যুক্তরাষ্ট্রের ২৩৫ বছরের ইতিহাস পাল্টাতে পারলেন না কমলা হ্যারিসও। ম্যাজিক ফিগার ২৭০ ছুঁতে না পারায় হোয়াইট হাউসের ক্ষমতা পাওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে পড়েছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বলে সংবাদ প্রকাশ করেছে ফক্স নিউজ।
ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের সঙ্গে এক তরফা লড়াইয়ের পর ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ম্যাজিক সংখ্যা ২৭০টি নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্প।
ফক্স নিউজের তথ্য অনুযায়ী, ডোনাল্ড ট্রাম্প ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা ২৭৭টি । অপরদিকে ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস পেয়েছেন ২২৬টি ভোট। এখন পর্যন্ত বাকি আছে ৩৫টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট।
১৯১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ১৯তম সংশোধনী পাসের মাধ্যমে আমেরিকান নারীরা প্রথম ভোটের অধিকার পান। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে রিপাবলিনা মার্গারেট চেস স্মিথ প্রথম প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন। তিন দফায় যুক্তরাষ্ট্রের মেইন অঙ্গরাজ্যের সিনেটরের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। যেদিন মার্গারেট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দেন সেদিনই গণমাধ্যম সেটিকে নন সিরিয়াস বা তেমন গুরুতর নয় বলে সম্বোধন করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকায় নারীদের কাজ করার তেমন সুযোগ ছিল না। ষাটের দশকে নারী আন্দোলনের পর থেকে পরিস্থিতির পরিবর্তন শুরু হয়। তবে তখনও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে নারী উপস্থিতি বাড়েনি।
১৯৭৭ সালে করা এক মার্কিন জরিপ অনুযায়ী, ৫০ শতাংশ জনগণ মনে করেন নারীরা আবেগি সিদ্ধান্ত নেয় দেখে তাদের রাষ্ট্রপরিচালনায় না আসাই ভালো। এর পর মার্কিন রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান পোক্ত করতে মার্কিনি নারীদের লড়াই চলতে থাকে। বড় পরিবর্তন আসে ২০০৮ সালে। ওই বছর ডেমোক্রেটিক হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন। তিনি পুরুষদের মতো প্রচার চালাতে থাকেন। তখনও আমেরিকার গণমাধ্যম হিলারির সৌন্দর্য, গলার স্বর, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে থাকে। ওই বছর প্রাইমারিতে বারাক ওবামার কাছে হেরে যান হিলারি।
আট বছর পর ২০১৬ সালে হিলারি আগের মতো আর ভুল করেননি। এবার তিনি নারী হয়েই প্রচার চালাতে শুরু করেন। ওই বছর তিনি প্রাইমারিতে বার্নি স্যান্ডার্সকে হারিয়ে হোয়াইট হাউসের ক্ষমতা পাওয়ার চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পান।
২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম নারী প্রার্থী হন হিলারি ক্লিনটন। সাবেক ফার্স্ট লেডি ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দক্ষতার পরিচয় দেওয়ায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন তিনি। ৩০ লাখের বেশি পপুলার ভোট পেয়েও ইলেকটোরাল কলেজের নিয়মে পরাজিত হন ট্রাম্পের কাছে। দেখা যায়, ট্রাম্প পুরুষ ভোট পান ৫২ শতাংশ আর হিলারি পান ৪১ শতাংশ। এবারও জরিপে দেখা যায়, পুরুষ ভোটারদের কাছে কমলার চেয়ে ট্রাম্পই জনপ্রিয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এখনও নারীর নেতৃত্ব মেনে নেওয়ার অবস্থায় আসেনি আমেরিকার জনগণ।
যুক্তরাষ্ট্রের ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেনের রানিং মেট ছিলেন কমলা হ্যারিস। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে নিয়ম অনুযায়ী ভাইস প্রেসিডেন্ট হন কমলা। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে কমলা একসঙ্গে দুটি ইতিহাস গড়েন। তার আগে আর কোনো নারী যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন না। কোনো কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষও তার আগে এই পদে ছিলেন না।
ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ড শহরে ১৯৬৪ সালের ২০ অক্টোবর কমলা দেবী হ্যারিসের জন্ম হয়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মা শ্যামলা গোপালন ছিলেন পেশায় ক্যানসার গবেষক। পাশাপাশি তিনি নাগরিক অধিকার আন্দোলনেও সক্রিয় ছিলেন। জ্যামাইকান-আমেরিকান অর্থনীতিবিদ বাবা ডোনাল্ড জ্যাসপার হ্যারিস ছিলেন অর্থনীতিবিদ।
কমলার এবার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়াটা বেশ নাটকীয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুটি দল ডেমোক্রেটিক পার্টি ও রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার পথটা বেশ দীর্ঘ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। প্রার্থিতা চূড়ান্ত করতে দল দুটির প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের দলীয় বাছাই নির্বাচনে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সময় লেগে যায় ১২ থেকে ১৮ মাস।
ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে অনেকটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হন বাইডেন। কমলা তাকেই সমর্থন দেন। কিন্তু প্রথম সরাসরি টেলিভিশন বিতর্কে ট্রাম্পের কাছে ব্যর্থতার পর চাপের মুখে গত জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বাইডেন। আর নিজ দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে কমলার নাম প্রস্তাব করেন তিনি। সেই হিসেবে মাত্র চার মাস প্রচারণার সময় পেয়েছেন কমলা। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে আর কোনো প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর এত কম সময় প্রচারণা করার নজির নেই।