একজন মিমির জন্য

, ঈদ সবিশেষ

ওমর শরীফ | 2024-04-10 19:39:38

রক্তিম লালে ভরে গেছে কৃষ্ণচূড়ার গাছটা। দোতলার বারান্দা থেকে সম্পূর্ণ গাছটাই দেখা যায় খুব চমৎকার ভাবে। শাহেদ সেইদিকেই আনমনে তাকিয়ে কি যেন ভাবছিল, পেছনে কখন পরী এসে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই করেনি। ভাইয়া ডাকে চেতনা ফিরে পেল যেন। পরী শাহেদের মেজ খালার মেয়ে , তাদের বয়সের পার্থক্য খুব বেশি না হলেও ছয়-সাত বললে খুব বাড়িয়ে বলা হবে না । কারণ পরী যেখানে অনার্স শুরু করতে যাচ্ছে সেখানে শাহেদের মাস্টার্স প্রায় শেষের দিকে।

শাহেদ ছয় ফুটের কাছাকাছি শুঠাম দেহী, যাকে এক নজরে সুপুরুষ বললে ভুল হবে না, এরই সঙ্গে তার আকর্ষণ বহুগুণ বাড়িয়ে তুলেছিল তার গৌরবর্ণ, ধীর ও বুধিদীপ্ত স্বভাব । আর পরী শুশ্রী আয়তোচলনা, চোখে দিঘির গভীরতা, যেমন কোমল মন তেমনই কোমল স্বভাবের, থাকে চট্টগ্রামের খুলশিতে, এডমিশনের জন্য ঢাকায় এসেছে। শাহেদের সঙ্গে একটি বিষয়েই শুধু অমিল তা হচ্ছে পরী অনেক কথা বলতে ভালবাসে কিন্তু শাহেদ ঠিক তার উল্টো, খুব প্রয়োজন ছাড়া কথা বলা থেকে বিরত থাকে, যাকে বলে পারফেক্ট মিতভাষী।

পরীর ডাকে ঘুরে তাকাল শাহেদ আর ওকে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো

- আরে পরী কখন এসেছ? তোমাদের না কালকে আসার কথা ছিল। খালামনি কোথায়? আসতে কোনও সমস্যা হয়নি তো ? আগে জানালে এয়ারপোর্টে আমি আনতে যেতাম। আহ কি যে করনা তোমারা? শাহেদ এক নিঃশ্বাসে বলে গেল কথাগুলো।
পরী কথা শুনছিল আর এক দৃষ্টে শাহেদের দিকে চেয়ে ছিল। এত প্রশ্ন এত কথা, নিজের শরীরে চিমটি কেটে বোঝার চেষ্টা করলো- ইনি আদৌ শাহেদ কিনা?! শাহেদের দৃষ্টিতে শুন্যতা ছিল কিন্তু আন্তরিকতার কোনও অভাব ছিলনা এটা বেশ উপলব্ধি করলো পরী। স্বাভাবসুলভ মিষ্টি হাসিতে পরী উত্তরে বললো
তোমাকে অবাক করে দিতেই আমরা কালকে না এসে আজকেই চলে এলাম, কি কেমন সারপ্রাইজ দিলাম?
না একেবারে মন্দনা, বলতে পার পুরো ব্যাপারটাই হজম করতে কষ্ট হচ্ছে
- তার মানে খুশি হওনি, বলো? ধুর আসাটায় ভুল হয়েছে !!
- না না একেবারেই না । ভীষণ খুশি হয়েছি, কিন্তু ইচ্ছা ছিল তোমাদের এয়ারপোর্টে নিতে যাবো, কিন্তু তোমরাতো এসে উপস্থিত। হাসতে হাসতে বলল “সুস্বাগতম”। আর তোমার ভর্তির খবর কি?
- কালকে ফর্মালিটি সেরে ফেলবো ভাবছি।
- গুড এন্ড কংরাচুলেসন্স এগেইন
- ইউ আর ওয়েলকাম
বলেই দুজনে হেসে দিলো। শাহেদ পরীকে বললো চলো নিচে যাওয়া যাক, খালামনির সঙ্গে দেখা করি। নিচে নেমেই খালার সঙ্গে সালাম বিনিময় করে পাশের সোফায় গিয়ে বসলো শাহেদ। একথা সেকথার মধ্যে মা বললেন আগামী কাল তোকে পরীকে ইউনিভার্সিটি নিয়ে যেতে হবে ওর ভর্তির কিছু কাজ আছে। সাহেদ বললো কোন অসুবিধা নেই , আমাকে তো এমনিই যেতে হয়, একথা বলে ১০টার সময় রেডি থাকার কথা বললো শাহেদ পরীকে, পরীও হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো।
রাতে খাবার টেবিলে সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হলে শাহেদের মা ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করলো যে পরী খুব লক্ষ্মী মেয়ে, খুব ভাল গান গায় আবার রান্নাও করে । লেখা পড়াই খুব ভাল, বড়দের খুব সম্মান করে ইত্যাদি ইত্যাদি। শাহেদ হু সূচক মাথা নাড়ালো, শাহেদ মোটেও বোকা নয় এসকল কথার মানে সে হাড়ে হাড়ে বোঝে, কথাগুলোকে খুব বেশি পাত্তা না দিয়ে খাওয়া শেষে সে নিজের ঘরে চলে গেল।


মর্নিং ওয়াক শাহেদের অত্যন্ত পছন্দের একটা বিষয়। প্রতিদিন হাঁটা চাই ই চাই। সকালে হাঁটা শেষে ফিরে এসে দেখে পরী মুখ গোমরা করে ওর অপেক্ষা করছে। কিছু বলার আগেই পরী বলে উঠলো
- ইস আমাকেও তো নিয়ে যেতে পারতে, আমিও সকালটা উপভোগ করতাম এ তোমার ভারি অন্যায়।
- তুমি যে সকালে হাঁটতে ভালোবাসো তাতো জানা ছিল না। আর শুনেছি তুমি ঘুমকাতুরে, সকালে খুব ঘুমাতে পছন্দ করো। আচ্ছা মনে থাকবে, এরপর অবশ্যই নিয়ে যাবো।
- আচ্ছা তুমি কবে থেকে এতও কথা শিখলে, আগে তো হাজার কথা জিজ্ঞস করলে একটা দুটা কথা বলতে?
- মানুষ সদা পরিবর্তনশীল পরীমনি । আর ওটা অন্যদের জন্য, নিজের মানুষের জন্য না, বুঝেছো?

কথাটা শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছিল না পরীর, শুধু মাথার মধ্যে “নিজের মানুষের জন্য” কথাটি ঘুরতে লাগলো আর পরীহীন পুলকে শিহরিত হতে লাগলো।


পরের দিন ঠিক ১০টার সময় শাহেদ রেডি হয়ে বসে আছে ড্রয়িং রুমে কিন্তু পরীর দেখা নেই। মাকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল পরী তখনও রেডি হচ্ছে। শাহেদ ভীষণ বিরক্ত হলেও মুখে কিছু বললো না। শেষে ১ ঘণ্টা লেটে ১১ টা নাগাদ পরী যাওয়ার জন্য প্রস্তুত বলে জানান দিলো। দুজনে একসঙ্গে বেরিয়ে যেতেই, সাহেদের মা ও পরীর মা দুজন দুজনকে বলাবলি করতে লাগলো যে এদের couple হিসেবে খুব মানাবে, শাহেদের মা আরও বলল যে এইরকম মেয়েকেই তিনি এ বাড়ির বউ হিসেবে চান। এর পরেও দুই বোনের মাঝে অনেক কথায় হয়ে গেল অভিভাবকরা যেমন বিবাহ যোগ্য ছেলে মেয়ে নিয়ে কথা বলে ঠিক তেমন। তবে ঈশ্বর জানেন ছাইচাপা আগুন যেমন ধিকি ধিকি জ্বলে তেমনি এই প্রসঙ্গ হালকা স্ফুলিঙ্গ থেকে প্রকাণ্ড দাবদাহে পরিণত হতে খুব বেশি সময় লাগবেনা।

পরী আজ বাসন্তী রং এর কাপড় পড়েছে, গাড় লাল লিপস্টিক দিয়েছে, রক্তিম লাল চুড়ি, ম্যাচ করে টিপ, কানের দুল আর মালা পড়েছে। পরীকে আজ দেখতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে, যেন কচুর পাতার উপর এক বিন্দু জলকণা, সূর্য কিরণে যেমন দ্যুতি ছড়ায় ঠিক তেমনই দ্যুতিময়। কিন্তু শাহেদ তো শাহেদ, সে এই সৌন্দর্য লক্ষ্যই করলোনা, মুখে একটিবার সে প্রসঙ্গে কিছু বললোও না। পরী মনে আশা করেছিল শাহেদ হয়তো কিছু একটা বলবে কিন্তু হায় পাথরের কাছে জল চাওয়া আর শাহেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারা একই ব্যাপার।

পরী আর শাহেদ ইউনিভার্সিটি পৌঁছে আগে পরীর কাজ শেষ করার কথা ভাবল, ওখানে ক্লার্ক এর সঙ্গে কথা বলে যা দাঁড়ালো তার সারমর্ম হচ্ছে, যে কাজের জন্য পরী গিয়েছিল তা হতে বেশ খানিকটা সময় লাগবে, আজ কাজ শেষ নাও হতে পারে, তবে কালকের মধ্যে হবে এটা নিশ্চিত। সাহেদ পরীকে বলল “যেহেতু আজ পুরো কাজ হবেনা, যতদূর সম্ভব আজ শেষ করে আমার বন্ধুদের সঙ্গে তোমার পরিচয় করিয়ে দি। এতে তোমার এইখানের পরিবেশ সম্বন্ধে একটা idea হবে, কি বল?”

