মৃত্যুর পর তাকে যেনো বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয়। ছেলের শাকের চিশতীর কাছে এমনটাই ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন সারাহ বেগম কবরী।
প্রয়াত এই অভিনেত্রীর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী বনানী কবরস্থানে দাফন করা হলো তাকে। বাদ জোহর জানাজা শেষে সেখানেই চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন তিনি। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কবরীর পরিবারের সদস্য ও সংস্কৃতিক অঙ্গনের সহকর্মীরা।
এর আগে ঢাকাই চলচ্চিত্রের ‘মিষ্টি মেয়ে’ খ্যাত এই অভিনেত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়।
মায়ের শেষ বিদায়ের বেলায় তার জন্য সকলের কাছে দোআ চেয়েছেন শাকের চিশতী। তার মা যদি কখনও কোনো ভুল করে থাকেন তাহলে তার জন্য তাকে ক্ষমা করার অনুরোধ করেছেন তিনি।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ দিনের মাথায় তিনি চলে গেলেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
শুক্রবার (১৬ এপ্রিল) রাত ১২টা ২০মিনিটে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর।
খুসখুসে কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষায় দেন সারাহ বেগম কবরী। ৫ এপ্রিল দুপুরে পরীক্ষার ফল হাতে পেলে জানতে পারেন, তিনি করোনা পজিটিভ। ওই রাতেই তাঁকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৭ এপ্রিল দিবাগত রাতে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। অবশেষে ৮ এপ্রিল দুপুরে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে কবরীর জন্য আইসিইউ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁকে লাইফ সাপোর্ট নেওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হলো না।
১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালীতে জন্মগ্রহণ করেন অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। তাঁর আসল নাম মিনা পাল। পিতা শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্য প্রভা পাল। চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গী বাজারের কিশোরী মিনা পালের স্বপ্ন ছিলো বড় হয়ে সাদা শাড়ি পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে মাস্টারি করবে। কিন্তু বিধাতা তার জন্য লিখে রেখেছিলেন অন্যকিছু।
১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে আবির্ভাব হয় তার। তারপরে নন্দিত নির্মাতা সুভাষ দত্তের হাত ধরে ১৯৬৪ সালে স্কুল পড়ুয়া সেই মিনা পালের বাংলা চলচ্চিত্রের ‘কবরী’ রূপে আত্মপ্রকাশ।
পরের গল্পটা সবারই জানা। ষাটের দশকের যে সাফল্যমণ্ডিত যাত্রা শুরু হয়েছিলো তার এখনো চলমান। অন্যভাবে বলা যায় আমাদের চলচ্চিত্র জগতের সাথে যেকয়টি নাম মিলেমিশে একাকার হয়ে আছে তাদের মধ্যে অন্যতম এক নাম কবরী।
১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ সিনেমা দিয়ে চলচ্চিত্রে নাম লেখান দেশ বরেণ্য অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী। এরপর ‘বাহানা’, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘রংবাজ’, ‘সারেং বউ’, ‘সুজন সখী’সহ অসংখ্য কালজয়ী সিনেমা উপহার দিয়েছেন তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি সিনেমা প্রযোজনাও করেছেন এই অভিনেত্রী। পরিচালক হিসেবে নির্মাণ করেছেন সিনেমা৷ দীর্ঘ ১৪ বছর পর দ্বিতীয় সিনেমা তৈরিতে হাত দিয়েছিলেন। ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামের ছবিটি পরিচালনার পাশাপাশি এর কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ রচনা করেছেন তিনি। তার পরিচালিত প্রথম সিনেমা ছিল ‘আয়না’।
অভিনয় ও নির্মাণের পাশাপাশি লেখালেখিও করতেন কবরী। ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয়েছে তার লেখা আত্মজীবনী ‘স্মৃতিটুকু থাক’।