এশিয়ায় শীতের পদধ্বনি!

এশিয়া, আন্তর্জাতিক

ড. মাহফুজ পারভেজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 22:07:00

এশিয়া মহাদেশে শীতের পদধ্বনি শুনতে পাওয়া গেছে। সবচেয়ে আগে শীতের স্পর্শ পেয়েছে মহাদেশের সর্ব পূর্বের দেশ জাপান।

শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) জাপানের কয়েকটি শহরের তাপমাত্রা চট করে অনেক কমে গেছে। দ্বীপ শহর হোক্কাইডোর তাপমাত্রা পৌঁছে গেছে হিমাঙ্কের প্রায় কাছাকাছি। জাপানের হোক্কাইডোর তাপমাত্র রেকর্ড করা হয় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যদিও সেখানে ছিল রোদ্রের কিরণ। বৃষ্টি হয়েছে জাপানের রাজধানী টোকিও শহরে। আর তাতেই তাপমাত্রা নেমে যায় ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আরেক বর্ষণ সিক্ত শহর কফুসি ছিল ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।

জাপানে পিএইচডি গবেষণা কাজে অবস্থানকারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আজিজুল হাকিম বার্তা২৪.কমকে জানান, ‘স্থানীয় আবহাওয়ার পূর্বাভাসে তাপমাত্রা হ্রাসের আগাম ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। বৃক্ষবহুল টোকিও শহরের গাছগুলো শীতকে বরণ করতে ম্রিয়মান হয়ে যাচ্ছে। অতিদ্রুত তাপমাত্রা কমে শীতের ঘোরতর বরফাচ্ছন্ন পরিবেশের সৃষ্টি করবে।’

`জাপানের বিখ্যাত ফুজি পাহাড়ের হিমবাহ আর তুষারপাতের ফলে সৃষ্ট বরফের আস্তরণ প্রবল শীত নিয়ে আসবে এদেশে। শীত আড়াল করবে বর্ণময় চেরি এবং অন্যান্য ফুলের রঙিন বাহার। সব কিছু হয়ে যাবে শ্বেত-শুভ্র। আবার বসন্তে জাদুর পরশের মতো উন্মোচিত হবে রঙ আর বর্ণের প্যানারমিক প্রকৃতি’- বললেন আজিজুল হাকিম।

জাপান দিয়ে সূচিত শীতের আগমন ধ্বনি অচিরেই শুনতে পাওয়া যাবে এশিয়া মহাদেশের অন্য দেশগুলোতেও। দূরপ্রাচ্যের দেশগুলো পরবর্তী সপ্তাহেই শীতার্ত হবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। সিএনএন, বিবিসি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার ওয়েদার বুলেটিনে স্যাটেলাইট ইমেজের ভিজ্যুয়াল দিয়ে শীত এগিয়ে আসার খবর প্রচারিত হচ্ছে। অল্প দিনের মধ্যেই পৃথিবীর বিশাল এক অংশ শীতের গর্ভে চলে যাওয়ার ক্ষণগুলো কড়া নাড়ছে এশিয়ার দেশে দেশে।

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশগুলোতে শীতের দেখা মিলবে আরও কয়েক দিন পর। আবহাওয়াবিদরা এমন তথ্য দিয়ে বলেছেন, ‘ভারত মহাসাগরের নিম্নচাপে বাংলাদেশ ও ভারতের উপকূলে কিছু বৃষ্টির হচ্ছে। এতে শীতের ভাব আসলেও আসল শীত হাজির হবে হিমালয় পেরিয়ে আসা সাইবেরিয়ান হিমবাহের সাথে।’

বাংলা পঞ্জিকা মতে সবে শুরু হয়েছে আশ্বিন। লোকশ্রুতি মতে, জন্ম নিয়েছে শীত। আশ্বিন পেরিয়ে শরতের শেষে কার্তিক আর অগ্রহায়ণে শুরু হবে হেমন্তের, যাকে বলা যায় শীতের সহোদর। ততদিনে পুষ্ট হবে সদ্যজাত শীত এবং ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসের চাদরে আড়াল করবে চরাচর। এইসব দিন আর মাসগুলো আসলে যেন অপেক্ষার প্রহর। পৌষ আর মাঘের শীতের জন্য চেয়ে থাকার লগ্ন।

প্রকৃতিতে এখন পালাবদলে মাহেন্দ্রক্ষণ। গ্রীষ্ম বলয় থেকে জগত চলেছে শীতের প্রদেশে। আকাশে মিইয়ে আসার আলোর তীব্রতার কমছে ধীর লয়ে। কমছে দিনের পরিধিও। প্রলম্বিত দুপুর আর বিকেলের দেখা আর মিলছে না। এক ফালি তীর্ষক মিঠে রোদ ছড়িয়ে বিকাল খুব তাড়াতাড়িই হারিয়ে যাচ্ছে সন্ধ্যার শরীরে। রাত নামলেই বাতাসে টের পাওয়া যাচ্ছে হিমেল টান। শরীরে ও মনে উষ্ণতার শেষে লাগছে শীত মাখানো মায়াবী ছোঁয়া। মানুষের মতো বৃক্ষ ও পত্রালী লাজুক সম্ভ্রাষণে আনত হচ্ছে শীত বরণের আমেজে। ঋতুচক্রের অপার বৈচিত্রের ভাণ্ডার উন্মোচিত হচ্ছে শীত-জড়ানো নানা বৈশিষ্ট্যে।

হ্যাঁ, আসল শীত এখনো আসেনি। এসেছে পৌষের কাছাকাছি রোদমাখা সেইসব দিন। যেই দিনগুলো দেখতে দেখতে হারিয়ে যাবে। পৌষের কাছাকাছি রোদমাখা সেই দিন হারিয়ে গেলে মান্না দের সাথে গলা মিলিয়ে বলতে হবে, হাসি আর কান্নায় মাখামাখি হয়ে দিনগুলো ‘ফিরে আর আসবে কি কখনো!’

গানের সমান্তরালে ঋতুচক্রের ভেলায় চলে শীত আসবে। এসে আবার চলেও যাবে। তারপর আবার আসবে। এই যেমন ঠক ঠক করে এসেও গেছে এশিয়ার পুবের দরোজা জাপানে!

এ সম্পর্কিত আরও খবর