সেনেগালে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যেই আসন্ন ২৫ ফেব্রুয়ারির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন স্থগিত করেছেন রাষ্ট্রপতি ম্যাকি সল। বিরোধী সমর্থকরা সেনেগালে গণতন্ত্র রক্ষা এবং যথাসময়ে নির্বাচনের দাবিতে রাজধানী ডাকারে সমাবেশ করেন।
এই সমাবেশে ম্যাকি সলের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করায় পুলিশ কাঁদুনে গ্যাস ছুঁড়ে এবং বহু নেতাকর্মী গ্রেফতার-আটকের ঘটনা ঘটে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী আমিনাতা তোরে, সেইসাথে স্থগিত ভোটের অন্যতম প্রার্থী আন্তা বাবাকার এনগম।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নেতৃস্থানীয় বিরোধী ব্যক্তিত্ব এবং প্রার্থীরা শনিবারের সেই ভোট বিলম্বিত করার ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেন এবং বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। এ সময় বেসরকারি ও সরকারি সকল টেলিভিশন চ্যানেল ও সরাসরি সম্প্রচার মাধ্যমের সিগন্যাল কেটে দেওয়া হয়। নিউইয়র্ক ভিত্তিক অলাভজনক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি পোস্টে এই পদক্ষেপের নিন্দা করেছে। সাংবাদিকদের কোনো বাধা ছাড়াই কাজ করতে পারার নিশ্চিয়তা দেওয়ার জন্য সেনেগালি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছে সংস্থাটি।
এর আগে শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক টেলিভিশন ভাষণে সেনেগালে অনুষ্ঠিতব্য ২৫ ফেব্রুয়ারির প্রেসিডেন্ট নির্বাচন স্থগিত করেছেন দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাকাই সল। তবে কত দিন নির্বাচন স্থগিত থাকবে, তা সুনির্দিষ্ট করে উল্লেখ করেননি তিনি।
কিছু বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের সংগঠনগুলো একে ‘ইনস্টিটিউশনাল ক্যু’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। একটি বিরোধী জোট প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার ঘোষণাও দিয়েছিল।
উল্লেখ্য জানুয়ারিতে সেনেগালের সাংবিধানিক পরিষদ নির্বাচনী তালিকা থেকে কয়েক বিশিষ্ট প্রতিদ্বন্দ্বীকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এতে নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়। শুক্রবার বিরোধী দল সেনেগালিজ ডেমোক্রেটিক পার্টির (পিডিএস) পক্ষ থেকে নির্বাচন স্থগিতের আবেদন জানানো হয়। কারণ, ওই দলের প্রার্থী করিম ওয়াদেকেও নির্বাচনী তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেনেগালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য নতুন কোনো তারিখ ঘোষণা করেননি।
এর আগে সেনেগালে কখনও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন স্থগিত করার ঘটনা ঘটেনি। ডাকারের চিখ আন্তা দিওপ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক নোডিয়াক ফল বলেন, আগামী ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট মাকাই সলের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। তবে সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তাকেই প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
বিরোধী দলের প্রার্থী খলিফা সল বলেছেন, ২ এপ্রিলের পর তিনি আর মাকাই সলকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেনে নেবেন না। একে প্রাতিষ্ঠানিক ক্যু আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, এ ব্যাপারে আদালতের শরণাপন্ন হবেন। এক সংবাদ সম্মেলনে খলিফা সল বলেন, ‘আমাদের দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য আজ আমাদের বেদনা ও দুঃখ হচ্ছে।’