সিরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে শাসন করে আসা বাশার আল-আসাদ ইসলামপন্থী বিদ্রোহীদের কাছে পরাস্ত হয়ে ব্যক্তিগত বিমানে অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে পালিয়েছেন।
৫৪ বছরের শাসনের অবসানের পেছনে রয়েছে একটি বিশাল বিদ্রোহীগোষ্ঠী। যারা দিনের পর দিন সশস্ত্র সংগ্রামে মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছেছেন। সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছে ইসলামপন্থী সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)।
আর এই দলের প্রধন হলেন প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। তার দৃঢ় মনোবল আর কৌশলগত পদক্ষেপের কারনেই আজকের এই বিজয়।
কে এই জোলানি
দামেস্কের মাজেহে তে ১৯৮২ সালে জন্মগ্রহণ করেন ইরানের অভ্যুত্থানের মহানায়কের। শৈশব থেকেই তিনি যেমন মেধাবী ছিলেন, তেমনি সুচিন্তার অধিকারীও ছিলেন।
তবে আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির জীবনের পরিবর্তন ঘটে ৯/১১ এর সময়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ার হামলার ঘটনা থেকে তার মাঝে জিহাদি চিন্তাধারার উদ্ভব ঘটে।
এরপর ২০০৩ সালে আমেরিকার বিপক্ষে যুদ্ধ করার জন্য ইরাকে আল-কায়েদোর সঙ্গে যোগদানের জন্য সিরিয়া ছেড়ে চলে যান বিপ্লবের এই নায়ক। তবে ইরাকে তার দলের সঙ্গে খুব এক সুখকর সময় কাটাতে পারেননি তিনি। জোলানির উত্থানকে রোধ করার জন্য আবু মুসাব আল জারকাভির নেতৃত্বে সংগঠনটি তাকে ৫ বছর আটকে রাখে।
২০১১ সালে সিরিয়ায় আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ যখন ভেঙে যায় তখন তিনি সিরিয়ায় ফিরে আসেন। আসাদ পরিবারের দীর্ঘদিনের শাসনের অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে সিরিয়ায় প্রতিষ্ঠা করেন আল কায়েদার শাখা ‘আল নুসরা ফ্রন্ট’।
এরপর ২০১৩ সালে তিনি আবু বকর আল-বাগদাদির কাছে আনুগত্যের পরিবর্তে আল কায়েদার আইমান আল জাওয়াহিরির প্রতি আনুগত্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
জোলানির হার না মানা এই মনোভাবের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা তাকে নানা দিক থেকে বিশ্লেষণ করেছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপির বিশ্লেষকরা জোলানিকে একজন প্রাক্তন চরমপন্থী হিসাবে বর্ণনা করেছেন। যিনি তার লক্ষ্য অর্জনের জন্য আরও মধ্যপন্থী ভঙ্গি গ্রহণ করেছিলেন। তারা জোলানির পরিবর্তিত পোশাককে তার আদর্শে সংযম করার কৃতিত্ব দেয়।
রাজনৈতিক ইসলামের বিশেষজ্ঞ টমাস পিয়েরেট এএফপিকে বলেছেন, জোলানি একজন বাস্তববাদী মৌলবাদী। ২০১৪সালে তিনি তার উগ্রবাদের উচ্চতায় ছিলেন।
আসাদ পরিবারের বিরুদ্ধে কৌশলগত পদক্ষেপ
দীর্ঘদিন জোলানি ছায়া হিসেবে কাজ করেছেন। পেছন থেখে সশস্ত্র সংগ্রাম পরিচালনা করছিলেন। তবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরই তিনি বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হোন।
২০১৫ জোলানি আসাদকে পরাজিত করার আহ্বান জানিয়েছিল পশ্চিমাদের। তৎকালীন সময়ে তিনি আলাউিইট সংখ্যালঘুদের রক্ষা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে পশ্চিম দেশগুলোর টার্গেট থেকে তার সংগঠন আল নুসরা ফ্রন্টকে রক্ষা করতে আল কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
তার এই সিদ্ধান্তের জন্য এএফপির এক বিশ্লেষক বলেছিলেন, জোলানি এই পদক্ষেপের মাধ্যমে একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তার পথ নির্ধারণের সূচনা করেছেন।
এরপর ২০১৭ সালে জোলানি এইচটিএস ও উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ার অন্যান্য ইসলামপন্থী গোষ্ঠরি সঙ্গে একীভূতি হয়ে ইদলিব প্রদেমের বিস্তীর্ণ এলাকা নিজেদের আয়ত্ত্বে নিয়ে যান।
আলেপ্পো প্রদেশে একটি বিশাল সংখ্যক খ্রিস্টান জনগোষ্টী বসবাস করে। জেলোনি এই সম্প্রদায়কে আশ্বস্ত করেছিলেন, তার 'শাসনের' অধীনে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। এছাড়া তিনি তার যোদ্ধাদেরকে আসাদের শাসন থেকে "মুক্ত" করা এলাকায় নিরাপত্তা রক্ষার আহ্বানও জানিয়েছিলেন।
এই পদক্ষেপের জন্য সেঞ্চুরি ইন্টারন্যাশনাল থিঙ্ক ট্যাঙ্কের ফেলো অ্যারন লুন্ড এএফপিকে বলেছেন, জোলানি এই মুহূর্তে ‘স্মার্ট জিনিস’ করছেন।
তিনি আরও বলেন, আপনার স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক আতঙ্ক যত কম হবে জেলোনি একজন বিষাক্ত জিহাদি চরমপন্থীর পরিবর্তে একজন দায়িত্বশীল অভিনেতা হিসেবে মনে হবে, তার কাজ তত সহজ হবে।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস