ভালোবেসে তিনি জীবনকে তুচ্ছ করেছিলেন। বলেছিলেন: ‘আমি পীড়িতের অনলে পোড়া/মরার পরে আমায় পুড়িস না’।
হাহাকার জাগানো এমনই সঙ্গীতময় বেদনাবাহী কথাগুলো বলতে বলতে হেমন্তের এক বিষণ্ন দিনে চিরবিদায়ের পথে চলে যান মরমী শিল্পী বারী সিদ্দিকী। এক বছর আগে, ২৪ নভেম্বর ২০১৭ সালে দূর নীলিমা পেরিয়ে উড়াল দেন তিনি। গানের পাখি, মরমী শিল্পী বারী সিদ্দিকীর আজ প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী।
গানকে তিনি বড় বেশি ভালোবেসেছিলেন। হৃদয়ের সবটুকু দরদ দিয়ে গেয়েছিলেন বেদনা ও বিচ্ছেদের গান। মরমী সুর আর কথায় মানুষকে ভাসিয়ে নিয়েছিলেন সঙ্গীতের অপরূপ জগতে। ব্যথিত হৃদয় তার গানে আনচান করে উঠেছে। বাংলার ভৌগোলিক সীমানা ছেড়ে প্রলম্বিত হয়েছে তার লোকায়ত গানের নান্দনিক সুষমা।
চিরায়ত বাংলার অবিস্মরণীয় মায়াময় সুর ছিল তার কণ্ঠে। লোকজ ঐতিহ্য ও উপমায় ভরপুর ছিল তার গান। বাঁশী ও দেশীয় যন্ত্র সঙ্গীতের পাশাপাশি আধুনিক অনুষঙ্গ ব্যবহার করে তিনি সৃষ্টি করেছিলেন সুরের ইন্দ্রজাল। গ্রাম-বাংলার মরমী সঙ্গীতকে বিশ্বের সামনে জনপ্রিয় করেছিলেন তিনি।
শুয়া চাঁন পাখি আমার শুয়া চাঁন পাখি, আমার গায়ে যত দুঃখ সয়, পূবালী বাতাসে গো পূবালী বাতাসে,
রজনী হইস না অবসান/আজ নিশিতে আসতে পারে বন্ধু কালাচান, এ রকম অসংখ্য হৃদয়গ্রাহী গানে বারী সিদ্দিকী হাজার হাজার শ্রোতার মর্মমূল স্পর্শ করেছিলেন। মানুষের ব্যক্তিগত দুঃখ-বেদনাকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন সঙ্গীতের সুরসাগরে।
বেদনা ভাষ্যকার হয়ে তিনি বলেছিলেন:
‘আমি যদি যাই গো মরে
আমার লাশটা বুকে ধরে
আমার লাইগা বন্ধু তোরা
কান্না জুড়িস না।।
আমি পীড়িতের অনলে পোড়া
মরার পরে আমায় পুড়িস না।’
সবাইকে গীড়িতের অনলে পুড়িয়ে তিনি চলে গেছেন অধরা জগতের দূর নীলিমায়। রেখে গেছেন ভালোবাসায় ভরপুর তার অনন্য গানগুলো। কেউ আর এখন তার মতো উদাত্ত কণ্ঠে বলবে না: 'আমি ডাকিতাছি তুমি ঘুমাইছো নাকি...।'
জন্মস্থান নেত্রকোণার অতল হাওরস্পর্শী জনপদের শেষ আশ্রয়ে তিনি নিজেই চিরঘুমে শায়িত। বাংলার নদী, নিসর্গ, পাখি ও প্রকৃতি সুরে সুরে তাকে ডাকাডাকি করছে। তিনি শুধু গানের ভাষায় প্রত্যুত্তরে বলছেন শাশ্বত ভালোবাসার কথা। বলছেন: ‘আমি পীড়িতের অনলে পোড়া/মরার পরে আমায় পুড়িস না’।
মরমী শিল্পী বারী সিদ্দিকীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে
বার্তা২৪.কমের শ্রদ্ধা।