোধী সদস্যেরা ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভবনে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। হাজার হাজার মানুষের জমায়েতে অশান্ত হয়ে ওঠে অ্যাসেম্বলি ভবন চত্বর। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ। পরে পরিস্থিতি এতটাই খারাপ দিকে গড়ায় যে, বাধ্য হয়েই সামরিক আইন প্রত্যাহার করেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট। তবে প্রত্যাহার করার পরেও ইওলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ কমেনি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রেসিডেন্টের বরখাস্তের দাবি ওঠে। শনিবার পার্লামেন্টে যখন ভোটাভুটি প্রক্রিয়া চলছে, তখন বাইরে বহু মানুষ জমায়েত হয়েছিলেন। পোস্টার হাতে বিক্ষোভ দেখান। প্রেসিডেন্টের বরখাস্তের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন সবাই।
প্রেসিডেন্ট ইউন এক বিবৃতিতে বলেছেন, তিনি সাময়িকভাবে সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রাখছেন। সাময়িকভাবে আমার যাত্রা বন্ধ রাখছি। তবে গত আড়াই বছর ধরে যে পথে আমি হেঁটে আসছি, সেই যাত্রা থামবে না, বিবৃতিতে বলেন তিনি।
মি. ইউনের দল পিপলস পাওয়ার পার্টির প্রধান হান ডং-হোন বলেছেন, তিনি ভোটের ফলাফল মেনে নিয়েছেন এবং এটাকে খুবই গুরুত্বের সাথে দেখছেন।পার্লামেন্টে ভোটাভুটি হওয়ার আগে তিনি প্রেসিডেন্টকে রাজি করানোর চেষ্টা করেছিলেন যেন তিনি ভোটের আগেই পদত্যাগ করেন।
তিনি বলেন, তার দল 'ভুল সংশোধনের পক্ষে এবং সংবিধান ও গণতন্ত্রের সুরক্ষায়' কাজ করে যাবে।
এর মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ইউন ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মতো অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে।