শিশুশ্রম নিরসনে সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অঙ্গীকারাবদ্ধ। শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান সরকার। ফলে, শিশুশ্রম নিরসনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে ৪৩টি সেক্টরকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনে আয়োজিত ‘মূল্যস্ফীতি আর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ’ নিয়ে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করে এসব জানান অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বাজেটে শিশুশ্রম নিরসন ও শোভন কর্মপরিবেশ তুলে ধরে বলা হয়, শিশুশ্রম নিরসনে সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অঙ্গীকারাবদ্ধ। সে লক্ষ্যে 'জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি, ২০১০' প্রণয়ন করা হয়েছে।
আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যে 'বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন' শীর্ষক চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে ইতোমধ্যে মোট ৯০ হাজার শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
সরকার ৪৩টি সেক্টরকে শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কর্মক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করে শিশুশ্রম নিরসনে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারের গৃহীত কার্যক্রমের মাধ্যমে ইতোমধ্যে তৈরি পোশাকশিল্প, চিংড়িশিল্প, ট্যানারি, কাচ, সিরামিক, জাহাজ রিসাইক্লিং, রফতানিমুখী চামড়াজাত শিল্প ও পাদুকা এবং রেশমশিল্প থেকে শিশুশ্রম নিরসন করা হয়েছে।
শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তৈরি পোশাক সেক্টরে ১ হাজার ৫শ ৫০টি কারখানার কমপ্ল্যায়েন্স নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
শ্রমিকের সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে Labour Information Management System (LIMS) সফটওয়্যারের মাধ্যমে ১ম পর্যায়ে ৩ লাখ শ্রমিকের তথ্য অন্তর্ভুক্তিপূর্বক ডাটাবেজ তৈরির কার্যক্রম চলমান রয়েছে। শ্রমিকের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে ৩ লাখ ৭৬ হাজার জন শ্রমিককে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং ৪ লাখ ৫৫ হাজার জনকে চিত্তবিনোদন সেবা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে শ্রমিকের মৌলিক অধিকার সুরক্ষায় ৪৯ হাজার ৫শ জন শ্রমিককে প্রশিক্ষণ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে, বৃহস্পতিবার (৬ জুন) স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হওয়া অধিবেশনে উপস্থিত রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনে দুপুরে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। পরে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বাজেটে সম্মতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেন।
অর্থমন্ত্রী যে বাজেট বক্তব্য দেবেন তার শিরোনাম দেওয়া হয়েছে- ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার।’
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এবার ঘাটতিই থাকবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই বিশাল পরিমাণ ঘাটতি পূরণে কয়েকটি খাতকে উৎস হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে, ব্যাংকিংখাত।
এই খাত থেকে মোটা দাগে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হচ্ছে। এর বাইরে বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার সহায়তা পাওয়া যাবে বলে জানা গেছে।
এর মধ্যে ১ লাখ কোটি টাকার প্রকল্প ঋণও রয়েছে। এর পাশাপাশি ব্যাংকবহির্ভূত খাত হিসেবে বিবেচিত সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া হবে ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আয়ের টার্গেট দেওয়া হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। নন-এনবিআর থেকে আসবে আরো ১৫ হাজার কোটি টাকা আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির টার্গেট থাকছে ৪৬ হাজার কোটি টাকা।