রাজ্য বিধানসভা (সংসদ) নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস আগে পশ্চিমবঙ্গে দলিত, সংখ্যালঘু, পশ্চাৎপদের নিয়ে নতুন দল ঘোষণা করেছেন ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কোনো মুসলিম ধর্মগুরুর রাজনৈতিক দল গঠনে ঘটনা এটিই প্রথম।
যদিও নবগঠিত 'ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট' নামে দলের কোনো পদে নেই পীরজাদা আব্বাস, তথাপি তিনিই দলের মূল কাণ্ডারী। তার ভাই নৌশাদ সিদ্দিকীকে তিনি দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করলেও নিজে কোনো পদ নেবেন না বা ভোটে লড়বেন না বলে জানিয়েছেন।
কিছুদিন আগেই ভারতের আলোচিত রাজনীতিবিদ, অল ইন্ডিয়া মসলিসে ইত্তেহাদুল মুসলেমিন বা 'মীম' প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসী হায়দারবাদ থেকে ফুরফুরা শরীফে এসে পীরজাদা আব্বাসের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে যান। তখনই অনুমান করা হয়েছিল যে রাজ্য রাজনীতিতে মেরুকরণ ঘটতে যাচ্ছে।
অবশেষে সব জল্পনার অবসান হলো বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায়। কলকাতা প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন দলের ঘোষণা দেন পীরজাদা আব্বাস। একই সঙ্গে তিনি দলের নাম ও দলীয় পতাকার আবরণ উন্মোচন করেন।
পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী নতুন দল ঘোষণা করে বলেন, মুসলিম - দলিত - আদিবাসীদের স্বার্থে কাজ করবে এই দল। আপাতত দুই চব্বিশ পরগনা, নদিয়া, হুগলি এবং নাদিয়াকে কেন্দ্র করে কাজ শুরু করবে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট। দলটি বিজেপি ছাড়া অন্য যেকোনো দলের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা করতে রাজি বলেও তিনি জানান।
ইতিমধ্যে কংগ্রেস ও আসাউদ্দিন ওয়েসির দল মিম এর সঙ্গে তাদের কথাবার্তা এগিয়েছে বলে জানান আব্বাস সিদ্দিকী। পঞ্চাশ থেকে ষাটটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট। আব্বাস সিদ্দিকী বলেন, 'আমি কিং হতে চাই না, কিংমেকার হবো।'
পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভার ২৯৪টি আসনের মধ্যে প্রায় ১০০ আসনে সংখ্যালঘু, দলিল, তফসিলি সম্প্রদায় ও পশ্চাৎপদ মানুষের ভোটের শতকরা হার ২৫ থেকে ৪৫ শতাংশ। একসময় একচেটিয়াভাবে এসব ভোট পেয়েছে কংগ্রেস। পরবর্তীতে বামপন্থীরা এসব ভোট পেয়েছিল। বর্তমানে ক্ষমতাসীন তৃণমূলের বিরাট বিজয়ের পেছনেও এসব ভোটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
রাজ্যের সংখ্যালঘু-দলিত অধ্যুষিত আসনগুলোর মধ্যে ৬০ টি আসনে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ৬ টিতে বিজেপি এবং ৮ টিতে কংগ্রেস। ফলে আব্বাস সিদ্দিকী সক্রিয় হলে রাজ্য রাজনীতির চিত্র অনেকাংশেই পাল্টে যাবে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
বিশ্লেষকরা আরো মনে করেন, সংখ্যালঘু ও দলিত সম্প্রদায়ের ভোট রাজ্য ক্ষমতায় আরোহণের জন্য অন্যতম নিয়ামক। এই গোষ্ঠী অতীতে নানা দলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিলেও তাদের ভাগ্যোন্নয়নে কেউ কিছুই করেনি। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চাকরি, শিক্ষা, আর্থিক ও সামাজিক দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গে মুসলিম, দলিত, আদিবাসী, তফসিলি সম্প্রদায় ও পশ্চাৎপদ শ্রেণির মানুষের ক্ষেত্রে উন্নয়নের বদলে আরো অবনতি হয়েছে। ফলে তারা অধিকার আদায়ের জন্য নিজেরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছেন।
পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকীও বলেছেন, 'স্বাধীনতার পর থেকে অনেক রাজনৈতিক দলই নিজেদেরকে ধর্মনিরপেক্ষ বলে দাবি করেছেন। কিন্তু সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি তফসিলি জাতি ও উপজাতিদের সমস্যা দূর করতে কেউ পারেনি। তাই আমরা মাঠে নেমেছি।'
আসাদউদ্দিন ওয়াইসীর 'মীম' ছাড়াও কংগ্রেস এবং বামপন্থীরা পীরজাদার নতুন দলকে স্বাগত জানিয়েছে। ক্ষমতাসীন তৃণমূল অবশ্য তাদের ভোট ব্যাঙ্কে হাত দেওয়ায় পীরজাদার প্রতি ক্ষুব্ধ। সামনে দিনগুলোতে পীরজাদার নতুন দলের সঙ্গে কার মিত্রতা ও শত্রুতা গড়ে, সেটাই দেখার বিষয়।