সম্পর্কে টানাপোড়েন, কানাডা থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করছে ভারত

, আন্তর্জাতিক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তা২৪.কম | 2024-10-15 06:18:10

খালিস্তানি স্বাধীনতাকামী ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক হরদীপ সিং নিজ্জার হত্যাকাণ্ডে ভারতের গোয়েন্দাদের জড়িত থাকার বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। খবর এএফপির।

এই পরিস্থিতিতে অটোয়ায় নিযুক্ত হাইকমিশনারকে প্রত্যাহার করছে নয়াদিল্লি। যা দুই দেশের ভঙ্গুর সম্পর্কে বড় ধরনের উত্তেজনা তৈরি করেছে।

নিজ্জর হত্যায় হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার বার্মাসহ সেখানকার কয়েকজন জড়িত বলে কানাডা অভিযোগ তোলায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নেয়। খবর এনডিটিভি।

সোমবার (১৪ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘‘আমাদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বর্তমান কানাডীয় সরকারের প্রতিশ্রুতিতে আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না।’’

‘‘এমন পরিস্থিতিতে হাইকমিশনার এবং অন্যান্য কূটনীতিক ও কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার।’’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বলেছে, উগ্রপন্থা ও সহিংসতার পরিবেশে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকারের পদক্ষেপ তাদের (হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার বার্মাসহ কূটনীতিকদের) নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। সেজন্য তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে কানাডার সরকারের প্রতিশ্রুতির ওপর আমাদের ভরসা নেই। তাই, হাইকমিশনারসহ টার্গেট হওয়া অন্য কূটনীতিক ও কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। ’

এর আগে, কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে গত ১৮ জুন একটি শিখ মন্দিরের সামনে নিজের গাড়িতে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে (৪৫) গুলি করে হত্যা করা হয়। ভ্যানকুভারের ৩০ কিলোমিটার দূরের ওই মন্দিরের পাশে ব্যস্ত গাড়ি পার্কিং এলাকায় দুই মুখোশপরা লোক তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে শিখ ধর্মাবলম্বীদের স্বাধীন ‘খালিস্তান’ রাষ্ট্র গঠনের যে তৎপরতা চলে আসছে, সেটার পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাতেন নিজ্জর।

আলাদা রাষ্ট্র গঠনে শিখরা ১৯৭০-এর দশকে সশস্ত্র লড়াই শুরু করে, যার পরিণতিতে হাজারো প্রাণ ঝরে। নয়াদিল্লির অ্যাকশনের কারণে ভারতের মাটিতে এই তৎপরতা প্রশমিত হলেও কানাডা ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতে শিখদের স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে প্রচারণা চলে আসছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।

শিখদের স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য প্রচারণা চালানো নিজ্জরকে ভারত ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষণা করে। তার অনুসারীদের অভিযোগ, হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার আগে নিজের কার্যক্রমের জন্য প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছিলেন নিজ্জর।

ওই সময় এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারত সরকারকে অভিযুক্ত করে জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘কানাডিয়ান সরকারের সব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে। ’ তখন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উল্টো কানাডাকে অভিযুক্ত করে বলে, ‘ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি খালিস্তানি সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীদের দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে কানাডা। ’

পাল্টাপাল্টি সেই ঘটনা একটাসময় থেমে গেলেও সম্প্রতি কানাডার একটি পদক্ষেপে দিল্লি-অটোয়া সম্পর্কে আবারও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

রোববার (১৩ অক্টোবর) কানাডার কূটনৈতিক চ্যানেল থেকে বলা হয়, নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের হাইকমিশনার ও তার সহযোগী কয়েকজন কূটনীতিক ‘পারসন অব ইন্টারেস্ট’ (সন্দেহভাজন বা নজরদারিতে থাকা ব্যক্তি) হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।

এর অর্থ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে হাইকমিশনারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে কানাডার সরকার।

বিষয়টি জেনে সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়। তাদের তরফ থেকে বলা হয়, এ ধরনের ‘উটকো অভিযোগ’ কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করছে ভারত।

ভারত সরকার বলেছে, কানাডার এমন অভিযোগ ট্রুডোর ‘রাজনৈতিক এজেন্ডার’ অংশ। নির্দিষ্ট কোনো তথ্য ছাড়া যেকোনো পদক্ষেপের ব্যাপারেও অটোয়াকে সতর্ক করেছে দিল্লি।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নয়াদিল্লিতে কানাডার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকেও তলব করেছে। পরে দিল্লিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকের পর তিনি বলেছেন, অটোয়া তার দাবির পক্ষে ভারতকে প্রমাণ দিয়েছে।

‘‘কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সাথে ভারত সরকারের এজেন্টের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে দিল্লিকে বিশ্বাসযোগ্য, অকাট্য প্রমাণ দিয়েছে অটোয়া,’’ বলেন কানাডীয় চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স স্টুয়ার্ট হুইলার।

এ সম্পর্কিত আরও খবর