না ফোটা কুঁড়িতেই রয়েছে যাদু! সেখানেই ঘটে যায় বিপ্লব! আসে সর্বোচ্চ দামের শতভাগ নিশ্চয়তা। চা পাতা পরিপূর্ণভাবে চোখ মেলার পূর্বেই গাছ থেকে তুলে ফেলা হয় সযত্নে। একটি করে মমতামিশ্রিত হাতের ছোঁয়ায় এসে কোমল-বন্ধকুঁড়িগুলো ঠাঁই পায় ফ্যাক্টরিতে। তারপর প্রক্রিয়াজাতকরণের পর তৈরি হয় স্বাস্থ্যের জন্য ঢের উপকারি ‘হোয়াইট-টি’।
এই হোয়াইট-টি এর মাঝে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। এর ফলেই এই চা মানবদেহের যৌবন, তারুণ্য, লাবণ্যতা ধরে রাখতে সক্ষম বলে চা বিশেষজ্ঞের অভিমত।
আমাদের চিরচেনা নরমাল চা অর্থাৎ ‘ব্ল্যাক টি’ কিংবা অপর ভিন্ন একটি প্রক্রিয়ার চা ‘গ্রিন-টি’ থেকে এর পার্থক্য অনেক। ব্ল্যাক-টি এবং গ্রিন-টি দুটোই কিছুটা কালো রঙের। আর হোয়াইট-টি এর পাতাগুলো মাঝে কিছুটা সাদা রঙের আভা রয়েছে।
পঞ্চগড় জেলার পপুলার টি ফ্যাক্টরির সিনিয়র ম্যানেজার এবং অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার ইবাদুল হক বলেন, হোয়াইট-টি তৈরির জন্য প্রয়োজন হয় চা গাছের একটি বন্ধ কুঁড়ি। অর্থাৎ যে কুঁড়ি এখনো প্রস্ফুটিত হয়নি। সেই বন্ধ কুঁড়িগুলোকে একটা একটা করে চা গাছ থেকে তুলে প্রক্রিয়াজাতকরণের পরই এই বিশেষ চা তৈরি হয়ে থাকে।
চায়ের রঙ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই চায়ের রঙ পিত-হলুদ বা পিতলের মতো হলুদ। এর মূলরঙটা হলো সবুজ ও হলুদ রঙের মাঝামাঝি। একে হোয়াইট-টি বলার কারণ হলো এর গায়ে সাদা লোম রয়েছে। এই চা কে কেউ কেউ বলে থাকেন ‘সিল্ভার নিডল হোয়াইট-টি’ (Silver Neele White Tea) বা রূপার সূঁই এর মতো সাদা চা।
পাতা চয়নের পদ্ধতি প্রসঙ্গে ইবাদুল হক বলেন, এ চায়ে পাতা উত্তোলনে নেওয়া হয় কঠিন মাননিয়ন্ত্রণ। পাতায় কোনো প্রকার পানি থাকতে পারবে না। ভোর ৫টা থেকে সকাল ৭টার মধ্যে পাতা চয়নের কাজ শেষ করতে হবে। শিশির বা বৃষ্টি পড়লে হবে না। পাতা উত্তোলনের সময় হলো সেপ্টেম্বর-অক্টোবর এবং ফেব্রুয়ারি-মার্চ।
উপকার সম্পর্কে এই অভিজ্ঞ টি-প্লান্টার বলেন, ‘হোয়াইট-টি’ মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারি। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রয়েছে। যা তারুণ্য এবং যৌবন বাজায় রাখে। চাপ, ক্লান্তি দূর করে মনকে ঝরঝরে করে তুলে। আরও একটি বিশেষ গুণ হলো এই চা ফেট বা চর্বি কমায়। এটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল চা। এর বাজারমূল্য প্রতি কেজি প্রায় ৭ হাজার টাকা। তবে চা নিলামের দর উঠানামার কারণে এর দামও উঠানামা করে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন চা বাগান এখন ‘গ্রিন টি’র পাশাপাশি ‘হোয়াইট-টি’ পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করে ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে বলে জানান ইবাদুল।
‘হোয়াইট-টি’ বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে এই চা গবেষক বলেন, এক কাপ পরিমাণ পানি কেতলিতে নিয়ে গরম করতে হবে। গরমপানিতে প্রথম বুদবুদ উঠার সাথে সাথে সেই কেতলির পানি একটি কাপে ঢালতে হবে। তারপর এর মাঝে ২ দশমিক ৩ গ্রাম বা এক টেবিল চামচ পরিমাণ হোয়াইট-টি দিয়ে পাঁচ মিনিট রেখে দিতে হবে। পাঁচ মিনিট পর ছাকনিতে ছাকলেই তৈরি হয়ে যাবে হোয়াইট-টি।