দ্য ট্রাজেডি কিং অব বলিউড

সিনেমা, বিনোদন

বৃষ্টি শেখ খাদিজা, নিউজরুম এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-27 02:21:01

বলিউড ইন্ডাস্ট্রির আরও একটি নক্ষত্রের পতন। বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যার কারণে আজ (৭ জুলাই) সকাল ৭টায় মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন বর্ষীয়ান এই অভিনেতা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৯৮ বছর।

হিন্দি চলচ্চিত্র ইতিহাসের সর্বকালের সেরা অভিনেতা ছিলেন দিলীপ কুমার। ভারতীয় সিনেমায় অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন প্রয়াত এই তারকা। শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত তিনি।


কিন্তু জানেন কী বর্ষীয়ান এই অভিনেতা শুধু দক্ষ অভিনেতাই নন, একজন সফল নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ছিলেন? জানেন কী ২০ দশকে তিনি একটি সেনা ক্যাম্পে স্ট্যান্ডউইচের দোকান খুলেছিলেন?

কেবল এগুলোই নয়, এই জীবন্ত কিংবদন্তি সম্পর্কে আরও এমন অনেক বিভিন্ন তথ্য রয়েছে যা কম মানুষেরই জানা। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক দিলীপ কুমারের জীবনের জানা-অজানা কিছু অধ্যায়...


জন্ম
দিলীপ কুমারের আসল নাম মোহাম্মদ ইউসুফ খান এ কথা সকলেরই জানা। ১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পেশওয়ার কিসসা খনি বাজার এলাকায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি। তার বাবা লালা গুলাম আলি ছিলেন একজন বাড়িওয়ালা ও ফলের ব্যবসায়ী। তার মা আয়েশা বেগম ছিলেন গৃহিনী।

বন্ধু রাজ কাপুরের সঙ্গে দিলীপ কুমার

বেড়ে ওঠা
দিলীপ কুমার নাসিকের দেওলালীর বার্নেস স্কুল থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। বলিউড অভিনেতা রাজ কাপুর তার শৈশবের বন্ধু ছিলেন। দু’জনে একসঙ্গে বেড়ে ওঠেন।


পলাতক
বাবার সঙ্গে অভিমান করে ১৯৪০ সালে বাড়ি থেকে পালিয়ে পুনে চলে এসেছিলেন দিলীপ কুমার।


স্যান্ডউইচের দোকান
পুনেতে পৌঁছানোর পর পার্সি ক্যাফের মালিক এবং একজন বয়স্ক দম্পতির সহায়তায় একটি ক্যান্টিন ঠিকাদারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর সেখানে কেবল ইংরেজি ভাষা সম্পর্কে দক্ষতার ভিত্তিতে একটি চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। তবে সেখানে তার পরিবারের পূর্বসূরীদের ব্যাপারে কখনও কিছু প্রকাশ করেননি। চুক্তির সময়কাল পর্যন্ত তিনি ক্যান্টিনে একটি স্যান্ডউইচ স্টল স্থাপন করেছিলেন এবং মোট ৫,০০০ রুপি সাশ্রয় করেছিলেন, তারপর তিনি দেশে ফিরেছিলেন।


বোম্বে
বাবা ও পারিবারকে সহায়তা করতে ১৯৪২ সালে দিলীপ কুমার ডাঃ মাসানীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন। ডাঃ মাসানী তাকে মালাদে বোম্বে টকিজে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং ফলস্বরূপ অভিনেত্রী দেবিকা রানির সাথে তার দেখা হয়, যিনি বোম্বে টকিজের মালিকও ছিলেন।


চিত্রনাট্যকার
উর্দু ভাষায় দক্ষ থাকার কারণে ১৯৪২ সালে বোম্বে টকিজে একজন চিত্রনাট্যকার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন দিলীপ কুমার। এজন্য প্রতি মাসে ১২৫০ রুপি পারিশ্রমিক পেতেন তিনি।

দেবিকা রনি ও দিলীপ কুমার

নাম পরিবর্তন
দেবিকা রনির সঙ্গে দুই বছর কাজ করার পর একদিন তিনি দিলীপ কুমারকে তার নাম পরিবর্তনের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এরপরই ১৯৪৪ সালে মোহাম্মদ ইউসুফ খান থেকে দিলীপ কুমার হয়ে দেবিকার বিপরীতে ‘জোয়ার ভাট’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্র দুনিয়ায় পা রাখেন।