পরী হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালে দুজনে বিজনেস অনুষদের দিকে রওনা হল। পরী বরাবরই চট্টগ্রামে মানুষ, ঢাকা খুব বেশি চেনার কথা নয় তার। তবে শাহেদদের বাসায় বহুবার এসেছে এর আগে। ঢাকা বলতে ধানমণ্ডি, নিউ মার্কেট, এলিফাণ্টরোড এগুলোই পরীর পরিচিত নাম, গতবার শুধু এডমিশন পরীক্ষা দিতে এসেছিল ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে, সেই প্রথম সেই শেষ, এইবার দ্বিতীয় বারের মতো ইউনিভার্সিটি এলো।প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত এই বিদ্যাপিঠে পড়ার সুযোগ হওয়ায় নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছে ও। এমন অনেক কিছুই ভাবছে হঠাৎ ভাবনার ছেদ ঘটল যখন শাহেদ বন্ধুদের সঙ্গে পরিচয় করানোর জন্য পরী নাম ধরে সম্বোধন করলো।

- এ হচ্ছে সাকিব, রাইলা, বারেক আর নীরব। আর এ হচ্ছে পরী আমাদের ইউনিভার্সিটিতে এইবার এডমিশন নিচ্ছে।
সবাই পরীকে ওয়েলকাম জানালো। বিশেষ করে রাইলা পরীকে কাছে টেনে নিলো আর তার কেমন লাগছে, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি? ইত্যাদি জিজ্ঞেস করতে লাগলো। সাকিব হেসে বলল কি রাইলা তুই কি একদিনে পরীকে পাঠ পরিয়ে ফেলবি নাকি? এ কথা শুনে সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। এতে রায়লা কিছুটা অপ্রস্তুত হলেও সামলে নিয়ে হাসিতে যোগ দিলো। ঘোরা ঘুরি করে বেশ খানিকটা সময় অতিবাহিত হল, পরিচয়ের এ পর্যায়ে পরীকে সবাই খুব আপন করেনিল, আগেই বলেছি পরীর আশ্চর্য মিশবার ক্ষমতা তার বন্ধু তৈরিতে খুব বেগ পেতে হয়না। আড্ডা চলল দুপুর গড়িয়ে বিকেল পর্যন্ত। অনেক কথার মাঝে একটা ব্যাপার বন্ধুদের কারো দৃষ্টি এরালনা তা হল পরীর শাহেদের প্রতি অপ্রতিরোধ্য ভালোলাগা , কিন্তু কষ্টের হলেও সত্য শাহেদ এই ভালোলাগার ব্যাপারে ঘুণাক্ষরে কিছুই জানে না।

বাসা ফিরতে ফিরতে একটু দেরি হয়ে গেল এ কারণে মায়ের কাছে অনেক কথা শুনতে হল শাহেদকে। খালামনির এই রকম ব্যবহারে পরী ভীষণ অপরাধবোধে ভুগছিল, এর অন্যতম কারণ সে নিজে, সন্ধ্যায় ফুচকা খাওয়ার বায়না সেই ধরেছিল শাহেদের কাছে ফলে বাসা ফিরতে দেরি হয়ে গেছে। পরী ভাবল “যাই হোক যা হয়ে গেছে তা তো আর ফিরিয়ে আনা যাবেনা”। অপরাধবোধ থেকেই একবার খালামনিকে বোঝানোর চেষ্টা করলো কিন্তু উনি কিছু শুনতে নারাজ, উনার হিসাবে সব দোষ শাহেদের আর পরী তো ঢাকায় নতুন। রাতের ডিনার এর পর যখন শাহেদ নিজের বারান্দায় আনমনে তারা গুনছে তখন পরী তার পাশে এসে বলল
“সরি” ‘আমার জন্য তোমাকে এতগুলো কথা শুনতে হল’,
উত্তরে শাহেদ বললো
‘এটা এমন কোনও ব্যাপার না।’
পরী পাশের চেয়ারে বসে আনমনে তারা দেখতে লাগলো। কেউ কোনও কথা বলছেনা, সময় থেমে গেছে যেন। প্রথম শাহেদই নীরবতা ভাঙ্গলো, জিজ্ঞেস করলো
‘আজ তোমার কেমন লাগলো পরী? আমার বন্ধুরা তো তোমার ফ্যান হয়ে গেছে তুমি ওদের কি জাদু করেছো?’
পরী স্মিত হেসে উত্তর দিলো
‘সবাইকে জাদু করতে পারলেও একজনকে জাদু করতে পারলামনা, এ আমার পরম ব্যার্থতা’
অনেকটা অবাক হয়ে শাহেদ জিজ্ঞেস করলো
‘আর কাকে জাদু করতে চেয়েছিলে?
পরীর সোজা উত্তর ‘তোমাকে’।
শাহেদ ঠিক এই ভয়টাই করছিলো, পরীকে থামানো এখন কঠিন হবে বুঝতে পেরে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে বলল
- চলো ওঠা যাক খুব ঘুম পাচ্ছে
- ঘুম পাচ্ছে না ছাই, বলো পালাতে চাও
- না মানে সত্যি ঘুম পাচ্ছে
- শাহেদ একটা কথা বলবে আমাকে
- কি
- আমি কি তোমার যোগ্য নই? কি করলে তুমি আমাকে বুঝবে
- দেখ পরী তুমি খুব ভাল মেয়ে আর আমি তোমাকে আমার কাজিন হিসাবেই দেখি
- চুপ করো এত ভণিতা করতে হবেনা। আজ তোমাকে বলতেই হবে যে কি নেই আমার মধ্যে
- দেখ পরী তোমার সব আছে যা একজন পুরুষ তার জীবন সঙ্গীর মধ্যে চাই, আমার মতে তুমি যে কোনও পুরুষের প্রথম পছন্দ এ ব্যাপারে কোনও সন্ধেহর অবকাশ নেই
- তাহলে আমি তোমার হতে চাইলে বাধা কোথায়?
- পরী আছে অনেক বড় বাধা আছে, কিন্তু তুমি সেটা বুঝবেনা
- আমাকে ভালভাবে বুঝালেই বুঝবো
- আমার একটা অতিত আছে
- কি অতীত আমাকে বল প্লিজ

বেশ ৪/৫ বছর আগের ঘটনা তখন আমি hons দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র । আমাদের ক্লাসে পরী নামে এক অনিন্দ্য সুন্দরি মেয়ে পড়তো। যেমন পড়ালেখায় তেমনই স্মার্ট। পুরো ক্লাস তার জন্য পাগল ছিল প্রায়। কিভাবে পরীর মন পাওয়া যাবে এটায় ছিল সেই সময়ের উপজীব্য বিষয়। আমিও এদের বাইরে ছিলামনা কিন্তু ঠিক কি উপায়ে পরীর সঙ্গে ঘনিস্ঠ হওয়া যায় তারই প্রচেষ্টা চলছিল, যখন এই অবস্থা তখন আমারই একজন ঘনিস্ঠ বন্ধু বললো,
“আমি বাজি ধরে বলতে পারি পরীর মধ্যে জেলাসি তৈরি করতে পারলে তার মন পাওয়া সম্ভব, তুই শুধু একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় কর”।

আমি বললাম “তাতো বুঝলাম কিন্তু মেয়ে পাবো কোথায়?” বিপত্তির শুরু এখানেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়? এরই মাঝে আদিল নামের আমার একটা বন্ধু পরামর্শ দিলো আমি একজন কে চিনি যে তোকে হেল্প করতে পারবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। আদিল আমাকে মিরপুর একটা রেস্টুরেন্টে যেতে বলল, আমি মিরপুরে সময়মতো রেস্টুরেন্ট উপস্থিত হলাম। রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করতেই আদিলকে দেখতে পেলাম কিন্তু ওর সঙ্গে কোন মেয়ে না থাকায় আমি কিছুটা হতাশ হলাম, আদিল কে জিজ্ঞেস করতেই বলল, “এখনও আসেনি তবে অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে চলে আসবে”।

সময় কাটানোর জন্য আমরা দুজনে চা অর্ডার করে মেয়েটির জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। প্রায় ১৫ মিনিট পর একটি মেয়ে রেস্টুরেন্ট প্রবেশ করে সোজা আমাদের টেবিল বরাবর চলে এলো। আদিল মেয়েটিকে আমাদের টেবিল বসতে বললো আর আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললো,
‘শাহেদ এ মিমি, মিমি এ আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু শাহেদ, যেমনটি বলেছিলাম এর জন্যেই তোমাকে কাজটা করতে হবে।”
আমি বললাম, “কাজের কথায় আশা যাক”

মেয়েটি কাস্ট হাসি হেসে বলল, “আপনার তো তর সইছেনা, কি মেয়েটিকে খুব বেশী ভালবাসেন বুঝি’?
মেয়েটির কথা শুনে প্রচণ্ড ক্ষেপে তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললাম, “প্রেম ভালবাসার আপনি কি বুঝবেন, আপনার প্রয়োজন টাকায়, টাকা হলেইতো হয়।” মেয়েটি বলল “তা মন্দ বলেননি।”

মেয়েটিকে প্রপোজাল দেয়া হল সে যতদিন প্রয়োজন আমার সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করবে এবং মাস গেলে একটা আমাউন্ট পেয়ে যাবে। মেয়েটি রাজি হল এবং জিজ্ঞেস করলো কবে থেকে কাজ শুরু করতে হবে? আমরা বললাম “কাল থেকে হলে ভাল হয়।”


মিমিকে ঠিক যখন এবং যেখানে বলা হয়েছিল ঠিক সেখানেই উপস্থিত হয়েছে সে। আদিল পরামর্শ দিলো “শাহেদ তুই মিমির সঙ্গে সারাদিন আড্ডা দে এর পর সম্পর্কটা কিছুটা স্বাভাবিক হলে আসল অপারেশনে নামতে হবে”

আমার কাছেও কথাটা যৌক্তিক বলে মনে হলো। সেদিন সারাটা দিন আমি আর মিমি ক্যান্টিন, লাইব্রেরী, সুভাস ভবন, খোকা চত্বর আরও অনেক জাইগায় ঘোরাঘুরি করলাম, মিমির ব্যাপারে যতদূর জানলাম সে অনার্স করছে একটা ইউনিভার্সিটি কলেজে, ওর এক ভাই আর মা আছে কিন্তু বাবা নেই। বাসার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি সে নিজে। ছিমছাম গড়নের একটা মেয়ে মিমি, কথা বলে খুব গুছিয়ে, চলা ফেরা খুব স্মার্ট, প্রিয় রং নীল, হরিণের মতো টানাটানা চোখ আর চোখে রাজ্যের মায়া, পরিমিত সাজে আকর্ষণীয় লাগছিল খুব তাকে।

মিমি আর আমার ঘোরাঘুরির মধ্যেই কয়েকদিন চললো। মাঝে আদিল সুযোগ বুঝে মিমিকে পরীর সঙ্গেও পরিচয় করিয়া দিলো যা আগে থেকেই প্ল্যানের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মিমি যে আমার খুব কাছের কেও, এমন অভিনয় চালিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। এভাবে চললো বেশ কিছুদিন, আমার আর বন্ধুদের মনে হয়েছিল কিছুটা কাজও হচ্ছিলো, কিন্তু ঐ যে কথায় বলে না ‘হতভাগা যে ডালই ধরে ভেঙ্গে যায়’ এমনই পোড়া কপাল।

শাহেদ আর মীম ক্যান্টিনে বসে আছে এমন সময় নীরব এসে জানালো দুঃসংবাদটা, “পরী পড়ালেখার কারণে দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে, কাল থেকে তাকে আর দেখা যাবেনা”

সবচেয়ে কষ্টের সময় উপনীত হল যখন পরী আমার কাছে বিদায় নিয়ে গেল। আমার অবস্থা দেখে মিমি বললো, “তোমার অবস্থা দেখে মনে হতে পারে কেউ তোমার দুটো কিডনিই হাতিয়ে নিয়েছে,” একথা বলে ও ভীষণ হাসতে লাগলো কিন্তু হাসি লুকানোর কোন চেষ্টাই সে করলো না।
মিমির হাসি দেখে আমার আরও রাগ হতে লাগলো, ক্ষেপে গিয়ে বললাম “সব প্ল্যান মাঠে মারা গেল আর তোমার হাসি পাচ্ছে, তুমি কি?” মিমি হাসতে হাসতেই বললো

- আমি যাই, আমি আর থেকে কি করবো, যখন পাত্রীই নেই তখন বেচারা পাত্র একা একা কি করবে?
- মজা নিচ্ছ তায় না, তোমার কি আমার জন্য একটুও মায়া হয়না? কেমন মানুষ তুমি?
- না হয় না। তোমার মতো বোকাদের এমনই হয়। উনি গেছেন নাটক করতে। আরে বাবা কাউকে পছন্দ করলে সরাসরি বলায় আসল সাহস , আর মেয়েরা সাহসী পুরুষ পছন্দ করে!!
- বুঝলাম এতো জ্ঞান দিতে হবেনা, মেজাজটা বিগড়ে গেল, চলো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আমি বাসায় ফিরবো।


সেদিন জলদি জলদি বাসা ফিরে নিজের রুমে শুয়ে পড়লাম, মা চিন্তিত হোয়ে জিজ্ঞেস করলো “কিরে শরীর টরির খারাপ নাকি? না খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লি যে?” শুধু উত্তরে বললাম ‘মা আমি খেয়ে এসেছি, খুব ক্লান্ত একটু ঘুমাবো’। দুপুরটা যেমনই ক্যাটুক রাতটা সহজে কাটতে চাইছিলনা, বিছানায় শুধু এপাশ ওপাশ করেছি আর অনুভব করছি, কি যেন হাত ছাড়া হোয়ে গেল। পরের দিন ভার্সিটি গেলাম, কেবলই অনুভব করলাম সবই আগের মতো আছে কিন্তু কি যেন নেই, কি যেন খালি খালি। আমাকে উদাস দেখে বন্ধুরা টিপ্পনী দিয়ে পরীকে নিয়ে যা নয় তা বলা শুরু করলো, কিন্তু এতো কিছুর পরও কোথায় যেন ব্যাপারটা মেনে নিতে পারছিলামনা, ঠিক যেন ঘটনাটা মিলছিলনা। অনেক ভেবে ভেবেও যখন কূল কিনারা করতে পারছিলামনা তখন আদিল প্রসঙ্গ ছাড়ায় বলে উঠলো,

“দোস্ত তোর কি মিমির জন্য মন কেমন কেমন করছে?” এই কথা শুনে আমিতো ভীষণ ক্ষেপে গিয়ে আদিল কে প্রায় মারতে উঠেছিলাম, পরে অবশ্য নিজেকে সামলে নিয়েছিলাম। বাসা ফিরে নিজের রুমে গিয়ে অনেকবার ভাববার চেষ্টা করলাম যে আসল সমস্যাটা কি? ভেবে ভেবে কিছুই পেলাম না। কিছুক্ষণ চোখ বুজে ভাববার চেষ্টা করলাম, চোখ বন্ধ করে যার চেহারাটি ভেসে উঠলো তা বিশ্বাসই করতে পারছইলাম না। ঘটনার আকর্ষিকতায় যেন হতবুদ্ধি হয়ে গেলম, বিদ্যুত স্পৃষ্টর মতো নিথর হয়ে পড়ে রইলাম। এও কি সম্ভব। ভাষা হারিয়ে নিজের মনে মনে বললাম মিমি আমি তোমাকে ছাড়া খুব একা। আবার মনে মনে নিজেকেই শাসন করলাম “এ কি বলছি আমি”!! সে রাতে কোন ভাবেই আর ঘুম এলো না।

ভারসিটির লাইব্রেরীতে বসে বইয়ের পাতা উলটাচ্ছি কিন্তু খেয়াল করলাম যে মগজে তেমন কিছু ঢুকছেনা, লক্ষ্য করলাম কি একটা অস্থিরতা পেয়ে বসেছে। লাইব্রেরী থেকে বেরিয়ে মোবাইলে মিমিকে ফোন দিলাম, দুবার রিং হতেই ওপাশ থেকে মিমির কথা শোনা গেল, মিমির আওয়াজ কানে যেতেই আমার কেবলই মনে হতে লাগলো এইতো একেই তো খুজছিলাম। মুখে বললাম, কেমন আছ মিমি
- বাব্বাহ এতদিন পর মনে পড়লো আমাকে, ভালোই তো
- তুমি এখন কোথায়, দেখা করা যাবে?
- আমি কলেজে কিন্তু আজ যে খুব কঠিন হবে, একটু পরেই বাসা যেতে হবে কাজ আছে
- আমার তোমার সঙ্গে খুব দরকার, খুব জরুরি
- পরী কি আবার ফিরে এসেছে নাকি? বলেই হেসে দিলো
- ফাজলামি কোরনা প্লিস। তুমি কি এক ঘণ্টা মতো থাকবে?
- হুম এক ঘণ্টা থাকবো মনে হয়
উত্তেজনায় “আমি আসছি” বলেই ফোনটা কেটে দিলাম। প্রায় আধা ঘণ্টা পর আবার কল করলে মিমি রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গে আমি জিজ্ঞেস করলাম ‘তুমি কোথায়?’ মিমির সরল উত্তর, ‘ক্যান্টিনে’। মিমিকে কলেজের একটা জাইগাতে আসতে বলে আমি অপেক্ষা করতে লাগলাম। মিমি যখন আমার মুখামুখি হল তখন কেবলই মনে হতে লাগলো, ‘এই মানুষটা কত চেনা কত আপন, একে কতদিন দেখিনা’ আমার একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকা দেখে মিমি জিজ্ঞেস করলো “সব ঠিক আছে তো নাকি, কি এমন ব্যাপার যে এতো তারাহুড়ো করে দেখা করতে হলো”। আমি বললাম মিমি আমার তোমার সঙ্গে খুব জরুরি কথা আছে, মিমি শুধু আমার দিকে চেয়ে জরুরি কি কথা থাকতে পারে তা বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো।
- আমি এ কদিন খুব খারাপ ছিলাম মিমি, খেতে, পড়তে এমনকি ঘুমাতে পর্যন্ত পারছিলাম না। খুব একা একা লাগছিল
- এর মানে কি
- আমি তোমাকে ভালোবাসি মিমি, আমি তোমাকে ছাড়া আমার এ জীবন ভাবতে পারছিনা, তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিওনা
- তুমি কি পাগল, মাথা কি পুরাই গেল
- হ্যাঁ আমি পাগল হয়ে গেছি। তুমিই তো বলো মেয়েরা নাকি সাহসী পুরুষ পছন্দ করে। এই নাও আমি তোমার সামনে আমার মনের কথা বললাম।
- এ হয়না শাহেদ, আমি কি তুমি খুব ভালো ভাবেই জানো, আমি জেনে বুঝে তোমার জীবন নষ্ট করতে পারবো না। আমাকে ক্ষমা করো তুমি
- আমাকে ফিরিয়ে দিওনা মিমি

মিমি আর কথা না বাড়িয়ে ‘আমাকে বাসা যেতে হবে’ বলে সেখান থেকে চলে গেল, আমি মিমিকে আটকালামনা, শুদু মিমির যাবার দিকে করুন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম। এরপর বহুবার মিমিকে ফোনে চেষ্টা করেছি কিন্তু প্রতিবারই মিমি ফোন কেটে দিয়েছে। মিমির কথা ভাবতে ভাবতে আমি রীতিমত জ্বর বাধিয়ে বসলাম, শরীর খারাপ হয়ে গেল খুব। যেহেতু মিমি আমার ফোন ধরছিলনা অগত্যা আদিলের শরণাপন্ন হলাম আর আদিলকে অনুনয় বিনয় করে মিমিকে আমার অবস্থার কথা বুঝিয়ে বলতে বললাম আরও বললাম মিমি যেন আমাদের বাসায় অবশ্যই আসে। আদিল প্রথমে আমাকে বোঝাতে চেষ্টা করলো এবং ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করলো যে মিমি আমার যোগ্য নয়। শেষে আমার অনুরোধে মিমিকে আমার প্রকৃত অবস্থার কথা বুঝিয়ে বলাতেই সে বাসায় এসে দেখা করতে রাজি হয়ে গেল। মিমি পরের দিনই আমাদের বাসায় এসেছিল। এসে মিমি জানতে চাইল
- এখন শরীর কেমন
- আগের থেকে ভালো, ফোন ধরণি কেন?
- ফোন ধরার তো কথা ছিল না
- আমি জানতাম না তুমি আসবে
- আসতাম না কিন্তু আদিল ভাই যেভাবে তোমার আসুস্থতার কথা বললেন না এসে পারলাম না
- তার মানে তুমি আমার কেয়ার করো
- মোটেও না
- দেখ মিমি সত্য কখনও চাপা থাকেনা। তুমি মান আর না মান তুমি আমাকে ভালোবাসো
- কি আজেবাজে কথা বলছো, এটা অসম্ভব
- তুমি কি চাও এভাবে আমি শেষ হয়ে যাই, আমি তোমাকে খুব চাই মিমি, অভিনয় করতে করতে কখন যে তোমাকে ভালবেসে ফেলেছি আমি জানি না
- এখন এ কথা থাক শাহেদ তুমি আগে সুস্থ হোয়ে ওঠ তারপর কথা হবে
- চা খেয়ে মিমি আমার আর মার কাছ থেকে বিদায় নিলো

মিমির চলে যাওয়ার পর আমার খুব শান্তি শান্তি লাগছিল। মা মিমির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে আমি ভার্সিটির বন্ধু বলেছিলাম। এ বিষয় নিয়ে আর কথা বাড়াইনি। সুস্থ হবের পর যে কাজটি প্রথম করলাম তা হল মিমিকে ফোন করে ক্যাম্পাসে ডাকা, মিমিও বাধ্য মেয়ের মতো রাজি না হোয়ে পারলনা। অবশেষে আমাদের দেখা হল নির্ধারিত সময়েই। অনেকটা সময় কাটলো আগের ঘটে যাওয়া ঘটনার স্মৃতিচারণ করে। দুজনেই স্বীকার করলাম যে আগের বার অভিনয় করতে করতে কখন যে দুজন দুজনকে ভালবেসে ফেলেছি কেউই বুঝতে পারেনি। তবে মিমি এভাবে সম্পর্ক টাকে এগিয়ে নিতে রাজি ছিলনা কিন্তু আমার যুক্তি হল ভালবাসার অধিকার সবার থাকা চাই । আমার যুক্তির কাছে নতি স্বীকার করতে হল মিমির।

এভাবে প্রায়ই দুজনের দেখা হতে লাগলো আর দুজনেই মনের ভাব রসের অবাক্ত কথাগুলোকে নতুন নতুন রূপ দিতে লাগলাম। এখন এমন অবস্থার সৃষ্টি হল যে কেউ কাউকে না দেখে থাকতে পারিনা। সুযোগ পেলেই ফোনে কথা হয়, প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে দুজন দুজনকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে যায়, একেই বুঝি প্রেম বলে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি, বুকের মধ্যে একটা অদ্ভুত আলোড়ন হতে থাকে যতক্ষণ একে অপরকে না দেখছি। আমাদের প্রেমের নৌকায় পালতুলে তর তর করে ছুটে চলেছে আর আমাদের অজান্তেই সমাজ নামক মোড়ল আমাদের দিকে আড় চোখে চেয়ে প্রতিনিয়ত ভৎসনা করে চলেছে। এমনই একদিন দুজনে রেস্টুরেন্ট এ খেতে যেয়ে একটা ভীষণ বিপত্তির সম্মুখীন হতে হল।

মিমি আর আমি অর্ডার করার পর বসে আছি, এমন সময় ৪/৫ জন ছেলে রেস্টুরেন্ট এ প্রবেশ করে ঠিক আমাদের পাশের টেবিলে বসলো। মিমি আর আমি নিজেদের নিয়ে এতো বুঁদ হয়ে ছিলাম যে নতুন আশা ছেলেরা যে আমাদের দেখিয়ে কিছু বলছে তা লক্ষই করেনি, পরে দুটি ছেলে তাদের টেবিলে উঠে এসে মিমিকে লক্ষ্য করে অশালীন মন্তব্য করায় আমি প্রচণ্ড ক্ষেপে গিয়ে হাতাহাতি শুরু করে ফেলি। যার ফলে একটা বাজে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। মিমি ঘটনার আকর্ষিকতায় লজ্জায় অপমানে কেঁদে ফেলেছিল। মিমি প্রায় ছুটে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে গেলে তার পিছু পিছু আমিও বেরিয়া আসি। এতো ডাকা ডাকির পরও মিমি থামতে চাইছিল না, মনে হল সে এইখান থেকে যত দ্রুত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অন্য কোথাও চলে যেতে চায়। একরকম বাধ্য হয়েই আমি মিমির হাত ধরে ওকে থামাতে চেষ্টা করলাম।

আমি বললাম,
- এ ধরনের বিড়ম্বনায় পড়তে হবে ভাবিনি কিন্তু তোমার তো এতে কোনও দোষ নেই
- শাহেদ এ আমার কপালের দোষ, আমাকে অনেকটা বাধ্য হয়েই এ জীবন বেঁছে নিতে হয়েছে
- কিন্তু তুমি তো এখন এ সব কিছুর ঊর্ধ্বে
- সমাজ তো তা আর মানে না, তুমি চিন্তা করে দেখ এই ঘটনাটা যদি তোমার বাসাই ঘটে যেতো তবে তুমি বা আমি কিভাবে মুখ দেখাতাম, বলেই মিমি একটা সি এন জি ডেকে বাসার দিকে রওয়ানা হল
- মিমি আমার কথা শোন, আমার মুখের কথা মুখে মিলিয়ে গেল, তার আগেই মিমি অনেক দুরে চলে গেছে

আমাদের সমাজ এমন কেন? কেউ যদি জীবনে কখনও কোনও ভুল করে থাকে তবে তার আর ক্ষমা নেই কেন? সেই মানুষটার একটি বারের ভুল সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে থাকে। আমি নিজেও জানতাম না সেইবারই মিমির সঙ্গে আমার শেষ দেখা, চাইলেও আর কোনদিন মিমি হাসবেনা অথবা পাজি বলে ভৎসনা করবেনা। মিমি পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিয়েছে আর আমার পৃথিবীকে শূন্য করে দিয়ে গেছে। মিমি শুধু একটা প্রেয়সীর নাম না, আমার সকল সত্ত্বা জরিয়ে থাকা অনুভূতির নাম।

এ কথাগুলো শাহেদ যখন পরীকে বলছে নিজের অজান্তেই শাহেদের দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে, ঠিক একই অবস্থা পরীরও। পরী শুধু শাহেদের হাতের উপর হাত রেখে বলল “এতো ভালোবাসো তুমি মিমিকে, মিমি সত্যি খুব ভাগ্যবতী” কিন্তু আমরাতো কষ্টটাকে ভাগাভাগি করে নিতে পারি তাইনা।. শাহেদ বলল,
- মিমি আমার আর তায় তাকে হারানোর কষ্টগুলোও আমার একান্ত নিজের। এটা ভাগাভাগি করা যায়না পরী
- আমি যদি তোমাকে ঠিক মিমির মতো আগলে রাখি, মিমির ছায়া হোয়ে তোমার পাশে পাশে থাকি
- তা হয়না পরী। মিমি আর ফিরবেনা আমিও না। যতদিন বাঁচবো মিমির স্মৃতি নিয়ে বাঁচবো। আমার পক্ষে অন্যকোন নারীকে মিমির জাইগা দেয়া অসম্ভব
- তাহলে আমি কি নিয়ে থাকবো শাহেদ, আমিও যে তোমাকে বড্ড ভালবেসেছি, আমার সকল সত্ত্বা জুড়ে শুদু তুমি। তুমি ছাড়া আমারও আর কাওকেই গ্রহণ করা সম্ভব নয়।

দুজনের হাত দুজনের হাতের মাঝে পড়ে রইলো। বাইরে জোছনায় কৃষ্ণচুড়ার গাছে লালের প্লাবন বয়ে যাচ্ছে যেন। দুই ভগ্ন হৃদয় শুদু অশ্রু হয়ে দুচোখ বেয়ে প্লাবিত হতে লাগলো। শুধু বিধাতাই জানেন, এই দুটি তপ্ত হৃদয় মহাকাশের উল্কার মতো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে এসে ভস্মীভূত হয়ে সবার অলক্ষ্যে বিলীন হয়ে যাবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর