ভূমধ্যসাগরের তীরে কান সৈকতে বাংলাদেশের জয়ধ্বনি উঠল। সম্মানজনক কান চলচ্চিত্র উত্সবের অফিশিয়াল সিলেকশনে প্রদর্শিত প্রথম বাংলাদেশি ছবির গৌরব অর্জন করলো আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’।
উৎসবের ৭৮তম আসরের অফিসিয়াল সিলেকশনে জায়গা পেয়ে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের নির্মাতা আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ পরিচালিত ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। আঁ সার্তে রিগা বিভাগে রয়েছে এটি। বাংলাদেশি কোনো ছবির এটাই সবচেয়ে বৃহৎ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
পালে দে ফেস্টিভাল ভবনের সাল দুবুসিতে বুধবার (৭ জুলাই) কান উৎসবের দ্বিতীয় দিনে সকাল সোয়া ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ১৫ মিনিট) ছবিটির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয়েছে। ছবিটি দেখার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিচালক, প্রযোজক ও পেশাদার চলচ্চিত্রকর্মী ও সাংবাদিকরা এটি দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
ছবিটির প্রিমিয়ার শেষে সকলে দাঁড়িয়ে হাতে তালি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছে ছবির কলাকুশলীদের। আবার সেই দর্শকদের মধ্যে তো একজন বয়স্ত নারী ছবিটির অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধনকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন।
দর্শকদের উষ্ণ অভিনন্দন পেয়ে আপ্লুত হয়ে কান্না ধরে রাখতে পারেননি বাঁধন নিজেও।
বাঁধন বলেন, ‘আমি এই মুহূর্তে বলে বোঝাতে পারবো না কী অনুভব করছি। আজকে প্রথমবারের মতো পুরো ছবিটি একসাথে দেখলাম। অনস্ক্রিন রেহানার পেইন, আমার পেইন, আমাদের সবার পেইন- এ এক অন্যরকম অনুভূতি। বিশেষ করে যে সব দর্শকরা সাবাইটেল দেখে ছবিটি বোঝার চেষ্টা করেছিলেন, তারা যখন আমাকে জড়িয়ে ধরে অভিনন্দন জানালেন, বাংলাদেশ নিয়ে প্রসংশা করলেন এইসব বিষয় কখনো বলে বোঝানো যায় না।’
এতো বড় একটি অর্জন প্রসঙ্গে ছবিটির পরিচালক সাদ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না এখানে আসতে পেরেছি! আমাদের জন্য বিশেষ ব্যাপার হলো, কানের অফিশিয়াল সিলেকশনে বাংলাদেশের প্রথম ছবি এটাই। আমাদের কাছে ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য।’
প্রাইভেট মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষক রেহানা মরিয়ম নূরকে কেন্দ্র করেই এই সিনেমার গল্প। যেখানে রেহানা একজন মা, মেয়ে, বোন ও শিক্ষক হিসেবে জটিল জীবনযাপন করে। এরমধ্যে এক সন্ধ্যায় কলেজ থেকে বেরোনোর সময় রেহানা একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনার সাক্ষী হয়। এরপর থেকে সে এক ছাত্রীর পক্ষ হয়ে সহকর্মী এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ঘটনার প্রতিবাদ করতে শুরু করেন এবং ক্রমশ একরোখা হয়ে ওঠেন। কিন্তু একই সময়ে তার ৬ বছর বয়সী মেয়ের বিরুদ্ধে স্কুল থেকে রূঢ় আচরনের অভিযোগ করা হয়। এমন অবস্থায় অনড় রেহানা তথাকথিত নিয়মের বাইরে থেকে সেই ছাত্রী ও তাঁর সন্তানের জন্য ন্যায় বিচারের খোঁজ করতে থাকেন।
পোটোকল ও মেট্রো ভিডিওর ব্যানারে ছবিটি প্রযোজনা করেছেন সিঙ্গাপুরের প্রযোজক জেরেমী চুয়া, নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবু এবং সহ-প্রযোজনা করেছেন রাজীব মহাজন, আদনান হাবিব, সাঈদুল হক খন্দকার। ছবিটির সিনেমাটোগ্রাফার তুহিন তমিজুল, প্রোডাকশন ডিজাইনার আলী আফজাল উজ্জল ও সাউন্ড ডিজাইনার শৈব তালুকদার। ছবিটি সহ-প্রযোজনা করেছে সেন্সমেকারস প্র্রডাকশন।
ছবিতে আরো অভিনয় করেছেন আফিয়া জাহিন জাইমা, কাজী সামি হাসান, আফিয়া তাবাসসুম বর্ন, ইয়াছির আল হক, সাবেরী আলমসহ অনেকে।
উল্ল্যেখ্য, ২০০২ সালের ৫৫তম কানস্ চলচ্চিত্র উৎসব এ প্যারালাল বিভাগের অংশ ডিরেক্টরস’ ফোর্টনাইট-এ নির্বাচিত হয়েছিল প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ পরিচালিত “মাটির ময়না” চলচ্চিত্রটি। কিন্তু প্রথমবারের মত অফিসিয়াল সিলেকশনে “রেহানা মরিয়ম নূর” ছবিটি আমন্ত্রণ পাবার মাধ্যমে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।