আসছে ‘যশ’, প্রস্তুত হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ

ভারত, আন্তর্জাতিক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কলকাতা | 2023-08-30 22:10:35

আসছে ঘুর্ণিঝড় ‘যশ’। এখনও অব্দি ধারণা করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশা উপকূলের সীমান্তবর্তী কোথাও আছড়ে পড়তে পারে। অথবা আছড়ে পড়তে পারে শুধু পশ্চিমবঙ্গে। যদি শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গের দিকে ধেয়ে আসে তাহলে তা আছড়ে পড়তে পারে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলার সুন্দরবনে। আর দুই রাজ্যের সীমান্তে আছড়ে পড়লে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মেদিনীপুর জেলা। তবে সঠিক কোনদিকে অভিমুখ পাল্টাবে তা জানা যাবে ২১ তারিখে। তবে যে দিকেই আছড়ে পড়ুক পরবর্তীতে গতিপথ পরিবর্তন করে যাবে বাংলাদেশে। এখন অব্দি এরকমই ধারণা করা হচ্ছে।

ঠিক এক বছর আগে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের দাপটে তছনছ হয়ে গিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলা। সবচেয়ে বিধ্বস্ত হয়েছিল কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’এর ভ্রুকুটি রাজ্যের সামনে। আগামী ২৫-২৬ মে পশ্চিমবঙ্গ-ওড়িশার মধ্যে আছড়ে পড়বে ঘুর্ণিঝড় যশ। তাকে মাথায় রেখে যাবতীয় ব্যবস্থাপনা সেরে রাখতে চায় কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন। দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাম পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে প্রশাসন।

কলকাতা পৌরসভায় আপদকালীন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘুর্ণিঝড় যশ মোকাবিলার জন্য পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে। সেখানে পানি সরবরাহ, আলো, উদ্যান, নিকাশি- মূলত এই বিভাগগুলিকে যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রাখতে বলা হয়েছে। সাধারণত ১ জুন থেকেই বর্ষার প্রস্তুতি নেয় পৌরসভা। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের কথা মাথায় রেখে আগামীকাল অর্থাৎ ২১ তারিখ থেকেই সেই প্রস্তুতি নিতে চলেছেন তারা।

ঠিক হয়েছে, বিভিন্ন পাম্পিং স্টেশনে ২৪ ঘণ্টা কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হবে। ১৬০ জন শ্রমিককে নিয়ে ২৪ ঘণ্টার ডিউটি রোস্টার বানানো হচ্ছে। মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টি হলে তাঁরা রাস্তায় নেমে পানি নামানোর কাজে হাত লাগাবেন। প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে উদ্যান বিভাগকে। গাছ কাটা এবং গাছ সরানোর টিমকে। সেই সঙ্গে কয়েকটি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি বোরোতে থাকবে একটি করে গ্যাং। প্রতিটি বোরোর একেকটি গ্যাংয়ে সাধারণত ছয়জন করে থাকবে। সেই লোকবল বাড়ানোর কথা ভাবা হয়েছে।

কলকাতা পৌরসভার এক শীর্ষকর্তা বলেন, গতবারের মতো বিধ্বংসী ঝড় হলে তা সামলানোর চেষ্টা আমরা চালিয়ে যাব। সমস্যা হচ্ছে করোনা এবং লকডাউন। এই অবস্থায় প্রয়োজনে সুন্দরবন, ক্যানিং থেকে লোক আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। থাকছে গাছ তোলার ক্রেন ও ২২টি হাইড্রোলিক ল্যাডার। তবে ভারতে এসব বিষয়ে পারদর্শী ওড়িশা রাজ্য। কিন্তু সেখানেও যশ আছড়ে পড়তে পারে বলে ওই রাজ্যের প্রশাসন লোক পাঠাতে পারবে না বলে একপ্রকার জানিয়ে দিয়েছে।

অন্যদিকে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাকে ১০৫টি সাইক্লোন শেল্টার ২৩ তারিখের মধ্যে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে প্রত্যেক সাইক্লোন শেল্টারের সঙ্গে হাসপাতাল ট্যাগ করে রাখার কথা বলা হয়েছে। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার মজুত করে রাখার কথা বলা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘যশ’-এর অভিমুখ কোনদিকে, তা ২১ মে’র আগে জানা যাবে না। তবে প্রস্তুতির জন্য এক মুহূর্তও অপেক্ষা করতে চায় না প্রশাসন।

শুকনো খাবার ছাড়াও ত্রিপল, বিপর্যয় মোকাবিলার সরঞ্জাম, জামাকাপড় ইত্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে মজুতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যদি কিছু প্রয়োজন হয়, তাহলে দ্রুত তা জেলাশাসকের দফতরে জানাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ঠিক হয়েছে, ঝড়ের পূর্বাভাস জারি হওয়ার ৬ ঘণ্টার মধ্যে উপকূল এলাকা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যেতে হবে। নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সব স্তরে মাইক প্রচার করে মানুষকে সতর্ক করতে হবে। গাছ কাটার মেশিন, রাস্তা সাফ করার সরঞ্জাম ইত্যাদিও যেন প্রস্তুত করে রাখা হয়।

পাশাপাশি ঝড় উঠলেও সমস্ত বিদ্যুৎ সংযোগ যাতে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় সে কথাও সংশ্লিষ্ট অফিসারদের স্মরণ করে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ এবং ক্যানিংয়ে দুটি কুইক রেসপন্স টিম রাখার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। নদী বাঁধের কাজ যতটা সম্ভব শেষ করে ফেলার নির্দেশ সেচ বিভাগের কর্মকর্তাদের দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর