গ্রিন-টি এর মতোই উপকারী চা ‘ইয়েলো টি’। নিজস্বগুণাবলি দিয়ে এই চা সৌখিন চাপ্রেমীদের মনোযোগ আকর্ষণ করে চলেছে। ব্লাক-টি এর পরপরই জনপ্রিয় হয়েছে গ্রিন-টি। তবে বর্তমান সময়ে গ্রিন-টি’র সাথে পাল্লা দিয়ে ধীরে ধীরে বাড়ছে ইয়েলো টি’র চাহিদা।
ইয়েলো টি’র অনুবাদিত অর্থ হলুদ চা। তবে হলুদ চা থেকে ইয়েলো টি নামই অধিক পরিচিত। যদিও এর মূল্য চড়া কিন্তু গুণাগুন আর উপকারের দিক থেকে শীর্ষতার আসন দখল করে রেখেছে এই চা।
বর্হিবিশ্বের চা উৎপাদনকারী দেশগুলোতে এই ইয়েলো-টি চা জনপ্রিয় বলে জানিয়েছেন চা সংশ্লিষ্টরা। আমাদের দেশে এই নতুন পদ্ধতির চা অত্যন্ত সীমিত পরিসরে উৎপাদন এবং বিপণন করা হচ্ছে। তবে সর্বোচ্চ মূল্যেও সচল ইয়েলো টি।
বৃন্দাবন চা বাগানের তৈরিকৃত ইয়েলো টি চলতি বছর তুলনামূলক পরিচিত অর্জন করেছে। জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথমদিকে শ্রীমঙ্গলের চা নিলাম কেন্দ্রে বৃন্দাবন চা বাগানের তৈরিকৃত ইয়েলো-টির ২ কেজির লটের সবটাই কেজি প্রতি ১২ হাজার ২০০ টাকা মূল্যে বিক্রি হয়েছিল।
এই প্রসঙ্গে বৃন্দাবন চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন খান বলেন, ‘ইয়েলো টির ভবিষ্যৎ ভালো। এখন আর অনেকেই অডিনারি (সাধারণ) চা পছন্দ করেন না। ২০/৩০ বছর আগে চা এর অবস্থা কিন্তু এখন নাই। আগে মানুষ শুধু ব্ল্যাকটির (কালো চা) উপর নির্ভর করতো। আর যারা খুব স্বাস্থ্য সচেতন তাদের কিছু অংশ গ্রিন-টি খেতো। কিন্তু বর্তমানে অনেক মানুষ চায়ের বৈচিত্র্য খুজেন। শুধু ব্লাক-টি বা গ্রিন-টি নয়। সেইসব মানুষের কথা চিন্তা করে বাণিজ্যিক ইয়েলো-টি তৈরি করেছি এবং ভালো ফলাফল পাচ্ছি। মার্কেটে এর প্রচুর চাহিদা রয়েছে।’
ভারতের একটি চা কোম্পানি মনোহরী টি এস্টেট তারা হোয়াইট টি তৈরি করেছে। তারা সেই চা ৭৫ হাজার রুপীতে প্রতি কেজি বিক্রি করেছে। এর দাম পড়েছে বাংলাদেশী টাকায় ১ লক্ষ টাকা। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমি আমাদের বাগানে প্রথম গ্রিন-টি পরে ইয়েলো-টি তৈরি করলাম। শ্রীমঙ্গল যেহেতু পর্যটননগরী এবং চায়ের রাজধানী তাই সেখানে আমাদের বাগানের স্পেশাল চাগুলো বেশি চলছে বলে জানান তিনি।
বর্হিবিশ্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, চীনে ৪তলা-৫তলা বিশিষ্ট চা ফ্যাক্টরিগুলো রয়েছে। একেক তলায় একেক টি তৈরি হচ্ছে। কোনোটায় ব্ল্যাকটি, কোনোটায় গ্রিন-টি আবার কোনোটায় ইয়েলো-টি। সেখানে আপনার পছন্দ মতো ফ্রি চা খেয়ে আপনি বিমুগ্ধ হয়ে শেষে চা কিনে নিয়ে আসবেন।
চলতি বছর মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আমাদের নতুন প্লাকিং (পাতা চয়ন) শুরু হবে। তখন আরো ব্যাপক পরিমাণে ইয়েলো-টি ম্যানিফ্যাকচারিং (প্রক্রিয়াজাতকরণ) করবো। তখন আমরা আমেরিকাতেও আমাদের এই চা রপ্তানি করে দেশের সম্মান রাখাতে পারবো বলে বিশ্বাস করি।
ইয়েলো-টি’র তৈরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই চায়ের রঙটা খুব সুন্দর, হালকা হলুদ। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকদের দিয়ে আমি এই চায়ের পাতাগুলো তুলি। আমার বাংলোতে চা পাতাগুলো এনে একটা একটা করে কুঁড়ি নির্বাচন করি। আসলে এটা তৈরি প্রচুর কষ্ট এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। ধৈর্য্যের সাথে লেগে থাকতে হবে।
এই চায়ে লাভ প্রসঙ্গে এই টি-প্লান্টার বলেন, আমাদের ব্ল্যাকটির থেকে ইয়েলো-টি লাভজনক। ইয়েলো টিতে আমার ম্যানিফ্যাকচারিং কস্ট (প্রক্রিয়াজাতকরণ খরচ) প্রায় পাঁচ হাজার। অকশনে বিক্রি করছি আট-দশ হাজারের উপরে। গত চা মৌসুমে প্রায় সাত কেজি ইয়েলো টি বিক্রি করেছি। আগামীতে আমাদের টার্গেট হলো এক টন (১ হাজার) কেজি ইয়েলো-টি তৈরি করবো। এ চা এর জন্য আমি দুইটা সেকশন (চা বাগানের সুনির্দিষ্ট এলাকা) আলাদা করে রেখে দিয়েছি। ৪/৫ দিন পর পর প্লাকিং রাউন্ড (পাতা চয়ন চক্র) ঘুরে আসছে।
ইয়েলো-টি’র প্রধান উপকার হলো এটি ক্যান্সার প্রতিরোধক এবং হার্টের রোগ দূর করতে অগ্রণী ভূমিকা রাখে। হার্টের ব্লক থাকলে এটি নিয়মিত পান করণের ফলে সেই ব্লক ছুটে যাবে। অতিরিক্ত ব্ল্যাক-টি চা যেমন শরীরে কিছু ক্ষতি আছে এটার কোনো প্রকার ক্ষতি নেই বলে জানান বৃন্দাবন চা বাগানের সিনিয়র ব্যবস্থাপক নাসির উদ্দিন খান।