ভারতের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকেও ‘মহামারী আইনে’ নথিভুক্তের নির্দেশ

ভারত, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কলকাতা | 2023-08-30 18:19:56

করোনাভাইরাসের সাথে সাথে ভারতে নতুন দুঃস্বপ্ন হয়ে উঠেছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। ভারতে একের পর এক রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস সংক্রমিত রোগের সন্ধান মিলতে শুরু করায় ওই রোগকে মহামারী আইনে নথিভুক্ত করতে রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। রাজ্যগুলির সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের কোনো রোগী বা সন্দেহভাজন রোগী এলে সেসব রোগীদের সম্পূর্ণ বিবরণ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানাতে বলা হয়েছে।

দেখা যাচ্ছে, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষদের দুর্বল শরীরের ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস নামে একগুচ্ছ ছত্রাক বাসা বাঁধছে। সময় মতো সেই সংক্রমণের চিকিৎসা না হলে অস্ত্রোপচার করে বাদ দিতে হচ্ছে চোয়ালের হাঁড়, নাক, চোখ। এমনকি মারা যাচ্ছেন অনেকে। মহারাষ্ট্রের ওই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ১৫০০-র মত। সে রাজ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের কারণে মারা গিয়েছে প্রায় ৯০ জন। দিল্লিতে আক্রান্ত ১০০ জনের কাছাকাছি। লাগোয়া রাজ্য উত্তরপ্রদেশে লখনৌতে ৫০ জনের মতো আক্রান্ত। আসামে মারা গিয়েছে একজন। রাজস্থান ও তেলেঙ্গানার রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছেন।

পশ্চিমবঙ্গেও এই রোগে এখনো পর্যন্ত ৫ জন আক্রান্ত হবার খবর পাওয়া গিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়ে কলকাতায় মৃত্যু হয়েছে ৩২ বছরের এক মহিলার। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে। করোনার পাশাপাশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসেও আক্রান্ত হন তিনি। ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চিকিৎসাও চলছিল মহিলার। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। করোনা এবং ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের জেরে কলকাতায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা সামনে এলো। জানা গিয়েছে, ওই মহিলা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন।

ফলে গোটা ভারতে ওই রোগের সার্বিক পরিস্থিতির চিত্রটা বুঝতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ভারতের প্রতিটি রাজ্যকে চিঠি লিখে মহামারী আইনে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসকে নথিভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ব্যাখ্যা এর ফলে ভারতে এই মুহূর্তে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের কত রোগী রয়েছে সে বিষয়ে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। তার ভিত্তিতে আগামী দিনে এই রোগের বিরুদ্ধে চিকিৎসাপদ্ধতি এবং ওষুধ উৎপাদন তৈরিতে সুবিধা হবে সরকারের।

মূলত মাটি, গাছ, সার, পচে যাওয়া ফল -এসব থেকে ওই ছত্রাক জন্মায়। এর স্পোর বা রেনু হাওয়ায় ভাসে। মানুষের নাকে, লালারসেও এই রেনুর সন্ধান পাওয়া যায়। সুস্থ শরীরে নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় রুখে দিলেও করোনামুক্ত শরীর যখন দুর্বল থাকে তখন ওই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা মিউকরমাইকোসিস ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। নাক দিয়ে ঢুকে সাইনাসের সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। ক্রমে ফুসফুস ও মস্তিষ্কে ছড়িয়ে পড়লে মৃত্যুও পর্যন্ত ঘটাচ্ছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দাবি, ওই রোগের বাড়বাড়ন্তের পিছনে মূলত করোনা রোগীদের উপরে অতিমাত্রায় স্টেরয়েড প্রয়োগ। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চ -এর প্রধান বলরাম ভার্গব জানান, করোনা চিকিৎসায় একান্তই স্টেরয়েড নিতে হলে তার মাত্রার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। দেখা গেছে, স্টেরয়েড নেওয়া রোগীরাই সুস্থ হওয়ার পরেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন।

এর কারণ অতিমাত্রায় স্টেরয়েড প্রয়োগের শরীরে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বেড়ে যাচ্ছে শর্করা। ডায়াবেটিস আছে এমন করোনা সংক্রমিত রোগীদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়া করোনার কারণে অগ্ন্যাশয় যে প্রদাহজনিত সমস্যা দেখা যাচ্ছে তার জেরেও রক্তে শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর নিয়মিত রক্তের গ্লুকোজ বা ডায়াবেটিসের মাত্রার উপর নজর রাখতে হবে। এছাড়া কোভিড থেকে সেরে উঠছেন যারা, সুগার রয়েছে যাদের, ক্যান্সার বা অন্যকোনো জটিল রোগের কারণে যাদের শরীর দুবর্ল বা যাদের করোনা বাদেও অন্য রোগের কারনে স্টেরয়েড নিতে হয়, তাদের ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকছে।

তবে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের পাশাপাশি চিকিৎসকদের চিন্তা বাড়াচ্ছে হোয়াইট ফাঙ্গাসও। বিহারে এই ছত্রাকের চারজন সংক্রমিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে ফুসফুস, যকৃত, যৌনাঙ্গে দ্রুত সংক্রমণ ছড়ায় হোয়াইট ফাঙ্গাস। এটি নখের মাধ্যমে শরীরের নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসকদের আশঙ্কা ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের চেয়েও আগামীতে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে হোয়াইট ফাঙ্গাস।

এ সম্পর্কিত আরও খবর