প্রথম হিট
১৯৪৪ সালে ‘জোয়ার ভাটা’তে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে অভিনেতা হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ছবিটি খুব একটা ভালো প্রশংসা কুড়াতে পারেনি। দিলীপ কুমার প্রথম হিট ছবি উপহার দিয়েছেন ১৯৪৭ সালে। নাম ‘জুগনু’। এতে তার বিপরীতে ছিলেন নূর জেহান। এরপর ১৯৪৮ সালে ‘মেলা’ ও ‘সাহিদ’র মতো ছবি উপহার দিয়েছেন তিনি।


বড় সাফল্য
তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য আসে ১৯৪৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আন্দাজ’ দিয়ে। যেখানে তিনি রাজ কাপুর এবং নার্গিসের সাথে অভিনয় করেছিলেন। এরপর ৫০ এর দশকে জোগান, হুলচুল, বাবুল, দিদার, নয়া দৌড়, দেবদাস, দাগ এবং মধুমতির মতো চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আরও সাফল্য দেখেছিলেন।

‘মুঘল-ই-আজম’ ছবির দৃশ্য

সর্বাধিক উপার্জনকারী ছবি
ষাটের দশকে তিনি ‘মুঘল-ই-আজম’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন, যা ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বাধিক উপার্জনকারী ছবি হয়ে উঠেছিল এবং ১১ বছর পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো। দিলীপ কুমার সেই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছিলেন- গঙ্গা যমুনা, নেতা, দিল দিয়া দারদ লিয়া, রাম অর শ্যাম ও আদমী-তে।


বিষন্নতা
৫০ দশকের ছবিগুলোতে অভিনয় করার সুবাদে ‘ট্রাজেডি কিং’-এর তকমা পেয়েছিলেন দিলীপ কুমার। আর সেই ছবিগুলোর মধ্যে কিছুতে অভিনয় করায় হতাশায় ভুগতে শুরু করেছিলেন প্রয়াত এই তারকা। পরে তার মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে তিনি আয়ান, আজাদ ও কোহিনুরের মতো চলচ্চিত্রগুলোতে স্বল্প ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।

ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড হাতে দিলীপ কুমার

দিলীপ প্রথম
তিনিই প্রথম তারকা যিনি সেরা অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড ঘরে তুলেছিলেন। ‘দাগ’ ছবিতে অভিনয়ের জন্যই এটি অর্জন করেছিলেন তিনি। এরপর আরও ৭টি ব্ল্যাকলেডি ঘরে তুলেছিলেন এই ট্রাজেডি কিং।


লাখ রুপি পারিশ্রমিক
দিলীপ কুমারই একমাত্র তারকা ছিলেন যিনি ৫০ দশকে ছবি প্রতি ১ লাখ রুপি পারিশ্রমিক নিতেন।

অশোক কুমারের সঙ্গে দিলীপ

অভিনয়ের ধরন
অভিনেতা অশোক কুমার দ্বারা তার অভিনয়ের ধরন প্রভাবিত হয়েছিলো। ১৯৪৪ সালে যখন তারা প্রথম দেখা করেছিলেন, অশোক কুমার ইতিমধ্যে তারকা ছিলেন। তিনি দিলীপ কুমারকে ‘প্রাকৃতিক’ অভিনয় করতে বলেছিলেন।

প্রযোজনা
দীর্ঘ চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে মাত্র একটি ছবি প্রযোজনা করেছিলেন দিলীপ কুমার। আর সেটি হলো ১৯৬১ সালে মুক্তি পাওয়া ‘গঙ্গা যমুনা’ ছবিটি। এতে দিলীপের পাশাপাশি অভিনয় করেছিলেন তার ভাই নাসির খান।


ফ্লপ
সত্তর দশকে তার ছবিগুলো বক্স অফিসে ফ্লপ হওয়া শুরু করে। সত্তর দশকে তার অভিনীত দস্তান, গোপী, সাগিনা এবং বৈরাগ-এর মতো ছবি বক্স অফিসে ছাপ ফেলতে ব্যর্থ হয়েছিলো।

মধুবালা

প্রথম ভালোবাসা
দিলীপ কুমারের প্রথম প্রেম ছিলেন অভিনেত্রী মধুবালা। ‘তারানা’ ছবিটি তৈরির সময় প্রেমে পড়েছিলেন তারা এবং একসাথে ছিলেন সাত বছর। ‘নয়া দৌঁড়’ চলচ্চিত্রটি সম্পর্কিত আদালতের মামলায় তাদের মতের পার্থক্যের কারণে তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়।

সায়রা বানু ও দিলীপ কুমার

বিয়ে
১৯৬৬ সালে অভিনেত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন দিলীপ কুমার। সায়রা তার থেকে ২২ বছরের ছোট ছিলেন। আর কিংবদন্তি এই তারকা মৃত্যুর শেষ সময় পর্যন্ত স্ত্রীকে পাশে পেয়েছেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর