চা বা চা পাতার অপর নাম ‘দুটি পাতা একটি কুঁড়ি’। কারণ, দুটি পাতা আর একটি কুঁড়ি তোলা হয় বলেই এরূপ নামকরণ। অনেকে দুটি পাতা একটি কুঁড়ি বললেই বুঝে ফেনেন - চায়ের কথা বলা হচ্ছে।
চা তো আমাদের অনেকেরই প্রিয়। আমরা অনেকই চা পান করি। জন্মের পর থেকেই চায়ের সাথে খুব সহজেই পরিচিত হয়ে উঠেছি আমরা। পরিবারের সদস্যদের মুখে মুখে চা শব্দটির ব্যাপক চাহিদা। চা নামক পানীয়টির প্রয়োজনীতা তাদের মুখে মুখে ঘুরাফেরা করতে থাকে সময়ের প্রতিটি ক্লান্ত মুহূর্তে।
চা বা চা পাতা সম্পর্কে আমরা যতটা আগ্রহী তবে চায়ের ফুল সম্পর্কে ততটা আগ্রহী বা পরিচিত নই আমরা। আমাদের অগোচরে বাংলাদেশের ১৬৭টি চা বাগানেই ফুটে এই ফুল। কিন্তু আমাদের দেখা হয় না। চেনা হয় না। সাধারণ চা-বাগানের গাছগুলো থেকে দু-এক সপ্তাহ পরপর পাতা তোলা হয় কুঁড়িসমেত। সে জন্য সেসব বাগানে ফুল ফোটার সুযোগ থাকে না।
গাঢ় সবুজ পাতার চায়ের সুগন্ধযুক্ত সাদা ফুলের মাঝখানে রয়েছে স্বর্ণাভ হলুদ রঙা পরাগকেশর। যা চা ফুলকে করে তুলেছে অতি আকর্ষণীয়। চা গাছ চিরসবুজ ঝোপাল গুল্ম কিংবা ছোট আকারের বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। সাধারণত একটি চা গাছ তিন থেকে চার মিটার লম্বা হয়ে থাকে। তবে চা বাগানের চা গাছগুলো ২ ফুটের বেশি লম্বা হয় না। এর মূল খুব শক্তিশালী। চা আর বিখ্যাত ক্যামেলিয়া একই প্রজাতির গাছ।
বাংলাদেশিয় চা সংসদের সিলেট ব্রাঞ্চ চেয়ারম্যান জিএম শিবলি বলেন, চা-গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Camellia sinensis বা ক্যামেলিয়া সিনেনসিস। চিরসবুজ এ গাছ জন্মে পাহাড় বা টিলার ঢালে। চা-পাতা তুলে তুলে গাছগুলোকে খাটো করে রাখা হয়। পাতা না তুললে এসব গাছ প্রায় ৩০ ফুট লম্বা বৃক্ষ হতে পারত।
তিনি আরও বলেন, সাধারণত চা-গাছে ফুল ফোটা শুরু হয় হেমন্ত থেকে। অক্টোবরের পরে। ফুল ফুটতে থাকে শীতকাল জুড়ে। চা-গাছ বাঁচে ৩০ থেকে ৫০ বছর। ফুল ফোটা শুরু হয় বছর সাতেক বয়স থেকে। ফুল উভলিঙ্গী, মৌমাছিরা পরাগায়ন ঘটিয়ে ফল তৈরি করে। চা-গাছের ফল, সে আরেক অদ্ভুত জিনিস। ফল পাকতে অনেক সময় লাগে।
ফল থেকে চারা হয়, আবার ফল ভাঙিয়ে তেল বের করা যায়। তেল সুগন্ধযুক্ত ও সুমিষ্ট। এ তেল দিয়ে রান্না করলে আলাদা স্বাদ আসে বলে জানান তিনি।
গবেষকদের ধারণা, খ্রিস্টপূর্ব দু’হাজার সাতাশ শতাব্দীতে চীন সম্রাট সিন নুং-এর সময় আবিষ্কৃত হয়। আবার ইতিহাসবিদের মতামত, বুদ্ধের জন্মের প্রায় এক হাজার বছর আগে চীনা সন্ন্যাসীরা চা আবিষ্কার করেন। আমাদের ভারত উপমহাদেশে ১৮৩৩ সালে প্রথম চা চাষ শুরু ভারতের লখিমপুর চা বাগানে। আর ১৮৫৭ সালে বাংলাদেশে প্রথম সিলেটের মালিনীছড়ায়।
জাতিসংঘের এক তথ্য থেকে জানা গেছে, প্রায় এক বিলিয়ন বা একশো কোটি মানুষ বর্তমানে প্রতিদিন কমপক্ষে দু’কাপ চা পান করে থাকেন।
যারা শহরের কোলাহলের মাঝে বন্দী। যাদের চা বাগান দেখার সৌভাগ্য হয়নি কখনো; যাদের চিরসবুজের প্লাবনে এসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেবার সুযোগ হয়নি এখনো তাদের উদ্দেশ্য বলছি – শুধু চা নয়; ছোট চায়ের ফুলকে আপনার ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে চাইলে চলে আসুন বাংলাদেশের চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে। চায়ের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের কথা বিবেচনা করে এখানেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট বা বিটিআরআই।
পাকা সড়ক ধরে এগিয়ে যেতে হঠাৎই দেখবেন হাজার হাজার চা পাতার ভিড়ে একটি ছোট্ট চা-ফুল আপনার দিকে তাকিয়ে যেন হাসছে।